‘যেন কেয়ামত দেখলাম’, বললেন কাবুল বিস্ফোরণে বেঁচে ফেরা একজন

বোমা হামলা, সহিংসতায় এর আগেও অসংখ্য মৃত্যু দেখা কাবুলে সর্বশেষ জোড়া বিস্ফোরণের ঘটনা আফগানিস্তান ছাড়ার আশা নিয়ে বিমানবন্দরের বাইরে ভিড় করা অনেকের স্বপ্নকে পরিণত করেছে দুঃস্বপ্নে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2021, 06:39 AM
Updated : 27 August 2021, 09:12 AM

প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই বলছেন, এই ঘটনার দুঃসহ স্মৃতি তাদের আজীবনই বয়ে বেড়াতে হবে।

বিস্ফোরণে বেঁচে ফেরা একজন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে তিনি ‘কেয়ামত’ দেখেছেন।

“জীবদ্দশায় কেয়ামত দেখা সম্ভব নয়। কিন্তু আজ আমি কেয়ামতই দেখেছি, নিজের চোখ দিয়ে প্রত্যক্ষ করেছি,” বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন তিনি।

বেঁচে ফেরা এ ব্যক্তি একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সাবেক কর্মী, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ অভিবাসী ভিসাও আছে তার।

বৃহস্পতিবার আরও কয়েক হাজার মানুষের মতো তিনিও হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন বিমানবন্দরের ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢোকার আশা নিয়ে; ভেতরে যেতে পারলে হয়তো কোনো একটি ফ্লাইটে চেপে আফগানিস্তান ছাড়তে পারবেন।

কূটনীতিক, বিদেশি নাগরিক, বিদেশিদের সঙ্গে কর্মরত ও তাদের সহযোগী আফগানদের দেশ ছাড়ার জন্য ৩১ অগাস্টের যে সময়সীমা নির্ধারিত, তা যতই এগিয়ে আসছিল, কাবুল বিমানবন্দরে ভিড়ও যেন ততই বাড়ছিল।

বিমানবন্দরের অ্যাবি গেইটের কাছে লোকজনের সারিবদ্ধ লাইনে ১০ ঘণ্টা পার করার পর ৫টার দিকে ভয়াবহ এক বিস্ফোরণ তাকে ছিটকে ফেলে বলে রয়টার্সকে জানান ওই ব্যক্তি।

“যেন কেউ আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি টেনে নিয়ে গেল; মুহুর্তের জন্য মনে হল, আমার কানের পর্দা ফেটে গেছে এবং আমি আমার শোনার অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছি।

“মৃতদেহ ও মৃতদেহের ছিন্নভিন্ন অংশ বাতাসে ভাসতে দেখেছি, টর্নেডো যেভাবে প্লাস্টিকের ব্যাগ উড়িয়ে নেয়, অনেকটা ওইরকম। বিস্ফোরণস্থলে মৃতদেহ, দেহের ছিন্নভিন্ন অংশ, বৃদ্ধ ও আহত নারী-পুরুষ ও শিশুদের দেখেছি,” বলেছেন তিনি।

তালেবানের হাতে নির্যাতনের শিকার হতে পারেন, এই আশঙ্কায় নিজের নাম পরিচয় জানাতে রাজি হননি বেঁচে ফেরা এ ব্যক্তি। কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠীটি কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে পশ্চিমা সমর্থিত আগের সরকারের সহযোগী এবং নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা গোষ্ঠীর অনেকেও একই ধরনের আশঙ্কা করছেন।

তালেবান নেতারা অবশ্য আফগানদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, কারও উপরই প্রতিশোধ নেওয়া হবে না এবং সবার অধিকারের প্রতিই সম্মান দেখানো হবে।

২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বাহিনীর অভিযানে তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দুই দশকে কাবুল নিয়মিতই আত্মঘাতী হামলার সাক্ষী হয়েছে। শহরটির বাসিন্দারাও পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিস্ফোরণস্থল ঘিরে রাখা, হতাহতদের সরিয়ে নেওয়ার দৃশ্য দেখে দেখে অভ্যস্ত।

“অথচ আজকে কাউকে এ ঘটনা দেখভালের দায়িত্বে দেখলাম না, কেউই মৃতদেহ ও আহতদের হাসপাতালে কিংবা সাধারণ মানুষের দৃষ্টিসীমার বাইরে নিয়ে যাচ্ছিল না।

“রাস্তা এবং নালায় মৃতদেহ ও আহতরা পড়েছিলেন। সামান্য পানির নালা রক্তে ভরে গিয়েছিল,” এসব দৃশ্য তাকে বহুদিন তাড়া করে ফিরবে বলেও শঙ্কা যত দ্রুত সম্ভব আফগানিস্তান ছাড়তে চাওয়া এ ব্যক্তির।

“শারীরিকভাবে আমি ঠিক আছি। কিন্তু মনে হয় না মানসিক ক্ষত ও এই ধাক্কা আমাকে বাকি জীবনে স্বাভাবিক থাকতে দেবে,” বলেছেন তিনি।