সপ্তাহ দুয়েক আগেই নিয়েছিলেন তালেবান নেতার সাক্ষাৎকার, সেই বেহেশতা আরগান্দাকেই কি না আফগানিস্তান থেকে পালাতে হল।
Published : 30 Aug 2021, 11:49 PM
ইতিহাস গড়া এই নারী সাংবাদিক সিএনএনকে বলেছেন, তালেবানের ভয়েই দেশ ছেড়েছেন তিনি।
আর তার প্রতিষ্ঠান টলোনিউজের মালিক সাদ মহসিনের ভাষায়, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি যে কী, তার একটি প্রতীকী রূপ হল বেহেশতার দেশত্যাগ।
দুই দশক পর আফগানিস্তানে ক্ষমতার দখল নেওয়া গোঁড়া ইসলামী দল তালেবান শরিয়া আইনে চলার কথা বললেও কিছু পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে।
আগে যখন তারা ক্ষমতায় ছিল, তখন তারা নারীদের বাইরে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল, মেয়ে শিশুদের স্কুলে যাওয়াও করেছিল বন্ধ।
কিন্তু গত ১৫ অগাস্ট কাবুল দখলের পরদিন প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছিলেন, তাদের শাসনে নারীরা স্বাধীনতা পাবে ‘শরিয়া আইন অনুযায়ী’, তাদের ‘নিয়ম মেনে’ সংবাদমাধ্যমও মুক্তভাবে কাজ করতে পারবে।
এরপর ১৭ অগাস্ট আফগানিস্তানের প্রথম নারী সংবাদকর্মী হিসেবে তালেবান নেতার সাক্ষাৎকার নিয়ে বিশ্বজুড়ে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন টলোনিউজের বেহেশতা আরগান্দ।
মোহসেনি তখন ওয়াশিংটন পোস্টে এক কলামে উচ্ছ্বসিত হয়ে সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে লিখেছিলেন, “আফগানিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথম টিভিতে লাইভ সাক্ষাৎকারে তালেবানের কোনো প্রতিনিধি একজন নারী সংবাদকর্মীর সামনে এলেন।”
আর এর মধ্য দিয়ে তালেবান বিশ্বকে তাদের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনের একটি বার্তা দিতে চাইছে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
কিন্তু তালেবানের প্রতিশ্রুতি নিয়ে দ্বিধা-সংশয়ের মধ্যে দুই সপ্তাহ না যেতেই দেশ ছাড়লেন বেহেশতা।
সিএনএন হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করলে তার এই পদক্ষেপের কারণ তুলে ধরে বলেন, “আমি দেশ ছেড়েছি, কারণ অন্য লাখো মানুষের মতো আমিও তালেবানকে ভয় পাচ্ছি।”
টলো নিউজের কর্ণধার মোহসেনি বলেন, বেহেশতাই শুধু নয়, তাদের অভিজ্ঞ অনেক সাংবাদিকই চাকরি ছেড়েছে।
“বলা যায় সুপরিচিত বেশিরভাগ সাংবাদিক, কর্মীই চলে গেছে। এখন পাগলের মতো নতুন কর্মী খুঁজতে হচ্ছে আমাদের।”
একদিকে কর্মী ধরে রাখা, অন্যদিকে সম্প্রচার চালিয়ে যাওয়া- এমন দুটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে এখন কাজ করতে হচ্ছে বলে জানান মোহসেনি।
২৪ বছর বয়সী বেহেশতা কিছু দিন আগেই টলোনিউজে সংবাদ পাঠক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি পড়াশোনা করেছেন কাবুল ইউনিভার্সিটিতে, সাংবাদিকতায়।
বেহেশতা বলেন, তিনি নবম শ্রেণিতে থাকাকালেই সাংবাদিক হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন। যেদিন তার এক শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে তাকে একটি সংবাদ প্রতিবেদন পড়তে বলেছিলেন টিভির সংবাদ পাঠিকাদের মতো করে।
ইউনিভার্সিটি থেকেত বেরিয়ে কয়েকটি সংবাদ সংস্থা ও রেডিওতে কাজ করার পর টলোনিউজে যোগ দেন তিনি।
“আমি এখানে এক মাস ২০ দিন কাজ করেছি, তারপরই তালেবান এল,” বলেন বেহেশতা।
তালেবানের মিডিয়া টিমের সদস্য মৌলভী আবদুলহক হেমাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন বেহেশতা।
সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সে এক কঠিন ব্যাপার ছিল, কিন্তু আফগান নারীদের জন্য তিনি তা করেছিলেন।
“আমি নিজেই বলছিলাম, যদি আমরা ঘরে থাকি, অফিসে না যাই, তাহলে তারা বলবে, ‘মেয়েরা ঘর থেকে বের হতে পারবে না’। তাই আমার মনে হয়েছিল, কাউকে না কাউকে তো শুরুটা করতে হবে। তাই আমি কাজের জন্য বের হওয়ার সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম।”
“আমি তালেবান নেতাকে তাই বলেছিলাম, আমরা আমাদের অধিকার চাই, আমরা কাজ করতে চাই, আমরা সমাজের অংশ হতে চাই। আর এটা আমাদের অধিকার।”
এর দুই দিন পর নোবেলজয়ী পাকিস্তানি মালালা ইউসুফজাইর সাক্ষাৎকারও নেন বেহেশতা। আফগানিস্তানের কোনো টিভিতে সেটাই মালালার প্রথম সাক্ষাৎকার।
তালেবান ক্ষমতা দখলের পর আফগান নারীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন পাকিস্তানি গোঁড়া ইসলামী গোষ্ঠীর নির্যাতনের শিকার মালালা।
তারপরই ঘটল বেহেশতার দেশত্যাগ।
দেশ ছাড়তে মরিয়া যে আফগানরা কাবুল বিমানবন্দরে জড়ো হয়ে আছে, তাদের নিয়ে রওনা হচ্ছে বিভিন্ন উড়োজাহাজ। গত মঙ্গলবার কাতার এয়ারফোর্সের এমনই একটি উড়োজাহাজে চড়ে দোহায় পাড়ি দেন বেহেশতা। তার সঙ্গে পরিবারের কয়েক সদস্যও ছিলেন।
তবে দেশে আবার ফেরার আশাবাদও প্রকাশ করেন এই সংবাদ কর্মী।
“যদি তালেবান তাদের কথা রাখে, যদি পরিস্থিতির উন্নতি হয়, যদি আমার মনে হয়, আমি নিরাপদে থেকে কাজ চালিয়ে নিতে পারব; তবে দেশে ফিরব আমি, কাজ করব দেশের মানুষের জন্য।”