করোনাভাইরাসের উৎস নিয়ে ‘উপসংহারে আসতে পারেননি’ মার্কিন গোয়েন্দারা

করোনাভাইরাস মহামারীর উৎস নিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2021, 10:28 AM
Updated : 25 August 2021, 10:32 AM

তবে পরীক্ষাগারের দুর্ঘটনায়, না কি স্বাভাবিকভাবে প্রাণী থেকে মানুষে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটেছে, সে বিষয়ে তারা কোনো উপসংহারে আসতে পারেননি।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবদনে বলা হয়, মঙ্গলবার ‘ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স’ (ডিএনআই) এর পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্টের কাছে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করা হয়।

করোনাভাইরাসের উৎস নিয়ে তুমুল বিতর্কের মধ্যে তিন মাস আগে এ বিষয়ে গোয়ন্দা সংস্থাগুলোকে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বাইডেন।

কিন্তু চীনের উহান শহরের জীবাণু গবেষণাগারের তথ্য পর্যালোচনা করে এ ভাইরাস কোথা থেকে এসেছে সে প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়নি।

মধ্য চীনের উহান শহরে ২০১৯ সালের শেষ দিকে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। সেখান থেকে দ্রুত তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে কোভিড-১৯ নিয়ে আন্তর্জাতিক তদন্তে চীনের সহযোগিতা না করার বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, গোয়েন্দারা করোনাভাইরাসের উৎস নিয়ে উপসংহারে পৌঁছাতে না পারায় কাজটি আরও কঠিন হয়ে উঠল।

সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে কীভাবে এর শুরু হয়েছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

চীনের পরীক্ষাগারে ‘দুর্ঘটনাবশত’ এ ভাইরাস তৈরি হয়েছে- এমন তত্ত্বের বিষয়ে অনুসন্ধান চালাতে গোয়েন্দাদের চাপ দেওয়াসহ এ কাজে একটি গবেষণা দলও গঠন করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।

উদ্দেশমূলকভাবে করোনাভাইরাস সৃষ্টি করা হয়েছে, এমন তত্ত্ব পরে নাকচ করে দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এ ভাইরাস পরীক্ষাগারে গবেষণার সময় দুর্ঘটনাবশত ছড়িয়ে পড়েছে, না কি প্রাকৃতিকভাবে এর উৎপত্তি, সে বিষয়ে তারাও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি।

পরীক্ষাগার থেকে ছড়িয়ে পড়ার তত্ত্ব নিয়ে অনেক গবেষক প্রাথমিকভাবে সন্দেহ প্রকাশ করলেও এ বছর বেশ কয়েকজন বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য খোলামেলা কথা বলেন।

পরীক্ষাগার থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা পাওয়া যায়নি জানিয়ে গত মার্চে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া প্রতিবেদনেরও সমালোচনা করেন গবেষকদের কেউ কেউ।

ওই প্রতিবেদনের পর মহামারীর উৎপত্তি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আর কোনো অনুসন্ধানে চীন সরকার সহায়তা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানালে বাইডেন প্রশাসন সে সময় হতাশা প্রকাশ করেছিল।

চীনের ওই অবস্থানকে ‘একরোখা’ আখ্যায়িত করে এবং গোয়েন্দাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি হওয়ায় বিষয়টি পর্যালোচনা করে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় বাইডেন প্রশাসন।  

তবে বর্তমান এবং সাবেক কর্মকর্তারা এ বিষয়ে বারবার সতর্ক করে বলেছেন, সুনির্দিষ্টভাবে মহামারীর উৎস খুঁজে বের করা গোয়েন্দাদের নয়, বরং বিজ্ঞানীদের কাজ।

চলমান মহামারী এবং ভবিষ্যতে আবারও এমনটা ঘটার সম্ভাবনা কতেটা বুঝে উঠতে ‘ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স’ এর প্রধান এভ্রিল হাইনেসের তত্ত্বাবধানে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিজ্ঞানীদের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তখনই বলেছিলেন, এ বিষয়ে একটি সুনিশ্চিত উপসংহারে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ৯০ দিনের বেঁধে দেওয়া সময় যথেষ্ট নয়।

নিউ ইয়ক টাইমস জানিয়েছে, বাইডেনকে দেওয়া গোয়েন্দা প্রতিবেনটি এখনও গোপন রাখা হয়েছে এবং কর্মকর্তারাও তাদের অনুসন্ধানের বিষয়ে কোনো কথা বলছেন না। তবে এ সপ্তাহের শেষে কিছু তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে তারা জানিয়েছেন।   

হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জেন সাকি সোমবার বলেন, “যদি দীর্ঘ কিছু না হয়, তবে প্রকাশ করার মত একটি সংস্করণ তৈরি করতে সাধারণত কয়েক দিন সময় লাগে।”