তালেবানের ভয়ে স্যোশাল মিডিয়া একাউন্ট মুছে ফেলছেন আফগানরা

আফগানিস্তানে তালেবান গতমাসে ক্ষমতা দখলের আগে টুইটার ও ফেইসবুকে অনেক আফগানই তালেবানের নীতির কড়া সমালোচনা করে নানা পোস্ট ও ছবি দিতেন। কিন্তু তালেবানের কাবুল দখলের পর আফগানরা এখন হামলার ভয়ে এসবকিছুই মুছে ফেলছেন। এমনকী অনেকে স্যোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টও বন্ধ করে দিয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2021, 02:48 PM
Updated : 28 Sept 2021, 02:48 PM

তালেবান সরকার সব আফগানের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে। কিন্তু দেশ ছেড়ে পালাতে থাকা অনেকেই বিবিসি-কে জানিয়েছেন, তারা তালেবানকে বিশ্বাস করেন না। এই আফগানরা আগে তালেবানের বিরুদ্ধে লড়েছেন কিংবা সাবেক আফগান সরকারের সদস্য ছিলেন।

তালেবান নেতারা এই আফগানদের ওপর প্রতিশোধ হামলা না চালানোর জন্য যোদ্ধাদের হুঁশিয়ার করলেও কাবুলে প্রায়ই বেসামরিক মানুষকে হত্যা ও তাদের ওপর নির্যাতন চালানোর খবর পাওয়া যাচ্ছে।

গত সপ্তাহে তালেবান সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব এক অডিও বার্তায় তালেবান যোদ্ধারা বেশ কিছু প্রতিশোধমূলক হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে- এমন খবর পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তবে এ নিয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি। সুনির্দিষ্ট কোনও ঘটনার কথাও উল্লেখ করেননি।

প্রতিশোধমূলক এইসব হামলার খবরে স্যোশাল মিডিয়া পোস্টের কারণে বিপদে পড়া কিংবা ফেইসবুক ব্যবহারকারী আফগানরা তালেবানের হামলার নিশানা হওয়ার আতঙ্কে আছেন।

কাবুল ও আফগানিস্তানের আরেক প্রধান শহরে দুই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। তাদে একজনের কয়েক লাখ অনুসারী আছে। তালেবান ক্ষমতায় আসার আগে তিনি প্রভাবশালীও ছিলেন। তালেবানের নীতি ও আচরণের ঘোর সমালোচক ছিলেন তিনি।

ওই ব্যক্তি-সহ আরেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী তার অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলেছেন। নিরাপত্তার কারণে কাবুলের এই স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর আসল নাম প্রকাশ করেনি বিবিসি। তার ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে।

ফিদা নামের এই স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী এক সাক্ষাৎকারে বিবিসি-কে জানান, তালেবান কাবুলের ক্ষমতা দখলের পর স্বজনেরা তাকে সমূহ বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। ফিদা এমনও শুনেছেন যে, ‘সন্ধান পাওয়া মাত্রই মাথায় গুলি করে মেরে ফেলা হচ্ছে’ এমন মানুষদের তালিকায় তার নাম আছে।

ফিদা জানান, তালেবান কাবুল দখলের পরদিনই গত ১৬ অগাস্ট তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলেছেন। ফিদা সবশেষ যে পোস্ট দিয়েছিলেন, তা ছিল তালেবান বিরোধী। তাতে লেখা ছিল, তালেবানের শাসনাধীন আফগানিস্তানে থাকার চেয়ে তিনি মৃত্যুই শ্রেয় বলে মনে করেন।

অন্য একটি শহরে তালেবান শাসনে বাস করা এমন আরেক স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী হারিসও (আসল নাম নয়) বিবিসি-কে বলেন, তালেবান কাবুল দখল করার দুই দিন আগে তিনি তার অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলেছেন। কারণ, তালেবানের আগমন মানে গণতন্ত্রের বিদায়।

হারিসও এখন আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যেতে চান। তালেবান নেতারা সব আফগানের জন্য ক্ষমা প্রদর্শনের ঘোষণা দেওয়ার পরও কেন আফগানিস্তান ছাড়তে চান, এমন প্রশ্নে তার জবাব, তিনি দেশে নিরাপদ বোধ করছেন না।