কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় ‘নিহতরা আইএসের ছিল না’

আফগানিস্তানে ২০ বছরের যুদ্ধে জানামতে এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের শেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা আর মার্কিন সামরিক বাহিনী এটিকে ‘ন্যায্য হামলা’ বলে দাবি করেছিল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Sept 2021, 04:13 PM
Updated : 11 Sept 2021, 05:31 PM

ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে নজরদারি করার পর ২৯ অগাস্ট একটি গাড়ির ওপর ওই ড্রোন হামলাটি চালানো হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা মনে করেছিলেন, এই গাড়িটিতে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বোমা বহন করা হচ্ছে এবং এটি কাবুল বিমানবন্দরে অবস্থানরত মার্কিন সৈন্যদের জন্য একটি আসন্ন হুমকি।

কিন্তু ভিডিও সাক্ষ্যের পাশাপাশি ওই গাড়ির চালকের এক ডজনেরও বেশি সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে করা নিউ ইয়র্ক টাইমসের তদন্তে ঘটনাটির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাষ্য নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এমনকি ওই গাড়িতে আদৌ বিস্ফোরক ছিল কিনা, ওই চালকের সঙ্গে আইএসের কোনো যোগাযোগ ছিল কিনা এবং গাড়িটিতে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার পর দ্বিতীয় কোনো বিস্ফোরণ ঘটেছিল কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ড্রোন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সময় তারা ওই গাড়ির চালকের পরিচয় জানতেন না কিন্তু তার ওই দিনের তৎপরতায় তাকে তাদের কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছিল।

তারা আরও জানান, ওই গাড়ি চালক সম্ভবত আইএসের একটি নিরাপদ আস্তানায় গিয়েছিল এবং এক পর্যায়ে সে গাড়িতে এমন কিছু তুলেছিল তাতে গাড়িটিতে বিস্ফোরক থাকতে পারে বলে তাদের মনে হয়েছিল।

টাইমসের প্রতিবেদন ওই চালককে জেমারি আহমাদি বলে শনাক্ত করেছে, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি ত্রাণ সংস্থার দীর্ঘদিনের কর্মী। তার পরিবারের সদস্যদের, সহকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিস্তারিত সাক্ষাৎকারসহ যে সব প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাতে ধারণা পাওয়া গেছে যে ওই দিন তার ভ্রমণগুলো আসলে সহকর্মীদের কর্মস্থলে নিয়ে যাওয়া ও ফিরিয়ে আনার সঙ্গে যুক্ত ছিল।

আর ভিডিওগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী সম্ভবত আহমাদি ও সহকর্মীদের তার গাড়ির পেছনে পানির জার তুলতে দেখেছে, যেগুলো পরিবারের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। 

ওই ড্রোন হামলায় তিন বেসামরিক নিহত হয়ে থাকতে পারেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী এমন কথা বললেও টাইমসের প্রতিবেদন দেখিয়েছে, কাবুলের ঘনবসতিপূর্ণ একটি আবাসিক এলাকায় চালানো ওই হামলায় সাতটি শিশুসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন।

আহমাদি (৪৩) ২০০৬ সাল থেকে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ত্রাণ ও প্রেশার গ্রুপ নিউট্রিশন এন্ড এডুকেশন ইন্টারন্যাশনালের (এনইআই) হয়ে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছিলেন। হামলার দিন আহমাদির বস সকাল প্রায় পৌনে ৯টার দিকে তাকে অফিস থেকে ফোন দিয়ে বলেছিল, আসার পথে তার (বসের) ল্যাপটপটি যেন সে নিয়ে আসে।

“সে তখনো বাসায় আছে কিনা জিজ্ঞেস করলে সে হ্যাঁ বলেছিল,” কাবুলে এনইআইয়ের দপ্তরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন এই কান্ট্রি ডিরেক্টর। আফগানিস্তানে মার্কিন কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় আহমাদির অন্যান্য সহকর্মীদের মতো তিনিও পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।

স্বজনদের ভাষ্যমতে, আহমাদি সকাল প্রায় ৯টার দিকে এনইআইয়ের মালিকানাধীন ১৯৯৬ মডেলের একটি সাদা টয়োটা করোলা গাড়িতে করে বাড়ি থেকে অফিসের পথে রওনা হন। কাবুল বিমানবন্দর থেকে কয়েক মাইল পশ্চিমে তিন ভাই ও পরিবারের সঙ্গে এই বাড়িটিতে বসবাস করে আসছিলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা টাইমসকে জানিয়েছেন, এই সময়ই তাদের লক্ষ্যবস্তু, একটি সাদা সেডান গাড়ি, প্রথম তাদের নজরদারিতে আসে; ওই সময় কাবুল বিমানবন্দর থেকে প্রায় তিন মাইল উত্তরপশ্চিমে আইএস গোষ্ঠীর কথিত নিরাপদ আস্তানা বলে শনাক্ত হওয়া একটি কম্পাউন্ড থেকে গাড়িটিকে বের হতে দেখেন তারা।

