দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ভোক্তাদের উচিত চীনা ফোন ফেলে দেওয়া, আর নতুন কোনও ফোন না কেনা।
বিবিসি জানায়, লিথুনিয়ার জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কেন্দ্র চীনা কোম্পানিগুলোর ৫জি মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে দেখে প্রতিবেদন দেওয়ার পর এই সতর্কবার্তা এল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের শীর্ষস্থানীয় স্মার্টফোন নির্মাতা শাওমির ফোনের ভেতরে সেন্সরশিপ উপকরণ রয়েছে। তাছাড়া, আরেক স্মার্টফোন নির্মাতা হুয়াওয়ের মডেলের ফোনেও নিরাপত্তা ত্রুটি রয়েছে।
হুয়াওয়ে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, কোনও ব্যবহারকারীর তথ্য বাইরে পাচার করা হয় না। আর শাওমি বলেছে, তারা যোগাযোগ সেন্সর করে না।
তবে লিথুয়ানিয়ার উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্গিরিস বলেছেন, “আমরা নতুন আর কোনও চীনা ফোন না কেনা এবং যারা কিনেছেন, তাদেরকে ফোনগুলো যত দ্রুত সম্ভব ফেলে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।”
লিথুয়ানিয়ার সাইবার নিরাপত্তা কেন্দ্র তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, শাওমি’র ফ্ল্যাগশিপ মি ১০টি ৫জি ফোনের ভেতরে এমন ধরনের সফটওয়ার’ আছে যেটি ‘তিব্বত মুক্ত কর’, ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতা দীর্ঘজীবী হোক’, গণতন্ত্রের আন্দোলন’ এর মতো স্লোগানগুলো শনাক্ত করে তা সেন্সর করতে পারে।
শাওমি ফোনের ইন্টারনেট ব্রাউজার এবং অ্যাপ সিস্টেমে ওই ধরনের ৪৪৯’র ও বেশি উক্তি বা স্লোগান শনাক্ত করা সম্ভব বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।
এতে আরও বলা হয়, ইউরোপীয় বাজারের জন্য এই মডেলের চীনা ফোনের সেন্সরশিপ সক্ষমতা বন্ধ করে রাখা হলেও সেটি যে কোনও সময় দূর থেকেই চালু করে দেওয়া সম্ভব।
তবে শাওমি’র এক মুখপাত্র বিবিসি’কে বলেছেন, “শাওমি’র ডিভাইস দিয়ে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর কোনও কথপোকথন সেন্সর করা হয় না। শাওমি কখনওই তাদের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত আচরণ ব্লক করেনি বা সীমিত করে দেয়নি, আর তা কখনও করবেও না। এর মধ্যে আছে, অনুসন্ধান, কল করা, ওয়েব ব্রাউজিং বা থার্ড-পার্টি যোগাযোগ সফটওয়ার ব্যবহার করা।”
কিন্তু চীনা ফোন নিয়ে লিথুনিয়ার পরীক্ষায় এও দেখা গেছে যে, শাওমি ডিভাইস দিয়ে ব্যবহারকারীর ডেটা সংগ্রহ করে এনক্রিপ্টেড অবস্থায় সিঙ্গাপুরের একটি সার্ভারে পাঠানো হচ্ছে।
লিথুনিয়ার সাইবার নিরাপত্তা কেন্দ্র বলছে, “কেবল লিথুয়ানিয়ার জন্যই নয়, বরং শাওমি মডেলের ফোন ব্যবহার করা সব দেশের জন্যই চিন্তার বিষয়।”
হুয়াওয়ে পি৪০
লিথুয়ানিয়ার সাইবার নিরাপত্তা কেন্দ্রের প্রতিবেদনে হুয়াওয়ের পি৪০ ৫জি ফোনেরও একটি নিরাপত্তা ত্রুটির কথা তুলে ধরা হয়েছে। বলা হচ্ছে, এ ত্রুটির কারণে সাইবার-নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন ব্যবহারকারীরা।
দেশটির সাইবার নিরাপত্তা কেন্দ্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, হুয়াওয়ের অ্যাপ স্টোর ‘অ্যাপগ্যালারি’ থেকে ব্যবহারকারীদের থার্ড-পার্টি ই-স্টোরে পাঠানো হয়। এই ই-স্টোরের কিছু অ্যাপ অ্যান্টিভাইরাস দিয়ে খতিয়ে দেখা গেছে সেগুলো ক্ষতিকারক। অ্যাপগুলোতে ভাইরাস পাওয়া গেছে।
তবে হুয়াওয়ের এক মুখপাত্র বিবিসি’কে বলেছেন, তারা যেসব দেশে কাজ করছেন, সেখানকার আইন ও বিধিমালা মেনেই চলছেন এবং সাইবার-নিরাপত্তা ও গোপনীয়তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছেন।
তিনি বলেন, হুয়াওয়ে ডিভাইস থেকে কখনওই বাইরে ডেটা পাঠানো হয় না। অ্যাপগ্যালারি অন্যান্য অ্যাপ স্টোরের মতো কেবল গ্রাহকদের থার্ড-পার্টি অ্যাপ সন্ধান ও ইন্সটলের জন্য প্রয়োজনীয় উপাত্ত সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করে থাকে।
তাছাড়া, ব্যবহারকারীরা যাতে নিরাপদ অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারে সেজন্য নিরাপত্তা যাচাই করার কাজও করে হুয়াওয়ে। লিথুয়ানিয়ার গবেষকরা ওয়ানপ্লাস-এর একটি ৫জি ফোনও পরীক্ষা করেছিলেন। তবে তাতে কোনও সমস্যা পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি চীন এবং লিথুনিয়ার সম্পর্কের অবনতি হতে থাকার মধ্যে চীনা ফোন নিয়ে সাইবার নিরাপত্তায় ঝুঁকি সংক্রান্ত প্রতিবেদন এল।
লিথুয়ানিয়ায় কিছুদিন আগেই দূতাবাস খোলার ঘোষণা দিয়েছে তাইওয়ান। লিথুয়ানিয়ায় তাইওয়ানের এই মিশনের নামকরণ করা হয়, ‘তাইওয়ান রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিস’। এতে ক্ষুব্ধ হয় চীন।
গত মাসে বেইজিংয়ে নিযুক্ত লিথুয়ানিয়ার রাষ্ট্রদূতকে সরিয়ে নিতে বলে চীন। একইসঙ্গে লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াস থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতও প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা জানায় বেইজিং সরকার।
চীন তাইওয়ানকে নিজদের দ্বীপ বলে দাবি করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। একারণে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে তাইওয়ানের মিশনগুলোতে সরাসরি এই দ্বীপদেশটির নাম না নিয়ে এর রাজধানী ‘তাইপে’ শহরের নাম ব্যবহার করা হয়।