ভারতে কৃষক বিক্ষোভে হত্যা নিয়ে উত্তেজনা, বিঘ্ন পেরিয়ে লাখিমপুরে রাহুল-প্রিয়াঙ্কা

ভারতের উত্তর প্রদেশের লাখিমপুর খেরিতে কৃষক বিক্ষোভে গাড়ি চালিয়ে কৃষকসহ ৮ জনকে হত্যার ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। হত্যাকাণ্ডে দোষীদের শাস্তির দাবিতে কৃষকরা ফুঁসে ওঠার পাশাপাশি ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বিরোধী সব রাজনৈতিক দলগুলোও এই হত্যার বিরোধিতা করছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2021, 08:17 PM
Updated : 6 Oct 2021, 08:57 PM

হত্যার ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় কুমার মিশ্রের ছেলের বিরুদ্ধে। ঘটনার সময় অজয়ের ছেলে গাড়িতে ছিলেন বলে অভিযোগ কৃষকদের। অজয় মিশ্রকে বরখাস্ত করাসহ তার ছেলেকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে কৃষকরা।

নিহত কৃষক পরিবারের সদস্যদেরকে সমবেদনা জানাতে গেলে আটক করা হয় কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ও সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবকে। দুদিনেরও বেশি সময় পর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। রাহুল গান্ধীকেও ঘটনাস্থলে যেতে বাধা দেওয়া হয়।

ভারতীয় পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, বুধবার সকালেই লাখিমপুর খেরির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তবে অভিযোগ আছে, সেখানে যেতে তাকে বাধা দিয়েছে উত্তর প্রদেশ সরকার।

এ ঘটনার প্রতিবাদে বিমানবন্দরেই ধর্ণায় বসেছিলেন রাহুল। একের পর এক টুইটে তিনি সমালোচনা করতে থাকেন উত্তর প্রদেশের যোগী প্রশাসনকে, এ নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় দেশের রাজনৈতিক মহলে। এ পরিস্থিতিতে রাহুল গান্ধী দীর্ঘ অপেক্ষার পর বুধবার সন্ধ্যায় সীতাপুর পৌঁছান।

অবশেষে সব বাধা-বিঘ্ন পেরিয়ে সীতাপুর থেকে লাখিমপুর খেরিতে গিয়ে নিহত কৃষক পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে পেরেছেন রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।

উত্তর প্রদেশে সোমবার নতুন তিন কৃষি সংস্কার আইন নিয়ে কৃষকদের বিক্ষোভ চলার সময় মন্ত্রীর গাড়িবহরের একটি গাড়ি প্রতিবাদকারীদের মধ্যে ঢুকে গেলে সংঘর্ষে ৪ কৃষকসহ মোট আটজন নিহত হন। কৃষকরা বলছেন, গাড়িটি চালাচ্ছিলেন প্রতিমন্ত্রীর ছেলে আশিস মিশ্র।

তবে গাড়িচাপার ঘটনার সময় ছেলে আশিস মিশ্র ঘটনাস্থলে ছিলেন না বলে দাবি করেছেন অজয় কুমার মিশ্র। যে গাড়িটি বিক্ষোভকারীদের চাপা দিয়েছে সেটি তাাদেরই মালিকানাধীন বলে স্বীকার করলেও তবে ঘটনার সময় ছেলে আশিস গাড়িতে ছিলেন না বলেই জানিয়েছেন অজয়।

তবে অজয় কুমার মিশ্র অস্বীকার করলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে গাড়িচাপার ঘটনায় তার ছেলেরই জড়িত থাকার আলামত মিলছে। যদিও ভিডিও সত্যতা এখনও যাচাই করা যায়নি। 

কিন্তু রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এরই মধ্যে লাখিমপুরের ঘটনা নিয়ে বিজেপি- কে নিশানা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়া ঘটনার ভিডিও দেখে দেশবাসীকে এর জবাব দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে দাবি জানিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা।

ওদিকে, রাহুল গান্ধী বলেছেন, লাখিমপুরে পরিকল্পিত ভাবে কৃষকদের উপর হামলা চালানো হয়েছে। সাংবাদিক বৈঠক করে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করে রাহুল বলেছেন, মঙ্গলবার লখনউয়ে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। কিন্তু তার সময় হয়নি লখিমপুরে একবার যাওয়ার। এ থেকেই স্পষ্ট যে, পরিকল্পনা করে হামলা চালানো হয়েছে।

ওদিকে, বিজেপি রাহুলের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেছে, লখিমপুর নিয়ে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। বুধবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপি’র সর্বভারতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, “এটি বেপরোয়া মন্তব্য করার সময় নয়। কিন্তু তিনি সেটিই করছেন। দায়িত্বজ্ঞানহীনতা রাহুলের অপর নাম হয়ে গেছে।”

সম্বিত আরও বলেন, “লখিমপুর খেরিতে যা ঘটেছে তা দুঃখজনক। কৃষকদের সংগঠন এবং সরকার উভয়ই একটি নিরপেক্ষ তদন্তে রাজি হয়েছে। উভয় পক্ষই দেশকে সম্বোধন করে বলেছে একটি তদন্ত করা হবে।”

লখিমপুর নিয়ে টানাপড়েন শুরু হয়েছে কংগ্রেস ও পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলের মধ্যেও। আনন্দবাজার জানায়, সোমবার না ঢুকতে পারলেও, মঙ্গলবারের চেষ্টায় নিহত কৃষকদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে এসেছে তৃণমূল সাংসদদের প্রতিনিধি দল। এর পরই কংগ্রেস শিবির প্রশ্ন তুলে বলেছিল, “তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ লখিমপুরে ঢুকতে দিলেও প্রথমে কেন কংগ্রেস মহাসচিব প্রিয়ঙ্কাকে সে অনুমতি দেওয়া হয়নি?”

রাহুল বলেন, “বিজেপি সরকার শুধু কংগ্রেসকে লখিমপুর যেতে বাধা দিচ্ছে। সব রাজনৈতিক দলকে আটকানো হচ্ছে না।” পরে রাহুল-প্রিয়ঙ্কা দু’জনই লখিমপুরে যাওয়ার অনুমতি পান। তবে তাতেও থেমে থাকেনি কংগ্রেস-তৃণমূলের দ্বৈরথ।

রাহুলের মন্তব্যের পরই বুধবার পাল্টা টুইট করে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “রাহুলের মতো খণ্ডকালীন রাজনীতিবিদদের কাছে আমরা কোনও জ্ঞানের কথা শুনব না। কারণ, কংগ্রেস যেখানে নিজেদের গড়ে বিজেপি’কে হারাতে ব্যর্থ হচ্ছে, সেখানে তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি’কে হারাচ্ছে।”

এমন আক্রমণের পর তৃণমূলকে ফের পাল্টা জবাব দিয়েছেন কংগ্রেসের প্রবীণ রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। কংগ্রেস-তৃণমূলের সম্পর্কের টানাপড়েন আরও বাড়তে পারে বলেই মনে করছেন রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা।

অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্ট লাখিমপুর খেরিকাণ্ডে স্বতঃপ্রোণদিত হয়ে মামলা দায়ের করেছে। বৃহস্পতিবার প্রধানবিচারপতি এনভি রামানার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ মামলার শুনানি হবে বলে জানানো হয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে।