বিবিসি জানায়- লিয়াওনিং, জিলিন এবং হেইলংজিয়াং প্রদেশের মানুষ বিদ্যুৎ এর অভাবে হিটিং এর সমস্যা, লিফট বন্ধ হয়ে যাওয়া এমনকী ট্রাফিক লাইটও অকার্যকর হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে এই বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। চীন কয়লা-উৎপাদিত বিদ্যুতের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল।
চীনের এক বিদ্যুৎ কোম্পানি তাদের এক পোস্টে আগামী বছর বসন্ত পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলতে পারে এবং এই অবস্থা নতুন বাস্তবতায় পরিণত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল। পরে অবশ্য পোস্টটি মুছে দেওয়া হয়।
জ্বালানির এই ঘাটতিতে প্রথমেই ভোগান্তির শিকার হয়েছে চীনজুড়ে বিভিন্ন কল-কারখানা। সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে অনেক কারখানাতেই বিদ্যুতের অভাবের কারণে উৎপাদন হয় কমিয়ে দিতে হয়েছে, নয়ত বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
কিন্তু সপ্তাহান্তে কয়েকটি নগরীর বাসিন্দাদের বাড়িতে বাড়িতেও মাঝেমধ্যেই বিদ্যুৎ চলে যেতে দেখা গেছে। বিদ্যুতের এই সমস্যার কারণে চীনে টুইটারের মতো স্যোশাল মিডিয়া প্লাটফর্ম উইবোতে ‘উত্তর-পূর্ব বিদ্যুৎ বিভ্রাট’ এবং এ সংক্রান্ত আরও কিছু বাক্য ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লিয়াওনিং প্রদেশে একটি কারখানায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় ভেন্টিলেটর হঠাৎ অকার্যকর হয়ে পড়ে কার্বন মনোক্সাইডের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত ২৩ জন কর্মীকে হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছে।
আবার ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা ভাল না থাকা ঘরে হিটিং এর জন্য স্টোভ ব্যবহারের কারণেও কিছু মানুষকে হাসপাতালে নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাছাড়া, লিফট কাজ না করায় বহুতল ভবনগুলোতে বাস করা মানুষজনদেরকে বহু সিঁড়ি ভেঙে ওঠা-নামা করতে হচ্ছে।
চীনের গণমাধ্যমে ঘুরে বেড়ানো এক ভিডিওতে দেখা গেছে, ট্রাফিক লাইট এবং স্ট্রিটলাইটগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শেনিয়াং শহরে ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে ব্যস্ত মহাসড়কের এক পাশ দিয়ে চলাচল করছে কার।
বেইজিং নিউজ পত্রিকাকে সিটি কর্তপক্ষ বলেছে, তারা ব্যাপক বিদ্যুৎ ঘাটতিই প্রত্যক্ষ করছে। বিদ্যুৎ এর সমস্যায় ভোগান্তি পোহানো এলাকাগুলো থেকে মানুষজন স্যোশাল মিডিয়ায় বলেছে, পরিস্থিতি একেবারেই প্রতিবেশী দেশ উত্তর কোরিয়ায় বাস করার মতো।
জিলিন প্রদেশের সরকার বলেছে, বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে এখন ইনার মঙ্গোলিয়া থেকে আরও কয়লা আনার চেষ্টা চলছে। তবে চীনে এরই মধ্যে ১০ টি প্রদেশের কলকারখানায় বিদ্যুৎ ব্যবহারের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা আছে। এর মধ্যে আছে শ্যাংডন, গুয়াংডং এবং জিয়াংসু প্রদেশ।
২০৩০ সালের আগেই কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ শুন্যে নামানো এবং ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ দেশ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা আগেই জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। আর চলতি মাসেই তিনি আরও জানিয়ে দিয়েছেন যে, বিদেশে নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চীন আর অর্থায়ন করবে না।