মের্কেলের উত্তরসূরি কে হবেন?

একের পর এক টেলিভিশন বিতর্কের পরও জনমত সমীক্ষায় কোনো দলের স্পষ্ট জয়ের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে না৷ ফলে জার্মানিতে নির্বাচনের পর জোট সরকারের রূপরেখাও স্পষ্ট হচ্ছে না৷

>> ডয়চে ভেলে বাংলাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2021, 06:47 PM
Updated : 26 Sept 2021, 05:02 AM

রোববার জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচনের আগে এই প্রথম সব প্রধান দলের নেতারা টেলিভিশন বিতর্কে মুখোমুখি হন৷

সংসদের নিম্ন কক্ষ বুন্ডেসটাগে উপস্থিত দলের নেতারা গত বৃহস্পতিবার বিভিন্ন প্রশ্নে নিজস্ব অবস্থান এবং নির্বাচনের পর পছন্দের জোট নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।

তিন প্রধান দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থীর তিনটি টেলিভিশন বিতর্কের পর রোববারের ভোটের আগে এটাই ছিল টেলিভিশনের পর্দায় ভোটারদের মন জয় করার শেষ সুযোগ৷

ফেডারেল জার্মানির ইতিহাসে এর আগে কখনও নির্বাচনের আগে প্রধান দলগুলোর প্রতিনিধিরা টেলিভিশনে নিজস্ব অবস্থান তুলে ধরার এত সুযোগ পাননি৷

দেড় দশকের বেশি সময় পর জার্মান চ্যান্সেলরের দায়িত্ব ছাড়ছেন অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। ছবি: রয়টার্স

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতাদের প্রচার-প্রচারণা সত্ত্বেও জার্মানিতে এবারের নির্বাচনের ফল সম্পর্কে কোনো নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে না৷ জনমত সমীক্ষায় সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি ও রক্ষণশীল ইউনিয়ন শিবিরের মধ্যে ফারাক অতি সামান্য৷

অতীতে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর এমন সমীক্ষার ইঙ্গিত বারবার ভুল প্রমাণিত হয়েছে৷ তাছাড়া এবার সমীক্ষার প্রশ্নের জবাবে অনেকেই জানিয়েছেন যে, তারা এখনো মনস্থির করে উঠতে পারেননি৷ রেকর্ড মাত্রা পোস্টাল ব্যালটও সব হিসাব গোলমাল করে দিতে পারে৷

বৃহস্পতিবারের টেলিভিশন বিতর্কে উপস্থিত শীর্ষ নেতারানিজেদের অবস্থানের মধ্যে পার্থক্য আরো জোরালোভাবে তুলে ধরে অবশিষ্ট ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করলেন৷

তাছাড়া রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নির্দিষ্ট জোট গড়লে তার পরিণাম কী হবে, সে বিষয়েও সতর্ক করে দিলেন৷ এই প্রথম কোনো বিতর্কে পররাষ্ট্র, প্রতিপক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তার মতো বিষয় যথেষ্ট গুরুত্ব পেল৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের চালিকা শক্তি হিসেবে পরিচিত দেশ জার্মানির ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়েও শীর্ষ নেতারা নিজেদের অবস্থান জানালেন৷

এমন প্রেক্ষাপটে রবিবারের নির্বাচনের ফলাফল ও তারপর সম্ভাব্য জোট সরকার গড়ার উদ্যোগ নিয়ে জল্পনাকল্পনা বাড়ছে৷ এসপিডি প্রার্থী ওলাফ শলৎস ও ইউনিয়ন শিবিরের প্রার্থী আরমিন লাশেটের হাতে সংসদের আসন সংখ্যার মধ্যে ফারাক যদি সত্যি খুব কম হয়, সে ক্ষেত্রে দুই পক্ষই সমান্তরালভাবে সরকার গড়ার লক্ষ্যে বাকিদের সঙ্গে আলোচনা চালাতে পারে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷

ভোটাররাই ঠিক করে দেবেন, কে হবেন চ্যান্সেলর। ছবি: ডয়চে ভেলে

১৯৭৬ সালে এমন পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় শক্তিশালী শিবির হিসেবে এসপিডি দলের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়েছিল৷ জনমত সমীক্ষার পূর্বাভাস সত্য প্রমাণিত হলে দুইয়ের বদলে তিনটি দলের জোট অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে৷ ১৯৪৯ সালে ফেডারেল জার্মান প্রজাতন্ত্র গঠনের পর তিন বছর এমন সরকার ক্ষমতায় ছিল৷ তার পর থেকে কখনো এমন তিন দলের সরকার গঠনের প্রয়োজন হয়নি৷