অফিসে যাওয়ার পথে আহমাদি দুই সহকর্মীকে গাড়িতে তুলে নিতে দুইবার ও বসের ল্যাপটপ নিতে একবার থেমেছিলেন; যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এর কোনো একটির কথা বলেছেন কিনা তা পরিষ্কার হয়নি বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

আহমাদি যে তিনটি জায়গায় থেমেছিলেন তার শেষটি ছিল এনইআইয়ের কান্ট্রি ডিরেক্টরের বাড়ি। এই জায়গাটি একটি রকেট হামলার দায় স্বীকার করা আইএসের পরবর্তী হামলা যেখান থেকে চালানো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল তার নিকটে। পরবর্তী হামলাটি একটি টয়োটা করোলার বুটে লুকানো লঞ্চার থেকে ছোড়া হবে বলে খবর ছিল, ওই গাড়িটিও আহমাদিটির মতো একই মডেলের ছিল।

টাইমসের একজন সাংবাদিক ওই ডিরেক্টরের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তারা এখানে ৪০ বছরে ধরে বসবাস করছেন বলে ডিরেক্টর জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ার আবেদন করে রাখা এই ডিরেক্টর বলেন, “সন্ত্রাসবাদ বা আইএসআইএসের (আইএস) সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা আমেরিকাকে ভালোবাসি, আমরা সেখানে চলে যেতে চাই।”

সেদিন সারাদিন দিন ধরেই একটি এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন আহমাদির গাড়িকে অনুসরণ করেছে আর যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা ওই সেডান ও কথিত আইএসের নিরাপদ আস্তানার মধ্যে যোগাযোগে আড়ি পেতেছিলেন এবং ওই কথোপকথনে গাড়িটিকে কয়েক জায়গায় থামার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছিল।

কিন্তু ওই দিন আহমাদির সঙ্গে যারা গাড়িতে চড়েছিলেন তারা জানিয়েছেন, সামরিক বাহিনী যাকে সন্দেহজনক গতিবিধি বলে ধরে নিচ্ছিল তা শুধু কাজের মধ্যে কাটানো একটি স্বাভাবিক দিন ছিল।

নাস্তা নেওয়ার জন্য এক জায়গায় থামার পর আহমাদি ও তার দুই সহযাত্রী এনইআইয়ের দপ্তরে পৌঁছান। সেখানকার নিরাপত্তা ক্যামেরার ফুটেজ টাইমস সংগ্রহ করেছে আর তাতে তাদের সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে অফিসে পৌঁছাতে দেখা গেছে। পরে ওই সকালেই আহমাদি কয়েকজন সহকর্মীকে নগরীর কেন্দ্রস্থলে তালেবান অধিকৃত একটি পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যান। 

তার ওই সহকর্মীরা জানিয়েছেন, নিকটবর্তী পার্কে শরণার্থীদের মধ্যে খাবার বিতরণের অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ জানাতে সেখানে গিয়েছিলেন তারা।

ওই কাজ সেরে আহমাদি ও তিন সহযাত্রী দুপুর প্রায় ২টার দিকে অফিসে ফেরেন।

ক্যামেরা ফুটেজে দেখা যায়, আহমাদি আধ ঘণ্টা পর একটা পানির হোস পাইপ হাতে বের হয়ে আসছেন, তারপর একজন রক্ষীর সহায়তায় কয়েকটি খালি প্লাস্টিকের কন্টেইনার ভরছেন।

তার সহকর্মীরা জানিয়েছেন, আহমাদি যে এলাকায় বাস করতেন সরকার পতনের পর সে এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তাই অফিস থেকে বাড়িতে পানি নিয়ে যেতেন তিনি।

“আমি নিজে কন্টেইনারগুলো ভরে দিয়েছিলাম আর সেগুলো গাড়ির বুটে তুলতে তাকে সাহায্য করেছিলাম,” বলেন ওই রক্ষী।

