বৃহস্পতিবার অনামা কয়েক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দুই ডজন সেনাসদস্য ‘অন্তত ১ বছর’ ধরে তাইওয়ানের স্থল ও সমুদ্র বাহিনীগুলোকে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে।
চীনকে ক্ষেপিয়ে তুলতে পারে, এমন ঝুঁকি সত্ত্বেও ওয়াশিংটন এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময়কালে চীনও তাইওয়ানের আশপাশে তাদের শক্তি প্রদর্শন বাড়িয়ে দিয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আল জাজিরা।
চীন তাইওয়ানকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন প্রদেশ হিসেবে দেখে, স্বশাসিত দ্বীপটি আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার চেষ্টা করলে সেখানে বল প্রয়োগের হুমকিও দিয়ে রেখেছে তারা।
তাইওয়ানের সেনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে অবগত দুই কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনীগুলোর কয়েকজন সদস্য পালা করে অস্থায়ীভিত্তিতে তাইওয়ানে গিয়ে এসব প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন।
কতদিন ধরে এই প্রশিক্ষণ চলে আসছে সে সম্বন্ধে কিছু বলতে রাজি হননি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দুই কর্মকর্তা; তবে তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রশিক্ষণ জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগ থেকেই চলে আসছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের (ডব্লিউএসজে) প্রতিবেদন নিয়ে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
রয়টার্সকে তারা বলেছে, “সামরিক যত আদান-প্রদান, সবই বার্ষিক পরিকল্পনা অনুসারে হচ্ছে।”
ডব্লিউএসজে’র প্রতিবেদনের তথ্য স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেনি পেন্টাগন। তাদের এক মুখপাত্র বলেছেন, তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা চাহিদা বিবেচনা করেই যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক সহায়তা দেয়।
গত বছরের নভেম্বরে তাইওয়ানের নেভাল কমান্ডকে উদ্ধৃত করে সেখানকার গণমাধ্যম যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা দ্বীপটির মেরিন ও বিশেষ বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতে এসেছে বলে জানিয়েছিল।
সেসময় যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানের কর্মকর্তারা সেসব প্রতিবেদনকে উড়িয়ে দিলেও বৃহস্পতিবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবর অনুযায়ী নভেম্বরের প্রতিবেদনগুলো সত্য ছিল বলেই মনে হচ্ছে।
গত বছর প্রকাশিত এক ভিডিওতেও মার্কিন সেনাদেরকে স্বশাসিত দ্বীপটিতে একটি মহড়ায় অংশ নিতে দেখা গেছে, যে মহড়ার নাম বলা হচ্ছে ‘ব্যালেন্স টেম্পার’। তাইওয়ানের গণমাধ্যম ওই ভিডিওটিও ফলাও করে প্রচার করেছিল।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনীর সদস্যদের কাছে তাইওয়ানের সেনাদের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা একটি পোস্টের দিকে ইঙ্গিত করে ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক জার্মান মার্শাল ফান্ডের এশিয়া কর্মসূচির পরিচালক বনি গ্লেজার বলেন, “বেইজিং যে এ প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টি আগে থেকেই জানে, সে সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছি না আমি।”
“জনসমক্ষে এই বিষয়টি (তাইওয়ানের সেনাদের প্রশিক্ষণ) নিয়ে এলে চীন প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হবে এবং তারা তাইওয়ানের ওপর চাপ বাড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে,” বলেছেন তিনি।
গত বছর থেকে চীনা সামরিক বাহিনী তাইওয়ানের আশপাশে তাদের সামরিক উপস্থিতি ক্রমাগতভাবে বাড়িয়ে চলেছে।
তাইওয়ান জানিয়েছে, তারা কেবল সোমবারই তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা জোনে রেকর্ড ৫৬টি চীনা বিমানের উপস্থিতি শনাক্ত করেছে।
স্বশাসিত এই দ্বীপটির চীন বিষয়ক সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ মেইনল্যান্ড অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল (এমএসি) বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে ‘স্থিতাবস্থা ও তাইওয়ান প্রণালীর স্থিতিশীলতা নষ্টের’ অভিযোগ এনেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস চীনের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডকে ‘অস্থিতিশীল’ ও ‘উসকানিমূলক’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন।
“আমরা বেইজিংয়ের প্রতি তাদের সামরিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ ও তাইওয়ানকে ভয়ভীতি দেখানো বন্ধে দৃঢ় আহ্বান জানাচ্ছি,” বলেছেন তিনি।