উদারপন্থি এফডিপি দলের নেতা ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার বৃহস্পতিবার আবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, যে জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী দুই প্রধান শিবিরই এবার ভোটারদের ৭০ শতাংশের কম সমর্থন পাচ্ছে৷ এমন দুর্বল অবস্থানে থেকে তাদের পক্ষে সরকার গড়ার উদ্যোগ নিতে হবে৷

উল্লেখ্য, সর্বশেষ এক সমীক্ষা অনুযায়ী এসপিডি দল ২৫ ও ইউনিয়ন শিবির ২৩ শতাংশ সমর্থন পাচ্ছে৷ ফলে আঙ্গেলা মের্কেলের বিদায়ের পর কে জার্মানির হাল ধরবেন, নির্বাচনের দুই-তিন দিন আগেও তা স্পষ্ট নয়৷

ভোট নিয়ে যা জানা দরকার

নেই আলাদা ভোটার তালিকা: জার্মানিতে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী সব মানুষকেই পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে নাম নিবন্ধন করতে হয়৷ তাই সেই তালিকা থেকে শুধু জার্মান নাগরিকদের বেছে নিয়ে ডাকযোগে ভোট দেবার আমন্ত্রণ পাঠানো হয়৷ জাতীয় পরিচয়পত্র ও সেই আমন্ত্রণপত্র নিয়ে নির্ধারিত ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে গেলেই ভোট দেওয়া যায়৷

ভোটগ্রহণের দিন রোববার: জার্মানিতে ভোটগ্রহণের জন্য সাধারণত রোববারের দিনটিকেই বেছে নেওয়া হয়, যাতে নাগরিকেরা ছুটির দিনে নির্বিঘ্নে ভোট দেবার সুযোগ পান৷ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ভোটগ্রহণ শেষ হলে গণনা শুরু হয়৷ শিল্পোন্নত দেশ হয়েও জার্মানি নিরাপত্তার খাতিরে এখনও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করে না৷ কাগজের ব্যালট গণনার পর দ্রুত ফলাফল জানতে অবশ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ বাড়ছে৷

ডাকযোগে ভোটের সুযোগ: ভোটার হিসেবে আমন্ত্রণপত্র পেলে সশরীরে ভোট না দিলেও চলবে৷ কোনো কারণ না দেখিয়ে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে আগেভাগেই ভোট দেওয়া সম্ভব৷ যে সব জার্মান নাগরিক বিদেশে থাকেন, তারাও জার্মানিতে তাদের সর্বশেষ বাসস্থানের পৌরসভার মাধ্যমে পোস্টাল ব্যালট সংগ্রহ করতে পারেন৷

নাগরিকদের দুটি করে ভোট: জার্মানির সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা দুটি করে ভোট দেবার সুযোগ পান৷ প্রথমটি নির্বাচনী কেন্দ্রে সরাসরি প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য, দ্বিতীয়টি পছন্দের কোনো দলের জন্য৷ প্রার্থী ও দল ভিন্ন হলেও চলবে৷ দ্বিতীয় তালিকায় দলীয় সমর্থনের অনুপাতের ভিত্তিতে সংসদে অর্ধেক আসনে প্রার্থী স্থির করা হয়৷

‘বোনাস’ ভোটের জটিল হিসেব: ভোটারদের দেওয়া প্রথম ভোটের ভিত্তিতে ২৯৯ জন স্থানীয় প্রার্থীর সরাসরি এবং দ্বিতীয় ভোটের ভিত্তিতে বাকি ২৯৯ জনের দলীয় মনোনয়ন অনুযায়ী সংসদে আসন পাওয়ার কথা৷ কিন্তু বাস্তবে সংসদে সদস্যসংখ্যা ৫৯৮ ছাপিয়ে যায়৷ কোনো দল যদি শতকরা হিসেবে দ্বিতীয় ভোটের তুলনায় বেশি মাত্রায় প্রথম ভোট পায়, তখন জটিল এক নিয়মের ভিত্তিতে সেই দল সংসদে কিছু বাড়তি আসন লাভ করে৷ তখন ‘ক্ষতিপূরণ’ হিসেবে বাকি দলগুলোকেও বেশি আসন দিতে হয়৷

