পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা উস্কে দিতে পারে অকাস: উত্তর কোরিয়া

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার নতুন নিরাপত্তা জোট অকাসের নিন্দা জানিয়ে উত্তর কোরিয়া বলেছে, এই চুক্তি ‘পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা’ উস্কে দিতে পারে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2021, 12:36 PM
Updated : 20 Sept 2021, 12:36 PM

উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, “এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে কৌশলগত ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে অকাস চুক্তি।”

অকাস এর আওতায় প্রথমবারের মতো পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরিতে অস্ট্রেলিয়াকে প্রযুক্তি সরবরাহ করার কথা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের।

ধারণা করা হচ্ছে, দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলার চেষ্টায় অকাস গঠন করা হয়েছে।

গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ত্রিপক্ষীয় এ জোটের ঘোষণা দেন।

এর আওতায় রয়েছে ক্রুজ মিসাইল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অন্যান্য প্রযুক্তি সরবরাহের বিষয়টিও। বিবিসি জানায়, এ চুক্তি নিয়ে উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, “এইসব কর্মকাণ্ড খুবই অনাকাঙ্খিত ও বিপজ্জনক।“

“এর ফলে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কৌশলগত ভারসাম্য নষ্ট হবে এবং পারমাণবিক অস্ত্রের চেইন প্রতিযোগিতাও শুরু হয়ে যেতে পারে।”

উত্তর কোরিয়া গত সপ্তাহে দীর্ঘ পাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বড় পরীক্ষা চালিয়েছে। অকাস নিয়ে উত্তর কোরিয়া নিন্দা জানানোর আগে চীনও এ জোটের কড়া সমালোচনা করে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ানের কথায়, “তিন দেশের জোট অকাস আঞ্চলিক শান্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে… এতে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে।”

চীনের সঙ্গেই সুর মিলিয়েছে উত্তর কোরিয়া। তারা এও বলেছে, “চীনের মতো প্রতিবেশী দেশ এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাবে, সেটাই তো স্বাভাবিক।”

অকাস চুক্তির আওতায় ৬০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র কোনও দেশকে সাবমেরিন প্রযুক্তি দিতে চলেছে। এর আগে একবারই তারা তা করেছিল। তখন যুক্তরাজ্যকে এই প্রযুক্তি দিয়েছিল তারা।

এখন অস্ট্রেলিয়া সে প্রযুক্তি পেলে তারা পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরিতে সক্ষম হবে। এই ধরনের সাবমেরিন প্রচলিত পদ্ধতির যন্ত্রপাতি দিয়ে শনাক্ত করা কঠিন। তাছাড়া, এসব সাবমেরিন পানির নিচে কয়েক মাস পর্যন্ত ডুবে থাকতে পারে।

এই ধরনের সাবমেরিন থেকে বহু দূরে ক্ষেপণাস্ত্রও ছোড়া যায়। যদিও অস্ট্রেলিয়া বলছে, এই সাবমেরিনে পারমাণবিক অস্ত্র বহনের অভিপ্রায় তাদের নেই।

অকাস গঠনের চুক্তিতে তিন দেশের নেতারা সরাসরি চীনের নাম না নিলেও বারবারই আঞ্চলিক হুমকি নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, “এই হুমকি গুরুতর হয়ে উঠছে।”

তাই অকাস চুক্তিকে চীনের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার নতুন প্রকাশ্য সামরিক পদক্ষেপ হিসাবেই দেখছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। এমন এক সময় চুক্তিটি কার্যকর হচ্ছে যখন দক্ষিণ চীন সাগর থেকে উত্তরে তাইওয়ান পর্যন্ত বিস্তৃত জলসীমায় নিয়মিত টহল শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়া।

এই অকাস নিয়ে ফ্রান্সের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার বিষয়টিও উত্তর কোরিয়া তাদের বক্তব্যে উল্লেখ করেছে। অকাসের কারণে ফ্রান্সের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার প্রায় হাজার কোটি ডলারের সাবমেরিন নির্মাণ চুক্তি বাতিল হয়ে গেছে।

এতে ক্ষুব্ধ ফ্রান্স “এ (অকাস) পদক্ষেপকে তাদের পিঠে ছুরিকাঘাত” বলে বর্ণনা করেছিল। উত্তর কোরিয়া সে কথাটিই উল্লেখ করে বলেছে, নতুন এই জোট মিত্রদেশগুলোর মধ্যে “মারাত্মক সংকট তৈরি করেছে।”