বারাদারের সঙ্গে সেদিন কী ঘটেছিল আফগান প্রাসাদে?

যিনি আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের ‘মধ্যমপন্থি’ নেতা হবেন বলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা আশা করেছিল, কাবুলে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে নাটকীয় গোলাগুলির ঘটনার পর তাকে ‘কোনঠাসা’ করা হয়েছে বলে খবর এসেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Sept 2021, 06:55 PM
Updated : 19 Sept 2021, 03:39 AM

সেপ্টেম্বরের শুরুতে মন্ত্রিপরিষদ গঠন নিয়ে আলোচনার সময় তালেবানের মধ্যে ওই গণ্ডগোলের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন, এমন কয়েকজনের বরাতে ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে। তবে তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববাসীর কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য করতে তালেবান নন এমন নেতা ও সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিসহ ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ একটি মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সেদিনের আলোচনায় জোর দিচ্ছিলেন বারাদার।

আলোচনার এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সংগঠন হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা খলিলুর রহমান হাক্কানি তার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান এবং তালেবান নেতা বারাদারকে ঘুষি মারতে শুরু করেন।  

“তাদের দেহরক্ষীরাও এই সংঘর্ষে যোগ দিয়ে পরস্পরের প্রতি গুলি ছুড়তে শুরু করলে কয়েকজন মারা যান এবং বেশ কয়েকজন আহ্ত হন। বারাদার আহ্ত না হলেও রাজধানী ছাড়েন। তালেবানের ঘাঁটি কান্দাহারে সর্বোচ্চ নেতা ও আধ্যাত্মিক গুরু হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার সঙ্গে দেখা করতে যান।”

২০১৬ সালের দিকে হাক্কানি নেটওয়ার্ক তালেবানের সঙ্গে একীভূত হয়। ৭ সেপ্টেম্বর তালেবান মন্ত্রিসভার যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে তাদের বাইরের কেউ নেই। যারা আছেন, তাদের ৯০ শতাংশই পশতুন নৃগোষ্ঠীর।

হাক্কানি পরিবারের সদস্যরা চারটি মন্ত্রণালয় পেয়েছেন। এফবিআইয়ের তালিকার শীর্ষ সন্ত্রাসী সিরাজুদ্দিন হাক্কানি হয়েছেন তালেবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনার নেতা তালেবানের সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার সরকারপ্রধান হবেন বলে ভাবা হলেও ‘পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক না থাকায়’ তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়।

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানের মন্ত্রিসভা গঠনের আলোচনার সময় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান কাবুলে অবস্থান করছিলেন। তিনি বারাদারের চেয়ে হাক্কানিদের প্রাধান্য দেন।

শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগে মুক্তি পাওয়ার আগে আগে আট বছর পাকিস্তানে কারাবন্দি ছিলেন বারাদার।

তার বদলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বল্প পরিচিত মোল্লা মোহাম্মদ হাসানকে বেছে নেওয়ার কারণ হল, ইসলামাবাদের সঙ্গে তার খাতির ভালো এবং হাক্কানি অংশের জন্য তিনি হুমকি নন।

ব্লুমবার্গ লিখেছে, এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর গণমাধ্যম শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও জবাব মেলেনি।

গত এক সপ্তাহে তালেবান নেতারা সংঘর্ষের খবর অস্বীকার করেছেন। বৃহস্পতিবার বারাদার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে হাজির হয়ে বলেন, তার আহত বা নিহত হওয়ার খবর সঠিক নয়।

তবে ১২ সেপ্টেম্বর কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর সময় এবং এ সপ্তাহে মন্ত্রিপরিষদের প্রথম বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন না।

উপসাগরীয় দেশ কাতার বারাদারকে জায়গা দিয়েছিল এবং আমেরিকার দীর্ঘতম যুদ্ধ অবসানে তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল পম্পেওর সঙ্গে আলোচনায় সহায়তা করেছিল।

কাতারের প্রতিনিধি দলের অভ্যর্থনার সময় হাক্কানিরাসহ মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা থাকলেও বারাদারের অনুপস্থিতি নিয়ে কানাঘুষা হয়।

তবে বারাদার টেলিভিশনে বলেন, কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের বিষয়টি তিনি জানতেন না। ওই সময় তিনি নিজেও সফরে থাকায় কাবুলে ফিরতে পারেননি।

ব্লুমবার্গের প্রশ্নের জবাবে তালেবানের মুখপাত্র বেলাল কারিমি টেলিফোনে বলেন, বারাদারকে ‘কোনঠাসা করা হয়নি এবং আমরা আশা করছি তিনি শিগগির ফিরবেন’।

“ইসলামী আমিরাতের নেতাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। অফিস বা সরকারি পদের জন্য তারা কামড়া-কামড়ি করেন না।”

হাক্কানি ও তালেবানদের মধ্যে সম্পর্ক সবসময় অস্বস্তিকর। তবু গ্রুপটির অন্যতম নেতা আনাস হাক্কানি টুইটারে এসে সংঘর্ষের খবর অস্বীকার করেছেন।

তালেবান আনুষ্ঠানিকভাবে অস্বীকার করলেও তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব পশ্চিমা সরকারগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। নারীর অধিকারকে শ্রদ্ধা জানানোসহ অধিকতর মধ্যমপন্থি নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য তালেবানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিল এসব দেশ।