৩টা ৩৮ মিনিটে ওই রক্ষী ও আরেকজন সহকর্মী গাড়িটিকে আরেকটু দূরে নিয়ে রাখেন। দিনের কাজ শেষ হয়, আহমাদি ও তিন সহযাত্রী বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়ে যান। অফিসের জেনারেটর বন্ধ হয়ে যায় আর ক্যামেরার ফুটেজও শেষ হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই সময়ই কাবুল বিমানবন্দরের ৫ থেকে ৭ মাইল দক্ষিণপশ্চিমে আহমাদিকে একটি কম্পাউন্ডে অনুসরণ করছিল ওই ড্রোনটি; এই স্থানটি এনইআই দপ্তরের অবস্থানের সঙ্গে মিলে যায়।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, এখানে আহমাদি ও অপর তিন জন গাড়িতে ভারি প্যাকেজ তুলছেন তা পর্যবেক্ষণ করে ড্রোনটি, ওগুলোতেই বিস্ফোরক ভরা থাকতে পারে বলে বিশ্বাস করতে শুরু করেন তারা।

কিন্তু যাত্রীরা জানিয়েছেন, তাদের কাছে শুধু দুটি ল্যাপটপ ছিল, এগুলোকেই গাড়িতে রেখেছিলেন তারা আর গাড়ির বুটে পানি ভর্তি প্লাস্টিক কন্টেইনার ছাড়া আর কিছু ছিল না।

পৃথক সাক্ষাৎকারে তিন যাত্রীই বাড়ি ফেরার পথে গাড়িতে বিস্ফোরক তোলার কথা অস্বীকার করেছেন।

আহমাদির গাড়ির এক যাত্রী, তার এক সহকর্মী ‍যিনি নিয়মিত তার সঙ্গে অফিসে আসা-যাওয়া করতেন, তার ভাষ্য অনুযায়ী, সেদিনও বাড়ি ফেরার পথে তারা হাসাহাসি ও কৌতুক করতে করতে ফিরছিলেন, তবে এদিন একটা ব্যতিক্রম ছিল: তালেবানের সঙ্গে ঝামেলা হতে পারে আশঙ্কায় আহমাদি রেডিও বন্ধ করে রেখেছিলেন।    

“তিনি উৎসবের সঙ্গীত শুনতে পছন্দ করতেন। কিন্তু ওইদিন গাড়িতে আমরা কিছুই বাজাইনি,” বলেছেন তার এক সহকর্মী।

তিন সহকর্মীকে যার যার গন্তব্যে নামিয়ে দিয়ে বিমানবন্দরের কাছে নিজের বাড়ির দিকে রওনা হন আহমাদি।

“আমি কিছুক্ষণ বসে যাওয়ার জন্য বলেছিলাম, কিন্তু সে জানায় তার ক্লান্ত লাগছে,” বলেন গাড়ি থেকে নামা শেষ সহকর্মী।   

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যদিও ওই মুহূর্তে আহমাদির পরিচয়ের সম্পর্কে তারা সামান্যই জানতেন কিন্তু যে সাদা সেডান তিনি চালাচ্ছিলেন তা যে বিমানবন্দরে অবস্থানরত সেনাদের জন্য আশু হুমকি বহন করছে তা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন তারা।

যখন আহমাদি তার বাড়ির উঠানে প্রবেশ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের টেকনিক্যাল কমান্ডার গাড়িটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন এবং ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে একটি হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়েন।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কথিত আইএসের নিরাপদ আস্তানা থেকে আহমাদির বাড়িটি অন্যরকম ছিল।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লক্ষ্যবস্তু ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় থাকলেও ড্রোন অপারেটর দ্রুত স্ক্যান করে দেখতে পান শুধু একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষ গাড়িটিতে আছেন এবং ‘যু্ক্তিসঙ্গত নিশ্চয়তার’ সঙ্গে সেখানে কোনো নারী, শিশু বা অসামরিক কেউ নেই বলে মূল্যায়ন জানান।

কিন্তু স্বজনদের বক্তব্য অনুযায়ী, আহমাদি উঠানে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তার ও তার ভাইয়ের বেশ কয়েকজন ছেলেমেয়ে বের হয়ে আসে, তাকে দেখে আনন্দে চিৎকার করে এবং সে গাড়িটি ভেতরে রাখার সময় তারা পেছনের সিটে উঠে বসে।

আহমাদির গাড়ি যখন বাড়িতে প্রবেশ করছে তখন তার ভাই রোমাল নিচের তলায় তার স্ত্রীর সঙ্গে বসে ছিলেন। তার প্রাপ্তবয়স্ক চাচাতো ভাই নাসের আহমাদিকে অভিবাদন জানিয়ে তার জন্য অজুর পানি আনতে যায়।

গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করার আগেই হঠাৎ সেখানে একটা বিস্ফোরণ হয় আর জানালার ভাঙা কাঁচ ছিটকে ঘর ভরে যায় বলে স্মৃতিচারণ করে বলেন রোমাল। দাঁড়িয়ে টলতে থাকেন তিনি। স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন, “ছেলেমেয়েরা কোথায়?”

