জনসাধারণের চাপ থাকা সত্ত্বেও বছরের পর বছর এ পরিষদ ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল।
শুক্রবার কানাডিয়ান কনফারেন্স অব ক্যাথলিক বিশপ প্রথমবারের মতো আঠার ও উনিশ শতকে দেশটির আবাসিক স্কুলে যে কুখ্যাত ব্যবস্থা কার্যকর ছিল, তার জন্য ক্ষমা চেয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এ প্রসঙ্গে দেওয়া বিবৃতিতে বিশপদের পরিষদ নিপীড়নের ঘটনায় ‘গভীর অনুশোচনা’ প্রকাশ করার পাশাপাশি স্কুল পরিচালনায় সরাসরি জড়িত ছিল এমন সব ক্যাথলিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ‘দ্ব্যর্থহীনভাবে ক্ষমা প্রার্থনা’ করেছে।
কানাডিয়ান কনফারেন্স অব ক্যাথলিক বিশপ হচ্ছে কানাডার বিশপদের জাতীয় পরিষদ। এটি ক্যাথলিক চার্চ দ্বারা স্বীকৃত এবং ক্যাথলিক বিশপদের বৈশ্বিক পরিষদগুলোর নেটওয়ার্কের অংশ।
কানাডায় উনিশ ও বিশ শতকে আবাসিক স্কুলগুলোতে সরকারি অর্থায়নে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর পরিচালনায় আদিবাসী শিশুদের রাখা হতো।
১৮৩১ সাল থেকে শুরু করে এই সেদিন ১৯৯৬ সাল পর্যন্তও এ ব্যবস্থা চালু ছিল। এ ব্যবস্থায় আদিবাসী শিশুদের পরিবার থেকে জোরপূর্বক বিচ্ছিন্ন করে রাখা হত।
এই শিশুদের প্রায়ই তাদের নিজেদের ভাষায় কথা বলতে ও তাদের সংস্কৃতি চর্চা করতে দেওয়া হতো না, তাদের অনেকের সঙ্গেই দুর্ব্যবহার ও গালাগালি করা হতো। শিক্ষার্থীরা অপুষ্টিতে ভুগতো, তারা শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হতো।
কানাডার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন ২০১৫ সালে এসব কর্মকাণ্ডকে ‘সাংস্কৃতিক গণহত্যা’ অ্যাখ্যা দেয়।
যারা এসব বোর্ডিং থেকে শেষ পর্যন্ত বের হয়ে আসতে পেরেছে তারা রয়টার্সকে বলেছে, ক্ষুধা আর একাকিত্ব তাদের তাড়া করে ফিরত। স্কুলে নিয়মিত ভয় দেখানো ও বল প্রয়োগ করা হতো।
কানাডার কেন্দ্রীয় সরকার ওই বিদ্যালয় ব্যবস্থার জন্য ২০০৮ সালে ক্ষমা চেয়েছে। তবে বেশিরভাগ বিদ্যালয়ের পরিচালনার ভার যাদের দায়িত্বে ছিল, সেই রোমান ক্যাথলিক গির্জার পক্ষ থেকে এখনো দুঃখ প্রকাশ করা হয়নি।
“আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি, আমাদের ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের কিছু সদস্য ভয়াবহ শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক ও যৌন নিপীড়ন চালিয়েছিল।
“এর ঐতিহাসিক ও এখন পর্যন্ত থাকা মানসিক ক্ষত এবং এর কারণে আদিবাসী জনগণকে যে ভয়ানক দুর্ভোগ ও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে, যা আজও অব্যাহত, তাও গভীর দুঃখের সঙ্গে স্বীকার করে নিচ্ছি আমরা,” বলা হয়েছে কানাডার বিশপদের জাতীয় পরিষদের বিবৃতিতে।
কানাডার সরকার ২০০৮ সালে অতীতের ওই আবাসিক স্কুল ব্যবস্থার জন্য ক্ষমা চাইলেও বেশিরভাগ স্কুলের পরিচালনার ভার যাদের দায়িত্বে ছিল, সেই রোমান ক্যাথলিক গির্জা কিংবা পোপ আবাসিক স্কুলে গির্জার ভূমিকায় ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তবে অ্যাংলিকান, প্রেসবাইটেরিয়ান ও ইউনাইটেড চার্চেস ক্ষমা চেয়েছে।
চলতি বছর কানাডার বিভিন্ন এলাকায় পরিত্যক্ত আদিবাসী স্কুলে শত শত আদিবাসী শিশুর অচিহ্নিত কবর আবিষ্কারের পর ক্যাথলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ক্ষমা চাওয়ার চাপ বাড়তে থাকে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও পোপ ফ্রান্সিসকে কানাডায় এসে উনিশ ও বিশ শতকে আবাসিক স্কুলগুলোতে আদিবাসী শিশুদের ওপর করা নিপীড়নের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।