জাতিসংঘে রাষ্ট্রদূত দিল তালেবান

গত মাসে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া তালেবান নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের চলমান সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার অনুমতি চেয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2021, 04:37 AM
Updated : 22 Sept 2021, 08:27 AM

কট্টরপন্থি এ গোষ্ঠী কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থিত তাদের রাজনৈতিক কার্যালয়ের মুখপাত্র সুহাইল শাহীনকে জাতিসংঘে আফগানিস্তানের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়নও দিয়েছে।

এ সংক্রান্ত একটি চিঠি মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স দেখেছে বলে তাদের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

সোমবার তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের কাছে লেখা চিঠিতে সাধারণ পরিষদে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানসহ উচ্চপদস্থদের নিয়ে হওয়া বার্ষিক বৈঠকে যোগ ও বক্তৃতা দিতে সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করেন। আগামী সোমবার এই বৈঠক শেষ হতে যাচ্ছে।

গুতেরেসের মুখপাত্র ফারহান হক তালেবান নেতা মুত্তাকির লেখা চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তালেবান প্রতিনিধিদের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে চাওয়া এবং জাতিসংঘে নতুন রাষ্ট্রদূত দেওয়া বৈশ্বিক এ সংস্থায় এখন আফগানিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করা গুলাম ইসাকজাইয়ের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। ইসাকজাই আফগানিস্তানের যে সরকারের প্রতিনিধি ছিলেন, তা গত মাসে তালেবানের হাতে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে।

হক জানিয়েছেন, জাতিসংঘে আফগানিস্তানের আসন দাবি করে করা তালেবানের আবেদন ৯ সদস্যের ক্রেডেনসিয়াল কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে।

জাতিসংঘের এই ক্রেডেনসিয়াল কমিটির সোমবারের আগে বসার সম্ভাবনা কম, যে কারণে তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবার বিশ্ব নেতাদের সামনে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে।

জাতিসংঘ যদি তালেবান রাষ্ট্রদূতকে মেনে নেয়, তাহলেও তা কট্টরপন্থি ইসলামী গোষ্ঠীটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি নগদ অর্থের সংকটে থাকা আফগান অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তহবিল ছাড়ের ক্ষেত্রে সহায়কও হতে পারে।

গুতেরেস বলছেন, তালেবানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির আকাঙ্ক্ষাই এখন অন্য দেশগুলোর হাতে থাকা একমাত্র সুযোগ; যা কাজে লাগিয়ে আফগানিস্তানে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন ও আফগান নাগরিক বিশেষ করে নারীদের অধিকারের প্রতি যেন সম্মান দেখানো হয় তা নিশ্চিতে তালেবানের ওপর চাপ সৃষ্টি করা যায়।

জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে লেখা চিঠিতে তালেবান বলেছে, ইসাকজাইয়ের মিশনের ইতি ঘটেছে বলে বিবেচনা করা যায়, কেননা তিনি এখন আর আফগানিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন না।

তবে ক্রেডেনসিয়াল কমিটি এ বিষয়ক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগ পর্যন্ত ইসাকজাই-ই আফগানিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে বহাল থাকবেন। সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনের সূচি অনুযায়ী ২৭ ফেব্রুয়ারি তার ভাষণ দেওয়ারও কথা রয়েছে। তবে তালেবানের পাঠানো চিঠির প্রেক্ষিতে কোনো দেশ ইসাকজাইয়ের ব্যাপারে আপত্তি তুলবে কিনা, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

জাতিসংঘের ক্রেডেনসিয়াল কমিটি সাধারণত প্রতি বছরের অক্টোবর বা নভেম্বরে বসে জাতিসংঘের সব সদস্যের ক্রেডেনসিয়ালগুলো মূল্যায়ন করে; এরপর তারা এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সাধারণ পরিষদে অনুমোদনের জন্য পাঠায়।

ক্রেডেনসিয়াল কমিটিতে এখন চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও আছে বাহামাস, ভুটান, চিলি, নামিবিয়া, সিয়েরা লিওন ও সুইডেন।

আগের তালেবান শাসনের সময়, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘে আফগানিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তালেবানের হাতে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রতিনিধিই। সেসময় ক্রেডেনসিয়াল কমিটি জাতিসংঘে প্রতিনিধিত্ব করতে চাওয়া তালেবানের অনুরোধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছিল।