আফগানিস্তানে নারী মন্ত্রণালয়ের জায়গায় তালেবানের নীতি পুলিশ

গত মাসে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া তালেবান সম্ভবত আফগানিস্তানের নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় বন্ধ করে দিয়ে সে জায়গায় এমন একটি মন্ত্রণালয় চালু করছে, যা একসময় কঠোর ধর্মীয় নিয়মকানুন মানতে বাধ্য করত।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Sept 2021, 10:20 AM
Updated : 18 Sept 2021, 10:20 AM

শুক্রবার আফগানিস্তানের নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রণালয়ের প্রতীক সরিয়ে নেওয়া হয় এবং তার বদলে নৈতিকতা বিষয়ক মন্ত্রণালরে প্রতীক বসানো হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী কর্মীদেরকে তালেবানের প্রতি তাদেরকে কাজে ফিরতে অনুমতি দিতে অনুরোধ করতে দেখা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানে তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরের ২০ বছরে অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নারীরা তাদের জন্য বেশকিছু অধিকার আদায় করে নিতে সক্ষম হলেও এবারের পুরুষসর্বস্ব অন্তর্বর্তী সরকার সেই অগ্রগতিকে ধুলিস্মাৎ করে দেবে বলে অনেকের শঙ্কা।

ক্ষমতা নেওয়ার আগে তালেবান নেতারা বলেছিলেন, আফগানিস্তান যেমন ২০ বছরে অনেক বদলেছে, তারাও বদলেছেন। কিন্তু ক্ষমতা নেওয়ার পর তাদের নীতি ও কর্মকাণ্ডে ওই কথা ও প্রতিশ্রুতির মিল পাওয়া যাচ্ছে না, বলেছেন বিবিসির প্রধান আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা লিস ডুসেট।

তালেবানের আগের শাসনামলে থাকা নৈতিকতা মন্ত্রণালয় ভিন্নমত দমন, নাগরিক বিশেষ করে মেয়ে ও নারীদের ওপর দেওয়া বিধিনিষেধ কার্যকরে সহিংস উপায় অবলম্বন এবং লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ও অবিশ্বাস ঢুকিয়ে দেওয়ার কাজ করত বলে সমালোচনা ছিল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর। 

অন্যরা সমালোচনা করলেও তালেবান সদস্যদের কাছে এই নৈতিকতা মন্ত্রণালয় ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’।

“আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলামের সেবা করা, এ কারণেই নৈতিকতা মন্ত্রণালয় থাকা জরুরি,” নিউ্ ইয়র্ক পোস্টকে এমনটাই বলেছেন তালেবান সদস্য মোহাম্মদ ইউসুফ।

কাবুলে নারী মন্ত্রণালয়ের প্রতীকের জায়গায় যে নতুন প্রতীকটি লেগেছে সেখানে মন্ত্রণালয়ের নাম লেখা রয়েছে- নৈতিকতার বিস্তার ও অন্যায় প্রতিরোধ মন্ত্রণালয়।

তালেবান প্রথমবার ক্ষমতায় আসার আগেই আফগানিস্তানে এ মন্ত্রণালয় ছিল। কিন্তু ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে এর কর্মকাণ্ড বিস্তৃত হয়।

সেসময় মন্ত্রণালয়টি তালেবানের চাপিয়ে দেওয়া শরিয়া আইন কার্যকরে রাস্তায় রাস্তায় নৈতিকতা পুলিশ মোতায়েন করত।

যেসব নারীদের পোশাক তাদের দৃষ্টিতে ‘উগ্র’ বলে মনে হত কিংবা যে নারীরা পুরুষ আত্মীয় ছাড়া বাইরে বের হতেন তাদের মারধর করত এই নৈতিকতা পুলিশ। মেয়েদের প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর পর পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়া হত। এবার ক্ষমতায় এসেও অনেক এলাকায় তালেবান এসবই করছে বলে খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

তালেবানের আগের শাসনামলে নাচ-গান নিষিদ্ধ ছিল, যেত না দাবা খেলা বা ঘুড়ি উড়ানো। পুরুষদের দাড়ি রাখতে হত, পশ্চিমা ধাঁচের চুল কাটায় ছিল আপত্তি।

কেউ এসব নিয়মের ব্যত্যয় ঘটালেই তার জন্য ছিল কঠোর সাজা। চাবুক মারা, বেত্রাঘাত, অঙ্গচ্ছেদ এবং জনসমক্ষে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ছিল স্বাভাবিক ঘটনা।      

তবে এবার অতীতের মত আইনকানুন মানতে বাধ্য করা হবে না বলে ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন কাবুলের দুই তালেবান নেতা।

আইন কার্যকরে এবার পুলিশ বা সেনা মোতায়েন করা হবে না, বলেছেন তারা।

২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বাহিনীর অভিযানে তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নৈতিকতা মন্ত্রণালয় বিলুপ্ত করা হলেও রক্ষণশীলদের চাপে পড়ে ২০০৬ সালে তখনকার আফগান প্রেসিডেনট হামিদ কারজাই কাছাকাছি ধরনের কিন্তু কম ক্ষমতাশীল একটি দপ্তর চালু করেছিলেন।