তালেবানের বিরুদ্ধে অন্তঃসত্ত্বা পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার অভিযোগ

পরিবারের সামনেই অন্তঃসত্ত্বা এক পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তালেবানের বিরুদ্ধে। স্থানীয় গণমাধ্যম এই নারীর নাম বানু নিগার বলে জানিয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Sept 2021, 06:37 PM
Updated : 5 Sept 2021, 07:22 PM

প্রাদেশিক এক শহরে তাকে গুলি করে মারার কথা বিবিসি-কে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। মধ্যাঞ্চলীয় গোর প্রদেশের রাজধানী ফিরোজকোহ শহরে নিজ বাড়িতে স্বজনদের সামনে নিগারকে গুলি করা হয়।

আফগানিস্তানে নারীদের ওপর নিপীড়নের খবর বেশি বেশি করে আসতে থাকার মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটল।

নিগার হত্যার কিছু ছবি স্বজনরা দিয়েছেন, যাতে একটি কক্ষের দেয়ালে ছিটকে পড়া রক্তের দাগ এবং সামনে একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। নিহতের মুখ মারাত্মকভাবে বিকৃত হয়ে গেছে।

পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিগার স্থানীয় একটি কারাগারে কাজ করতেন এবং তিনি আট মাসের গর্ভবতী ছিলেন।

শনিবার তিন বন্দুকধারী নিগারের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালায়। এরপর পরিবারের সদস্যদের হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বাড়িতে অনুপ্রবেশকারীদেরকে আরবিতে কথা বলতে শোনা গেছে।

তবে তালেবান বিবিসি-কে বলেছে, বানু নিগার হত্যার ঘটনায় তারা জড়িত নয়। ঘটনাটি তারা তদন্ত করে দেখছে।

তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, “আমি ঘটনাটি সম্পর্কে জেনেছি। তালেবান তাকে মারেনি এ বিষয়টি আমি নিশ্চিত করছি। আমাদের তদন্ত চলছে।”

জাবিউল্লাহ আরও জানান, তালেবান ইতোমধ্যেই আগের প্রশাসনে কাজ করা সবার প্রতি ক্ষমা ঘোষণা করেছে। নিগার হত্যার ঘটনাটি ‘ব্যক্তিগত শত্রুতা’ বা ‘অন্য কিছু’ হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

হত্যার ঘটনার ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু এখনও স্পষ্ট করে জানতে পারা যাচ্ছে না, কারণ ফিরোজকোহ শহরে তালেবানের ভয়ে বিষয়টি নিয়ে কেউ মুখ খুলতে চাইছে না।

তবে তিন সূত্র বিবিসি-কে জানিয়েছেন, তালেবান শনিবার বানু নিগারকে মারধর করেছে এবং তার স্বামী ও সন্তানের সামনে তাকে গুলি করে মেরেছে।

গত ১৫ অগাস্ট তালেবান আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর থেকেই নিজেদের উদার ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা করছে। কিন্তু দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখনও তাদের নির্যাতন, নৃশংসতার নানা খবর আসছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো আফগানিস্তানে নানা প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড, লোকজনকে বন্দি করা, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের একাধিক ঘটনার প্রমাণ পাচ্ছে। অথচ তালেবান প্রকাশ্যে জানিয়েছিল যে, তারা আগের আফগান সরকারে কাজ করাদের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিশোধ নেবে না।

এর আগে ১৯৯০ এর দশকে তালেবান আফগানিস্তানের শাসনক্ষমতায় থাকার সময় নারী শিক্ষা নিষিদ্ধ করেছিল। তবে এবার তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কীভাবে পড়াশোনা হবে তার নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে। বলা হচ্ছে, মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারবে, তবে নারী এবং পুরুষের ক্লাস হবে আলাদাভাবে। নারী শিক্ষার্থীদের বোরকা বা চাদর এবং নিকাব পরতে হবে।

শনিবার তালেবান কর্মকর্তারা কাবুলে নারীদের একটি বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করেছে। এই বিক্ষোভে আফগান নারীরা গত ২০ বছরে যেসব অধিকার অর্জন করেছে, সেগুলো বহাল রাখার দাবি তুলেছিল।