দাড়ি ‘কামানোয়’ তালেবানের নিষেধাজ্ঞা

আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশের সব সেলুনে দাড়ি কামানো ও ছাঁটার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তালেবান।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2021, 07:16 AM
Updated : 27 Sept 2021, 07:16 AM

বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, শরিয়া আইন চালুর অংশ হিসেবে এ নিয়ম জারি করে তালেবান বলেছে, এই আদেশ কেউ না মানলে তাকে শাস্তি পেতে হবে।

রাজধানী কাবুলের কয়েকজন নাপিত জানিয়েছেন, তারাও একই ধরনের নির্দেশ পেয়েছেন।

বিবিসি লিখেছে, দুই দশক পর ক্ষমতায় ফিরে তালেবান ‘নমনীয়’ ভাবমূর্তি গড়ার চেষ্টা করলেও এমন নির্দেশনা তাদের আগের মতই কঠোর আইনে ফিরে যাওয়ার ইংগিত।

গত মাসে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই তালেবান তাদের বিরোধীদের কঠোর শাস্তি দিতে শুরু করে। হেরাত প্রদেশে গত শনিবার অপহরণের অভিযোগে চার ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার পর মৃতদেহ রাস্তায় ক্রেইন থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

এখন দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমান্দ প্রদেশের সেলুনগুলোতে চুল এবং দাড়ির ছাঁটে শরিয়া আইন মেনে চলতে ক্ষৌরকারদের হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন তালেবান কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে, এ নিয়ম নিয়ে ‘কারো অভিযোগ করার অধিকার নেই’।

কাবুলের একজন নাপিত বলেন, “তালেবান যোদ্ধারা এসে দাড়ি ছাঁটা বন্ধ করার নির্দেশ দিচ্ছেন। তাদের একজন আমাকে বলেছেন, আমাদের ধরতে তারা গোপনে লোক পাঠাতে পারে।

রাজধানীর অন্যতম বড় একটি সেলুনের ক্ষৌরকার জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি ফোন কল পেয়েছেন। তারা ‘আমেরিকান স্টাইল’ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। কারো দাড়ি ছাঁটা কিংবা কামাতে নিষেধ করেছে।

এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান নিয়ন্ত্রিত শাসনে কট্টর ইসলামী এই গোষ্ঠী কেতাদুরস্ত চুলের ছাঁট নিষিদ্ধ করে এবং পুরুষদের দাড়ি রাখার ওপর জোর দেয়।

মার্কিন অভিযানে ২০০১ সালে তালেবানের পতনের পর আফগানিস্তানে পরিষ্কার করে দাড়ি-গোঁফ কামানোর বিষয়টি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। অনেক আফগান পুরুষই চলতি ফ্যাশন অনুযায়ী দাড়ি ছাঁটতে শুরু করেন।

বেশ কয়েকজন নাপিতের বক্তব্য তুলে ধরে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবানের নতুন নির্দেশে তাদের জীবিকার পথ কঠিন হয়ে উঠছে।

তাদের একজন বলেন, “অনেক বছর ধরেই নিজেদের পছন্দ এবং হাল ফ্যাশন অনুযায়ী দাড়ি কামাতে তার সেলুনে যেতেন তরুণরা। কিন্তু এখন আর কোনোভাবেই সে ব্যবসা চালানো যাবে না।” 

আরেকজন বলেন, “ফ্যাশন সেলুন এবং ক্ষৌরকর্মের ব্যবসা নিষিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমি ১৫ বছর ধরে এই পেশায় আছি, আমার মনে হয় না আমি এটা চালিয়ে যেতে পারব।”

পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত শহরের একজন ক্ষৌরকার জানালেন, তিনি আদেশ জারি করে দেওয়া কোনো বিজ্ঞপ্তি না পেলেও দাড়ি ছাঁটা বন্ধ করে দিয়েছেন।

“খদ্দেররা তাদের দাড়ি কামাতে চায় না, কারণ রাস্তায় তারা তালেবান যোদ্ধাদের নজরে পড়তে চায় না। তারা সাধারণের সঙ্গে মিশে নিজেদেরজকে আর সবার মতেই দেখাতে চায়।”

চুল-দাড়ি ছাঁটার মজুরি কমিয়ে দেওয়ার পরও ব্যবসায় খরা যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কেউ আর এখন স্টাইল কিংবা চুলের ফ্যাশন নিয়ে মাথা ঘামায় না।”

আরও পড়ুন