যুক্তরাষ্ট্রসহ ১০ দেশের রাষ্ট্রদূতকে ‘বহিষ্কার’ তুরস্কের

যুক্তরাষ্ট্র ও আরও নয়টি পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রদূতকে দেশ থেকে বহিষ্কার করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2021, 06:18 AM
Updated : 24 Oct 2021, 06:19 AM

বিচারাধীন ব্যবসায়ী ওসমান কাভালার মুক্তি দাবি করায় শনিবার তিনি নিজেই এ নির্দেশ দিয়েছেন বলে এরদোয়ান জানিয়েছেন।

এরদোয়ান যে ১০ দেশের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করতে বলেছেন, তার সাতটিই তুরস্কের নেটো জোটের মিত্র।

আঙ্কারা শেষ পর্যন্ত সত্যি সত্যি এ রাষ্ট্রদূতদের বহিষ্কার করলে, এরদোয়ানের ক্ষমতায় থাকা ১৯ বছরের মধ্যে পশ্চিমের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কের ফাটল এবারই সবচেয়ে বড় আকার ধারণ করতে পারে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

যাকে নিয়ে এতকিছু, সেই কাভালা বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনকে চাঁদা দিতেন। চার বছর ধরে তিনি কারাগারে। তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে দেশব্যাপী চলা বিক্ষোভে অর্থায়ন এবং ২০১৬ সালের ব্যর্থ অভুত্থানচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।

কাভালা তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

গত সপ্তাহে ‍তুরস্কে নিযুক্ত কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, নিউ জিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতরা এক যৌথ বিবৃতিতে কাভালার মামলায় দ্রুত ও ন্যায়সঙ্গত রায় এবং আটক এ ব্যবসায়ীর ‘যত দ্রুত সম্ভব মুক্তি’ দাবি করেন।

এর পরপরই তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠায়, তারা যৌথ বিবৃতিটিকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলেও অ্যাখ্যা দেয়।

“আমি আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ এবং কী করতে হবে তা বলে দিয়েছি। তা হল- এই ১০ রাষ্ট্রদূতকে এখনই তুরস্কে অগ্রহণযোগ্য (পারসনা নন গ্রাটা) ঘোষণা করতে হবে। দ্রুত কীভাবে তা করা যায়, করুন,” উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় শহর এসকেসেহিরে এক বক্তৃতায় এমনটাই জানান এরদোয়ান।

তিনি বলেন, “তাদের তুরস্ককে জানা ও বোঝা উচিত; যেদিন তারা তা পারবে না, সেদিন তাদের চলে যাওয়া উচিত।”

এরদোয়ানের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে তুরস্কে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের দূতাবাস এবং হোয়াইট হাউসের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, রাষ্ট্রদূতদের বহিষ্কার করা হচ্ছে এমন খবরের বিষয়ে তাদের মন্ত্রণালয় অবগত এবং তারা এ বিষয়ে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা চেয়েছেন।

নরওয়ে বলেছে, তাদের দূতাবাস এখনও এ বিষয়ে তুরস্কের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা পায়নি।

“আমাদের রাষ্ট্রদূত বহিষ্কারের পরোয়ানা জারির মতো এমন কিছুই করেননি। তুরস্ককে আমরা গণতন্ত্রের মানদণ্ড ও আইনের শাসন বজায় রাখার আহ্বান করেই যাবো, এসব বিষয়ে তুরস্ক ইউরোপিয়ান হিউম্যান রাইটস কনভেনশনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধও,” বলেছেন নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্রুডে মাসেইদে।

নরওয়ের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে তুরস্ক অবগত, বলেছেন তিনি।

রোববার নিউ জিল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না জানা পর্যন্ত তারা এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করবে না।

“নিউ জিল্যান্ড তুরস্কের সঙ্গে তার সম্পর্ককে মূল্য দেয়,” ই-মেইলে রয়টার্সকে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এমনটাই বলেছে।

কাভালাকে গত বছর ২০১৩-র বিক্ষোভ সংক্রান্ত অভিযোগগুলো থেকে খালাস দেওয়া হলেও চলতি বছর ওই রায় উল্টে যায় এবং আগের অভিযোগগুলোর সঙ্গে ২০১৬ সালের অভ্যুত্থানচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগগুলো জুড়ে দেওয়া হয়।

বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বলছে, কাভালার এই মামলাটিই এরদোয়ানের ভিন্নমত দমনের নজির।

আঙ্কারা যে ১০ দেশের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করতে যাচ্ছে, তার ছয়টিই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য। এর মধ্যে ফ্রান্স ও জার্মানিও আছে।

এক টুইটে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট ডেভিড স্যাসোলি বলেছেন, “১০ রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার হচ্ছে তুরস্ক সরকারের কর্তৃত্ববাদী প্রবণতার সঙ্কেত। আমরা ভয় পাবো না। ওসমান কাভালার মুক্তি চাই।”

ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভে কফুল বলেছেন তার মন্ত্রণালয় এখনও রাষ্ট্রদূতের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা পায়নি। বন্ধু দেশ ও মিত্রদের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

আঙ্কারার সম্ভাব্য পদক্ষেপ এবং তার পাল্টা প্রতিক্রিয়া নিয়ে ১০ দেশ একে অপরের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীও।

শুক্রবার কাভালা বলেছেন, তিনি আর বিচারপ্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন না, কেননা এরদোয়ানের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর ন্যায্য বিচার অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আগেরদিন বৃহস্পতিবার এরদোয়ান ১০ দেশের রাষ্ট্রদূতদের উদ্দেশ্যে ‘তারা নিজেদের দেশের দস্যু, খুনি ও সন্ত্রাসীদের ছেড়ে দেবে কিনা’ এ প্রশ্ন করেছিলেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে জানানো হয়েছে।

ইউরোপিয়ান মানবাধিকার আদালত দুই বছর আগেই কাভালাকে দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। চুপ করিয়ে দিতেই কাভালাকে আটকে রাখা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছিল তারা।

চলতি বছর তারা সালেহাতিন ডেমিরতাসের ক্ষেত্রেও একই আহ্বান জানিয়েছে। কুর্দিপন্থি পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির সাবেক প্রধান ডেমিরতাসকে পাঁচ বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছে।

ইউরোপিয়ান কনভেনশন অব হিউম্যান রাইটসের (ইসিএইচআর) সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দেখভালকারী কাউন্সিল অব ইউরোপ বলেছে, কাভালাকে ছেড়ে দেওয়া না হলে তারা তুরস্কের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবে।

২৬ নভেম্বর কাভালার মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।