সব দল সংসদে স্থান পায় না: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জার্মানির গণতন্ত্রের দুর্বলতা কাটাতে সংবিধান প্রণেতারা অপেক্ষাকৃত ছোট দলগুলোর ক্ষমতা সঙ্কুচিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ দ্বিতীয় ভোটের কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ না পেলে কোনো দল সংসদের নিম্ন কক্ষ বুন্ডেসটাগে স্থান পায় না৷ তবে নির্বাচনী কেন্দ্রে কমপক্ষে তিনটি আসন পেলেও সংসদীয় দলের মর্যাদা পাওয়া সম্ভব৷

প্রধান প্রার্থীরা কে কেমন

এসপিডি নেতা ওলাফ শলৎস৷

ওলাফ শলৎস

জার্মানির পরবর্তী চ্যান্সেলর দৌড়ে এগিয়ে আছেন সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দলের নেতা ওলাফ শলৎস৷ তিনি বর্তমান জোট সরকারে অর্থমন্ত্রী ও ডেপুটি চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷

শলৎসের অভিজ্ঞতা নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই৷ সংকট মোকাবিলায় সক্ষম হিসেবেও তিনি পরিচিত৷ তারপরও অনেকে মনে করছেন, কী যেন নেই৷

আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জার্মান নির্বাচনের এক বছরেরও বেশি সময় আগে গতবছর এসপিডির চ্যান্সেলর প্রার্থী হিসেবে শলৎসের মনোনয়ন সবাইকে বেশ অবাক করেছিল৷ কারণ তার মাত্র কয়েকমাস আগেই তিনি দলের প্রধানের পদে লড়ে হেরেছিলেন৷

তবে শলৎস নিজের প্রতি বিশ্বাস ধরে রেখে নিরলসভাবে সরকারে কাজ করে গেছেন৷ নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারেও তিনি অনেক ঝড় মোকাবিলা করেছেন৷

করোনা সংকটের সময় তিনি উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছেন৷ অর্থমন্ত্রী হিসেবে অর্থনীতি ও ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের সহায়তায় জরুরি তহবিল বিতরণের দায়িত্বে ছিলেন তিনি৷

২০০৩ সালে তৎকালীন এসপিডি সরকার ‘অ্যাজেন্ডা ২০১০’ নামে একটি শ্রমবাজার সংস্কারের প্রস্তাব এনেছিল৷ বেকার ভাতার নিয়ম আরো কঠোর করার কথা বলায় প্রস্তাবটি নিয়ে সেই সময় বেশ বিতর্ক হয়েছিল৷ সেসময় দলের মহাসচিব ছিলেন শলৎস৷ ফলে প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জোগাড়ের কাজটি ছিল তার৷ এ ব্যাপারে পরে শলৎস বলেছিলেন, ‘‘প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জোগাড়ের কাজটি ছিল আমার৷ আমাকে বেশ নির্দয় ভাব দেখাতে হয়েছিল৷’’

তিনি বলেছিলেন, সেই সময় তার প্রথম কাজ ছিল নিজের মতামতের কথা না ভেবে তখনকার চ্যান্সেলর ও দলের প্রধান গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার ও এসপিডির প্রতি ‘পুরো আনুগত্য’ দেখানো৷ ‘‘আমি নিজেকে নয় দলকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম৷’’

কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেলের খ্রিস্টীয় গণতন্ত্রী দল সিডিইউর কাছে চ্যান্সেলরশিপ হারিয়েছিল এসপিডি৷ ওলাফ শলৎসেরও এমন এক ছবি দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, যা থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লেগেছে৷

যে বিষয়ে যতটুকু বলা প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই কথা বলতে পছন্দ করেন শলৎস৷ এখন পর্যন্ত এসপিডির মহাসচিব পদ ছাড়াও রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও হামবুর্গের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি৷

এসপিডির রক্ষণশীল অংশের সদস্য বলে শলৎসকে বিবেচনা করা হয়৷ আবার এটাও ঠিক, তিনি বাম নাকি ডানপন্থি, তা বোঝা কঠিন। এসপিডির যুবদলের ডেপুটি লিডার হিসেবে তার অনেক বক্তব্য ক্যাপিটালিজমের কট্টর সমালোচনা বলে বিবেচিত হয়েছিল৷