“তারা বাইরে,” জবাব দেন তিনি।   

রোমাল দৌড়ে বাইরে যান, দেখেন তার ভাতিজা ফয়সাল (১৬) বাইরের সিঁড়িতে পড়ে আছে, তার সারা শরীর স্প্লিন্টারে ছিন্নভিন্ন হয়ে আছে।

“সে শ্বাস নিচ্ছিল না,” বলেন তিনি। ধোঁয়া ও আগুনের মধ্যে তিনি আরেক ভাতিজার লাশ দেখতে পান। এরপর প্রতিবেশীরা এসে তাকে সরিয়ে নেয় বলে জানান তিনি।

এই হামলার পরপরই আরও বড় একটি বিস্ফোরণ ঘটেছে দাবি করে তাদের কৃত কর্মের ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তারা।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান মার্ক মিলি বলেছেন, “যেহেতু সেখানে দ্বিতীয় আরেকটি বিস্ফোরণ ঘটেছে, তাই যৌক্তিকভাবেই উপসংহার টানা যায় যে ওই গাড়িতে বিস্ফোরক ছিল।” 

কিন্তু ঘটনার পরেরদিন সকালে টাইমসের প্রত্যক্ষ তদন্তকারী দল ও টাইমসের একজন সাংবাদিক হামলাস্থল পরীক্ষা করে দেখেন। এর চারদিন পর তারা আবার পরীক্ষা করেও দ্বিতীয় আরও শক্তিশালী কোনো বিস্ফোরণের প্রমাণ পাননি।  

ছবি ও ভিডিও যাচাই করে দেখা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যদিও সেখানে একটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত হানার ও পরবর্তীতে গাড়িতে আগুন লেগে যাওয়ার পরিষ্কার চিহ্ন দেখা গেছে, সেখানে বিস্ফোরকের ধাক্কায় ভেঙে পড়া বা উড়ে যাওয়া কোনো দেয়াল, ধ্বংস হয়ে যাওয়া গাছপালা দেখা যায়নি শুধু প্রবেশপথের গেইট তুবড়ে গেছে, এতে শুধু একটি একক বিস্ফোরণের ধাক্কারই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

“এটি একটি বৈধ লক্ষ্যস্থল ছিল, এ সিদ্ধান্তে আসতে ব্যবহৃত গোয়েন্দা বা প্রযুক্তির বিশ্বাসযোগ্যতাকে এটি গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে,” বলেছেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অভিজ্ঞ সাবেক কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা পরামর্শক ক্রিস কোব-স্মিথ।  

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী এ পর্যন্ত তিন বেসামরিক নিহত হওয়ার কথা জানালেও আহমাদির স্বজনরা জানিয়েছেন, ওই হামলায় তাদের পরিবারের সাতটি শিশুসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন। 

যারা নিহত হয়েছেন তারা হলেন, আহমাদি ও তার তিন সন্তান, জামির (২০), ফয়সাল (১৬) এবং ফারজাদ (১০); আহমাদির চাচাতো ভাই নাসের (৩০); রোমালের তিন সন্তান, আরউইন (৭), বেনিয়ামিন (৬) ও হায়াত (২) এবং ৩ বছরের দুই মেয়ে শিশু, মালিকা ও সোমায়া। 

প্রতিবেশী ও আফগান স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল থেকে শিশুদের মৃতদের সরানোর কথা নিশ্চিত করেছেন। আহমাদির স্বজনরাও গুরুতর দগ্ধ শিশুদের দেহের ছবি দেখিয়েছেন।

যে আহমাদি শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আবেদন করে রেখেছে এবং যিনি একটি মার্কিন কোম্পানিতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন, আমেরিকা কেন তাকে হামলার লক্ষ্য করল, এ প্রশ্ন তার পরিবারের সদস্যদের। 

আহমাদির ভাই বলেন, “তারা সবাই নিরপরাধ ছিলেন। তোমরা (যুক্তরাষ্ট্র) তাকে আইএস বলছ, কিন্তু সে তোমাদের হয়েই কাজ করতো।”