কোন কোন দেশ শিশুদের কোভিড টিকা দিচ্ছে, কীভাবে দিচ্ছে?

স্কুল কলেজ খুলে যাওয়ায় বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মত বাংলাদেশেও শিশুদের করোনাভাইরাসের টিকার আওতায় আনার বিষয়টি আলোচনায় আসছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2021, 03:37 AM
Updated : 15 Sept 2021, 03:37 AM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে তার আগ্রহের কথা বলেছেন। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করার কথা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনও বিষয়টি অনুমোদন না করলেও অল্প কিছু দেশে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু করেছে। আর এ বিষয়ে দেশে দেশে দেখা যাচ্ছে আলাদা নীতি ও কৌশল।

শিশুদের টিকা দেওয়ার এ তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটিতে এখন থেকে ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের কোভিড টিকা দেওয়া হবে। ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের তারা আগেই টিকার আওতায় এনেছিল।

যুক্তরাজ্যের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তরা যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি ফাইজারের টিকার একটি করে ডোজ শিশুদের দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

শিশুদের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন দেশ কোন নীতি এবং কৌশল অবলম্বন করছে তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে। 

কী ঘটছে ইউরোপে?

গত মে মাসে ইউরোপিয়ান মেডিসিন্স এজেন্সি (ইএমএ) ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের ফাইজারের টিকা দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। এরপর থেকে ইউরোপেরা বিভিন্ন দেশ ভিন্ন ভিন্ন গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

ডেনমার্ক ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী এবং স্পেন ১২ থেকে ১৯ বছর বয়সীসহ তাদের প্রায় সব শিশুকে টিকার অন্তত একটি করে ডোজ দিয়েছে।

ফ্রান্সে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ৬৬ শতাংশকে টিকার একটি ডোজ দেওয়া হয়েছে। দেশটিতে দ্রততার সঙ্গে এগিয়ে চলা এই টিকাদান কর্মসূচিতে ইতোমধ্যে ৫২ শতাংশ শিশু টিকার দুটি ডোজই পেয়েছে।

দেশটিতে আগামী অক্টোবরে মধ্যে ‘হেলথ পাসের’ বয়স সীমা বাড়িয়ে অনূর্ধ্ব ১৮ বছর পর্যন্ত করা হচ্ছে। যার ফলে সিনেমা, মিউজিয়াম, রেস্তোরাঁ এবং শপিং সেন্টারের মত বদ্ধ জায়গায় যেতে হলে কিশোর এবং তরুণদের টিকার সনদ কিংবা কোভিড নেগেটিভ থাকার প্রমাণ দিতে হবে।

গত জুনে জার্মানির বৈজ্ঞানিকরা সুপারিশ করেছেন, শারীরিকি অসুস্থতা থাকলেই কেবল ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের টিকা দেওয়া উচিত। কিন্তু করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের বিস্তারের মধ্যে গত অগাস্টে বয়সসীমা বাড়িয়ে ১২ বছরের ঊর্ধ্বে সবাইকে টিকা দেওয়া শুরু করা হয়।

সুইডেনে কেবল ফুসফুসের রোগ, তীব্র অ্যাজমার জটিলতা এবং উচ্চ ঝুঁকির অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলেই কেবল ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশ নরওয়ে সম্প্রতি বয়সসীমা বাড়িয়ে ১২ থকে ১৫ বছরের শিশুদের টিকার প্রথম ডোজ দিচ্ছে। দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

ঢাকার মিরপুরে সরকারী ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা নেওয়া হচ্ছে এক শিশুর। এখানে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

যুক্তরাষ্ট্রে টিকার বাধ্যবাধকতা

গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় প্রথম ১২ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের ফাইজারের টিকা দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকায় তিন সপ্তাহের ব্যবধানে শিশুদের টিকার দুটি ডোজ দেওয়া শুরু হয়।

জুলাইয়ের শেষ নাগাদ ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের ৪২ শতাংশকে ফাইজার কিংবা মডার্নার টিকার অন্তত একটি ডোজ দেওয়া হয় এবং ৩২ শতাংশকে দুটি ডোজই দেওয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনে সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার পর শিশুদের টিকা দেওয়া শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র।

সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল- সিডিসির তথ্য অনুযায়ী যেসব এলাকায় টিকা দেওয়ার হার সবচেয়ে কম সেখানে শিশুদের কোভিড আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির হার ৩ দশকি ৪ থেকে ৩ দশমিক ৭ গুণ বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি স্কুল কর্তৃপক্ষ ১২ বছর ও তার বেশি বয়সীদের ক্লাসে অংশ নিতে টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করার পক্ষে ভোট দিয়েছে। অভিভাবকরা অবশ্য এর বিরোধিতা করেছেন।

ইতোমধ্যে ৬ লাখ শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে লস এঞ্জেলস কর্তৃপক্ষ। নিউ ইয়র্কে অবশ্য শিক্ষার্থীদের টিকা না দিয়ে স্কুলের সব কর্মীর টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

ওষুধ কোম্পানি ফাইজারের পক্ষ থেকেও কম বয়সী শিক্ষার্থীদের ওপর টিকার পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সীদের ওপর টিকা পরীক্ষার ফলাফল তথ্যসহ পাওয়ার আশা করছে কোম্পানিটি। ৬ মাস থেকে ৪ বছর বয়সীদের ওপর টিকা পরীক্ষার ফল এ বছরের শেষ নাগাদ পাওয়া যেতে পারে। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইতোমধ্যে আভাস দিয়েছেন, নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলো টিকা পরীক্ষার ফল পর্যালোচনা করার পর কম বয়সী শিশুদেরও টিকার আওতায় আনা হতে পারে।

তিন বছর থেকেই টিকার অনুমোদন দিয়েছে চীন

গত জুনে ৩ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের জন্য ওষুধ কোম্পানি সিনোভ্যাকের টিকার অনুমোদন দিয়েছে চীন। তারাই প্রথম এত কম বয়সী শিশুদের জন্য টিকার অনুমোদন দিয়েছে।

এ বছরের মধ্যে ১৪০ কোটি জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে টিকা দেওয়ার একটি খসড়া লক্ষ্য ঠিক করেছে চীন। ১৮ বছরের কম বয়সীদের বড় অংশকে টিকা না দিতে পারলে এ লক্ষ্য পূরণ হবে না বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

চীনে টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক না হলেও স্থানীয় কিছু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিবারের সব সদস্যের দুই ডোজ টিকা দেওয়া না থাকলে শিক্ষার্থীরা এই পর্বে স্কুলে ফিরতে পারবে না। 

এশিয়া, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাকের টিকা দেওয়া হচ্ছে।

চিলিতে ইতোমধ্যে ৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য সিনোভ্যাকের টিকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় ৬ মাস থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ওপর টিকার পরীক্ষা চালাচ্ছে কোম্পানিটি।

ভারতে প্রথম বিবেচনায় প্রাপ্তবয়স্করা

বিশ্বের মধ্যে ভারতেই কিশোর বয়সীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ইউনিসেফের আনুমানিক হিসেব অনুযায়ী, সে সংখ্যা ২৫ কোটি ৩০ লাখ। 

সাম্প্রতিক ‘ন্যাশনাল সেরোলজিক্যাল সার্ভের’ তথ্য অনুযায়ী, মহামারী শুরুর পর থেকে ৬০ শতাংশ শিশু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকিতে পড়েছে এবং আক্রান্ত হয়ে তাদের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতাও গড়ে উঠেছে।

গত অগাস্টে স্থানীয় কোম্পানি ‘জাইডাস ক্যাডিলা’র তৈরি নতুন একটি টিকা ১২ বছর বা তার বেশি বয়সীদের জন্য জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ভারতে এটাই শিশুদের টিকার প্রথম অনুমোদন।

তিন ডোজের এই টিকা দিতে গতানুগতিক পদ্ধতির লম্বা সূচের সিরিঞ্জের পরিবর্তে ফার্মাজেট নিডল ফ্রি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। জাইডাস ক্যাডিলা জানিয়েছে, শিগগিরই তারা ২ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ওপর এ টিকার পরীক্ষা চালাতে চায়।

ভারতের স্বাস্থ্য উপদেষ্টারা জানিয়েছেন, গুরুতর শারীরিক সমস্যা রয়েছে এমন ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের আগামী অক্টোবর থেকে টিকা দেওয়া শুরু হতে পারে। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা দেওয়া সম্পন্ন হলেই কেবল তার ব্যাপ্তি বাড়ানো হবে।