১৯৭৫ সালে হাইস্কুলে পড়ার সময় এসপিডিতে যোগ দিয়েছিলেন শলৎস৷ ১৯৯৮ সালে জার্মান সংসদেনির্বাচিত হন তিনি৷ হামবুর্গে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন৷ ব্যবসায়িক আইন বিষয়ে তার পারদর্শিতা ছিল৷ সে কারণে অর্থনীতি ও ব্যবসা কীভাবে চলে সে সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা ভালো ছিল৷ সেই অভিজ্ঞতা সরকারি কাজে লাগিয়েছেন শলৎস৷

২০১৯ সালে এসপিডির প্রধান পদে লড়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তার চেয়ে রাজনীতিতে অভিজ্ঞদের কাছে হেরে গিয়েছিলেন শলৎস৷ তারপরও দমে না গিয়ে অর্থমন্ত্রী ও ডেপুটি চ্যান্সেলর হিসেবে নিবিড়ভাবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন৷

তার পুরস্কার হিসেবে চ্যান্সেলর পদে তাকে বেছে নিয়েছে এসপিডি৷ এক বছর আগে এই মনোনয়ন পাওয়ার পর তার জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে৷ এছাড়া তার কারণেই এসপিডি দলেরও জনপ্রিয়তা বাড়ছে৷

গ্রিন পার্টির নেতা আনালেনা বেয়ারবক৷

আনালেনা বেয়ারবক

গত এপ্রিলে সবুজ দলের (গ্রিন পার্টি) ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন চ্যান্সেলর প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়৷ তিনি আনালেনা বেয়ারবক৷ বর্তমানে দলটির দুজন শীর্ষ নেতার একজন তিনি৷

২০১৮ সালে বেয়ারবক সবুজ দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা নির্বাচিত হন৷ দলের আরেক শীর্ষ নেতা হলেন রোব্যার্ট হাবেক৷

হাবেক-বেয়ারবক জুটি দলের হাল ধরার পর ইউরোপীয় ও জার্মানির রাজ্য নির্বাচনগুলো সবুজ দল ভালো সফলতা দেখিয়েছে৷ এমনকি এপ্রিলের শেষ সপ্তাহের জরিপে সবুজ দলের অবস্থান জার্মানির অন্য সব দলের উপরে ছিল৷ যদিও মঙ্গলবার প্রকাশিত সবশেষ জরিপে সবুজ দলের অবস্থান তিন নম্বরে (১৭ শতাংশ)৷ সবার উপরে আছে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি (২৫ শতাংশ)৷ এর পরে আছে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সিডিইউ (২২ শতাংশ)৷

রোববার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনের পর যে সরকার গঠিত হবে সেখানে সবুজ দল থাকতে পারে৷

চ্যান্সেলর প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পর কিছু ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হন বেয়ারবক৷ যেমন তার আনুষ্ঠানিক জীবনবৃত্তান্তে ছোট কিছু ভুল থাকার অভিযোগ আনা হয়৷ ক্রিসমাস বোনাসের উপর কর প্রদানে দেরি করার অভিযোগও উঠেছিল৷ এছাড়া তার নতুন বইয়ের কিছু অংশ নকল করা এবং এক সাক্ষাৎকারে তিনি বর্ণবাদী শব্দ ব্যবহার করেছিলেন বলেও বেয়ারবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে৷ এই সব ব্যাপারেই তিনি দ্রুত ক্ষমা চেয়েছিলেন৷ কিন্তু তারপরও বেয়ারবকের রেটিং পড়তির দিকে চলে যায়৷

৪০ বছর বয়সি বেয়ারবক লোয়ার সাক্সোনি রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন৷ তবে পরিবারসহ প্রায় আট বছর ধরে তিনি ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্যের পটসডাম শহরে বাস করছেন৷ এবারের নির্বাচনে তিনি সেখান থেকেই প্রার্থী হয়েছেন৷ একই আসনে প্রার্থী হয়েছেন এসপিডি দলের চ্যান্সেলর প্রার্থী ওলাফ শলৎস৷

জার্মানির জাতীয় ট্র্যামপোলিন জিমন্যাস্টিকসে তৃতীয় হয়েছিলেন বেয়ারবক৷ ১৬ বছর বয়সে তিনি একবছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গিয়েছিলেন৷ এরপর জার্মানির হানোফারে আইন পড়ে লন্ডন স্কুল অফ ইকোনোমিকসে গিয়ে আন্তর্জাতিক আইন পড়েছেন৷

