ছাত্র আর ছাত্রীদের মাঝে পর্দা তুলে বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছে আফগানিস্তানে

তালেবান ক্ষমতা দখলের তিন সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পর খুলতে শুরু করেছে আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো; অনেক জায়গায় শ্রেণিকেক্ষের মাঝে পর্দা তুলে কিংবা বোর্ড বসিয়ে ছাত্র আর ছাত্রীদের আলাদা করা হচ্ছে।

>>রয়টার্স
Published : 7 Sept 2021, 07:08 AM
Updated : 7 Sept 2021, 07:08 AM

আফগানিস্তানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন কী ঘটছে তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে পশ্চিমা দেশগুলো। তারা বলে আসছে, মৌলিক সহায়তা এবং কূটনৈতিক যোগাযোগ বজায় রাখতে চাইলে নারী অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে তালেবানকে।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে ক্ষমতায় থাকার সময় মেয়েদের শিক্ষা কিংবা চাকরি করা নিষিদ্ধ করেছিল তালেবান। যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার সুযোগে দুই দশক পর তারাই আবার আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

এবার তারা কিছুটা নমনীয় ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। তালেবান বলছে, ইসলামী আইন অনুযায়ী নারীদের সব অধিকারই তারা দেবে। তবে বাস্তবে সেটা কেমন হবে সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়।

আফগানিস্তানের বড় শহর কাবুল, কান্দাহার এবং হেরাতের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, শ্রেণিকক্ষে নারী শিক্ষার্থীদের আলাদা বসতে হচ্ছে, পাঠ দেওয়া হচ্ছে আলাদা এবং তাদের বিচরণ সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে ক্যাম্পাসের নির্দিষ্ট এলাকায়।

কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ২১ বছর বয়সী আঞ্জিলা ক্লাসে ফিরে শ্রেণিকক্ষ পর্দা দেখার কথা রয়টার্সকে বলেছেন। তার ভাষায়, এটা ‘মেনে নেওয়া যায় না’।

“যখন ক্লাসে ঢুকি, আমার তখন ভয় লাগছিল… আমরা ধীরে ধীরে ২০ বছর আগের সময়ে ফিরে যাচ্ছি।”

আঞ্জিলা জানান, তালেবান আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার আগেও ছাত্র আর ছাত্রীরা ক্লাসে আলাদাই বসত। কিন্তু এখন মাঝখানে পর্দা দিয়ে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।

কাবুলের আভিসেনা ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র আর ছাত্রীদের মধ্যে এভাবে পর্দা তুলে দেওয়া হয়েছে। ছবি: রয়টার্স

ক্লাস কীভাবে চালাতে হবে, সে বিষয়ে আফগানিস্তানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি সমিতির পক্ষ থেকে একটি নীতিমালা করে দেওয়া হয়েছ। ছাত্রীদের বোরখা পড়া এবং তাদের জন্য আলাদা প্রবেশ পথ রাখতে বলা হয়েছে সেখানে।

নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নারী শিক্ষক রাখার কথাও বলা হয়েছে ওই নীতিমালায়। তাছাড়া মেয়েদের আলাদা করে পাঠ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে অথবা পর্দা দিয়ে আলাদা করা শ্রেণিকক্ষের কথাও বলা হয়েছে সেখানে।

এটা আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবানের বেঁধে দেওয়া নিয়ম কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি রয়টার্স। ওই নীতিমালার বিষয়ে এবং ভাগ করে দেওয়া শ্রেণিকক্ষের ছবি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে চলবে সে বিষয়ে তালেবান মুখপাত্র তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি।

অবশ্য তালেবান গত সপ্তাহেই বলেছিল, শিক্ষাদান আবারও শুরু করতে হবে, তবে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীদের আলাদাভাবে রাকতে হবে।

তালেবানের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, আফগানিস্তানের ‘সীমিত সম্পদ এবং জনবল’ বিবেচনায় পর্দা দিয়ে শ্রেণিকক্ষ ভাগ করে দেওয়া ‘খুবই যৌক্তিক’। শ্রেণিকক্ষের দুই পাশে একই শিক্ষকের পাঠ দেওয়াটাই ‘সবচেয়ে ভালো’ উপায়।

‘লেখাপড়া চালিয়ে যাও’

সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ‘আভিসেনা ইউনিভার্সিটি অব কাবুল’ এর একটি ছবিতে দেখা যায় শ্রেণিকক্ষের মাঝ বরাবর একটি ধূসর পর্দা টাঙানো রয়েছে। নারী শিক্ষার্থীদের মাথাসহ পুরো দেহ দীর্ঘ আচ্ছাদনে ঢাকা, তবে মুখ দেখা যাচ্ছে।

তালেবান শাসনে কী ধরনের নিয়ম-নীতি জারি করা হতে পারে তা নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষক। তিন সপ্তাহের বেশি সময় আগে কাবুল দখলে নেওয়া তালেবান এখনও সরকার গঠন করতে পারেনি।

পরিবার এবং কর্মকর্তাদের বাধার মধ্যেও অত্যন্ত রক্ষণশীল মুসলিম এই দেশটিতে গত দুই দশক ধরে নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই করে আসা নারীরা এখন তালেবানি শাসনে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।

দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের হেরাত ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের একজন শিক্ষক রয়টার্সকে বলেছেন, তিনি এক ঘণ্টার ক্লাসকে দুই ভাগে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রথমে মেয়েদের এবং পরে ছেলেদের পাঠ দেবেন।

তার কোর্সের জন্য নাম লেখানো ১২০ জনের মধ্যে সোমবার চার ভাগের এক ভাগ শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন। অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী আগেই দেশ ছেড়ে গেছেন।

ওই শিক্ষক বলেন, “শিক্ষার্থীরা আজ খুবই মানসিক চাপে ছিল। আমি তাদের আসা-যাওয়া এবং লেখাপড়া চালিয়ে যেতে বলেছি, সামনের দিনগুলোতে নতুন সরকার এ বিষয়ে নীতিমালা ঠিক করে দেবে।”

কাবুলের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭ বছর বয়সী শিক্ষক শের আজম জানান, তার প্রতিষ্ঠান ছাত্র-ছাত্রীদের আলাদা ক্লাস নিতে অথবা পর্দা কিংবা কাঠের বোর্ড দিয়ে শ্রেণিকক্ষ ভাগ করে নিতে বলেছে।

কিন্তু তালেবানের বিজয়ের মধ্যে দিয়ে অর্থনৈতিক সঙ্কট আরও বেড়ে যাওয়ার ফলে কতজন শিক্ষার্থী ক্লাসে ফিরবে সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন।

“আমি জানি না কতজন শিক্ষার্থী ফিরবে, কারণ এখন আর্থিক সঙ্কট রয়েছে এবং বেশ কিছু শিক্ষার্থী রয়েছে যাদের পরিবার কাজ হারিয়েছে।”