কাবুল বিমানবন্দরে হামলা: যা জানা গেছে

তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তান থেকে বিদেশিদের পাশাপাশি বেসামরিক আফগানদের সরে যাওয়ার মরিয়া চেষ্টার মধ্যেই আত্মঘাতী হামলার শিকার হয়েছে কাবুল বিমানবন্দর এলাকা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 August 2021, 08:06 PM
Updated : 26 August 2021, 08:06 PM

দেশটির একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার এ ঘটনায় অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছে আরও অন্তত ১৫০ জন।

নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৩ জন মার্কিন সেনাও রয়েছেন নিশ্চিত করেছে পেন্টাগন। 

কাবুল বিমানবন্দরে আইএস এর আঞ্চলিক সহযোগী আইএসআইএস খোরাসানের সন্ত্রাসী হামলার হুমকির কারণে সতর্কতা জারি করেছিল পশ্চিমা দেশগুলো। বৃহস্পতিবার ওই সতর্কবার্তায় নাগরিকদের ওই এলাকা এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেখানে ওই বিস্ফোরণ ঘটে।

বিস্ফোরণ কোথায়

বিবিসি জানিয়েছে, বিমানবন্দরের সীমানার কাছেই ব্যারন হোটেলের গেইটে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে।

যুক্তরাজ্যের তত্ত্বাবধানে ব্রিটিশ নাগরিকদের পাশাপাশি আফগানদের মধ্যে কাদের সরিয়ে নেওয়া হবে, তা বাছাইয়ের কাজ চলছিল ওই হোটেলে।

বিস্ফোরণের পর সেখানে গুলির শব্দ শোনা যায়। এর পরপরই বিমানবন্দরের অ্যাবি গেইটের কাছে ঘটে দ্বিতীয় বিস্ফোরণ।

স্থানীয় সাংবাদিকরা বলেছেন, বিমানবন্দরের অ্যাবি গেইটের বাইরে কাগজপত্র পরীক্ষার জন্য দিয়ে সেখানে একটি নালার পাশে অপেক্ষা করছিলেন বহু আফগান। বিস্ফোরণে ধাক্কায় তাদের অনেকের দেহ নালায় গিয়ে পড়ে।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সৈন্যরা বিমানবন্দরের ওই গেইটের কাছে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। একজন মার্কিন কর্মকর্তারা বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, সেখানে অন্তত একজন হামলারকারীর গায়ে এক্সপ্লোসিভ ভেস্ট ছিল। 

একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, অ্যাবি গেইটের কাছে বিস্ফোরণের পর হামলাকারীদের একজন ভিড়ের মধ্যে গুলিও চালিয়েছে। আবার সেখানে অবস্থানরত তালেবান যোদ্ধারা ফাঁকা গুলি ছুড়েছে বলেও কেউ কেউ দাবি করেছে।

হতাহত কত

সন্ধ্যার ওই বিস্ফোরণের পর থেকে হতাহতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।

তালেবানের বরাত দিয়ে রয়টার্স প্রথমে ১৩ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল। কয়েক ঘণ্টা পর আফগান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাতে বিবিসি অন্তত ৬০ জনের মৃত্যুর কথা জানায়। পরে তা বেড়ে হয় ৯০ জন।

তালেবান, আফগান আর মার্কিন- কোন পক্ষের ঠিক কতজন মারা গেছেন, সেই সঠিক সংখ্যা পেতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমগুলো প্রাথমিকভাবে চারজন মেরিন সেনা নিহত হওয়ার কথা বলেছিল। পরে জ্যেষ্ঠ একজন মার্কিন কমান্ডারের বরাতে রয়টার্স অন্তত ১২ জন আমেরিকান সৈন্যের নিহত হওয়ার খবর দেয়। আরও কয়েক ঘণ্টা পর পেন্টাগন জানায়,  নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩ জন হয়েছে, আহত আরও ১৫ জন। 

এক তালেবান কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছিলেন, তাদের অন্তত ২৮ জন যোদ্ধা রয়েছেন নিহতদের মধ্যে।

কিন্তু পরে তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বিবিসিকে বলেন, তাদের কেউ এ ঘটনায় হতাহত হননি। যেখানে ওই বোমা হামলা হয়েছে, সেটা মার্কিন বাহিনী নিয়ন্ত্রিত এলাকা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা ছবিতে ঘটনাস্থল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় লোকজনকে সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।

হামলা করেছে কারা

তালেবান কাবুলের দখল নেওয়ার পর থেকেই পশ্চিমা দেশগুলো নিজেদের লোকজনকে আফগানিস্তান সরিয়ে নিচ্ছে। আর সেই কাজটি হচ্ছে কাবুল বিমানবন্দর দিয়ে।

হাজার হাজার আফগানও দেশ ছাড়ার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে বিমানবন্দরের ভেতরে ও বাইরে অপেক্ষা করছেন প্রতিদিন।

এই নাজুক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএস সেখানে হামলা চালাতে পারে বলে খবর আসছিল গত কয়েক দিন ধরেই।

কাবুল বিমানবন্দর সন্ত্রাসী হামলার ‘উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের ওই এলাকা এড়িয়ে চলতে বলেছিল। তার মধ্যেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হামলা হল সেখানে। 

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ধারণা করছিলেন, ইসলামিক স্টেটের খোরাসান গ্রুপ (আইএসআইএস-কে) এর পেছনে থাকতে পারে।

রাতে টেলিগ্রামে আইএস এর মুখপত্র আমাক নিউজ এজেন্সির এক বার্তায় দাবি করা হয়,কাবুল বিমানবন্দরের হামলা তাদেরই কাজ। 

সেখানে বলা হয়, আইএস এর একজন আত্মঘাতী যোদ্ধা ব্যারন ক্যাম্পের পাশে একদল দোভাষীর ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়তে সক্ষম হয় এবং শরীরে থাকা বোমার বেল্টে বিস্ফোরণ ঘটায়।

আইএস এর বার্তায় বলা হয়, হতাহতদের মধ্যে তালেবানও আছে।