সিডিইউ নেতা আরমিন লাশেট৷

আরমিন লাশেট

মের্কেলের দল খ্রিস্টীয় গণতন্ত্রী সিডিইউ দল থেকে এবার চ্যান্সেলর প্রার্থী হয়েছেন আরমিন লাশেট৷ বর্তমানে তিনি জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল নর্থরাইন ভেস্টফালিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷

জার্মানির মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশের বাস এই রাজ্যে৷ ২০১৭ সাল থেকে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী লাশেট৷ তাই তিনি প্রায়ই বলেন, “এক কোটি ৮০ লাখ মানুষের রাজ্য পরিচালনাকারী মুখ্যমন্ত্রী চ্যান্সেলর হতে পারেন৷”

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি আটজন চ্যান্সেলর পেয়েছে৷ এর মধ্যে শুধু প্রথম চ্যান্সেলর কনরাড আডেনাউয়ার (১৯৪৯-১৯৬৩) এই রাজ্যের ছিলেন৷

সাবেক আইনজীবী ও সাংবাদিক লাশেটের স্থানীয়, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নির্বাচনে (১৯৯৪-১৯৯৮) জয়লাভ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ এমনকি ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত তিনি ইউরোপীয় সংসদেরও সদস্য ছিলেন৷ এই হিসেবে ম্যার্কেল যখন চ্যান্সেলর হয়েছিলেন তার চেয়েও বেশি রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা আছে লাশেটের৷

অনেকদিন ধরেই মের্কেলের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী হিসেবে পরিচিত লাশেট৷ ২০১৫ সালে মের্কেল যখন শরণার্থীদের জন্য জার্মানির দরজা খুলে দিয়েছিলেন তখন নিজ দলের অনেক নেতার সমর্থন না পেলেও লাশেট ম্যার্কেলের পক্ষে ছিলেন৷ তবে সাম্প্রতিক করোনা সংকটের সময় ম্যার্কেল থেকে তাকে একটু দূরে থাকতে দেখা গেছে৷ এরপরও চলতি বছরের জানুয়ারিতে লাশেট যখন সিডিইউ দলের প্রধান নির্বাচিত হন তখন তাকে ম্যার্কেলের নীতি চালিয়ে যাওয়ার মূল ব্যক্তি হিসেবে দেখা হয়েছে৷

১৯৬১ সালে বেলজিয়াম সীমান্তের কাছে জার্মানির আখেন শহরে জন্মগ্রহণ করেন লাশেট৷ তার দাদা-দাদি দুজনই বেলজিয়ামের৷ লাশেট ফরাসি ভাষায় পারদর্শী৷ ফ্রান্সের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও তার ভালো সখ্য রয়েছে৷

অবশ্য সবশেষ জরিপে লাশেটের সিডিইউ দল সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দলের চেয়ে পিছিয়ে আছে৷ গত জানুয়ারিতে লাশেট সিডিইউর দায়িত্ব নেয়ার পর প্রায় ১৫ বছর পর সিডিইউর জনসমর্থন কমে এসপিডির পেছনে চলে গেছে৷

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা লাশেটের জনসমর্থন কমিয়েছে৷ যেমন গত জুলাইতে নর্থরাইন ভেস্টফালিয়া এবং আরেক রাজ্যে বন্যায় ১৮০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারান৷ অনেকেই সবকিছু হারান৷ সেই সময় উপদ্রুত এলাকা সফরে গিয়ে জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন৷ এই সময় পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা লাশেটকে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঠাট্টা করতে দেখা যায়৷ এরপর সমালোচনা শুরু হলে লাশেট বেশ কয়েকবার ক্ষমা চান৷

এখানে শেষ নয়৷ বন্যার কারণ জলবায়ু পরিবর্তন কিনা, তা নিয়ে যখন আলোচনা চলছে তখন একদিন লাশেট বলে বসেন, “এরকম মাত্র একদিনের ঘটনার জন্য আমরা পুরো অ্যাপ্রোচে কোনো পরিবর্তন আনব না৷”

এই মন্তব্য করার কয়েকদিন পর তিনি তার বক্তব্য পরিবর্তন করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে লড়তে যা করা প্রয়োজন তা করা হবে৷

লাশেটের এমন আচরণে অনেকে মনে করছেন তিনি খুব দ্রুত তার নীতি ও সিদ্ধান্ত বদলান৷