শামসিয়া হাসানির ছবিতে আফগান নারীর শঙ্কা

তালেবান বাহিনী যখন আফগানিস্তানের বেশিরভাগ এলাকা দখল করে রাজধানী কাবুলের দিকে ধেয়ে যাচ্ছিল, শামসিয়া হাসানির টুইটার আর ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত হচ্ছিল তার আঁকা নতুন নতুন ছবি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2021, 09:36 AM
Updated : 17 August 2021, 07:57 PM

সেসব ছবিতে আছে কট্টর মৌলবাদী ইসলমী দল তালেবানের শাসনে ফেরার আতঙ্ক, ভবিষ্যত নিয়ে আফগান নারীদের দুশ্চিন্তার ছায়া। 

শামসিয়া হাসানি আফগানিস্তানের প্রথম নারী গ্রাফিতি শিল্পী। বিগত বছরগুলোতে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের বহু দেয়াল তিনি রাঙিয়ে তুলেছেন উজ্জ্বল গ্রাফিতিতে।

 

কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সহকারী অধ্যাপক শামসিয়া হাসানির স্বপ্ন ছিল, গ্রাফিতির মাধ্যমেই তিনি আফগান জীবনের ভয়ঙ্কর সব স্মৃতি মুছে দেবেন। কিন্তু সেই স্বপ্নে ফের হানা দিয়েছে তালেবান।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার যখন তালেবান বাহিনী কাবুলে প্রবেশ করল, শামসিয়া হাসানি প্রকাশ করলেন আকাশি বসনা এক মেয়ের ছবি, যে অন্ধকারে রক্তচক্ষু এক অস্ত্রধারী তালেবান যোদ্ধার সামনে ধরে আছে আলো।

 

তার আগে ১০ অগাস্ট দুঃস্বপ্ন নামে আরেকটি ছবি প্রকাশ করেন এই গ্রাফিতি শিল্পী। সেখানে তিনি এঁকেছেন সর্বাঙ্গ বোরকায় ঢাকা এক নারীর ছবি, যে দুই হাতে বুকের মধ্যে চেপে ধরে আড়াল করে রেখেছে তার প্রিয় পিয়ানো। তার পেছনেই দেখা যাচ্ছে অস্ত্রধারী তালেবান যোদ্ধাদের সারিসারি ছায়াচ্ছন্ন মুখ। 

১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত তালেবান শাসনামলে পুরুষের লিখিত অনুমতি ছাড়া নারীদের ঘরের বাইরে যাওয়া ছিল নিষিদ্ধ। সেই অনুমতি থাকলেও তাদের বের হতে হত সর্বাঙ্গ ঢাকা বোরখা পরে।

বয়ঃপ্রাপ্ত হলেই মেয়েদের স্কুলে যাওয়া ছিল নিষিদ্ধ, নারীদের চাকরি করারও সুযোগ ছিল না।

সেই তালেবান আমলে গান শোনা বা কোনো প্রাণীর ছবি আঁকাও ছিল নিষিদ্ধ। ছবির খোঁজে কাবুলের বইয়ের দোকানগুলোতে সে সময় নিয়মিত অভিযান চালানো হত। 

শরিয়া আইনের নামে দোররা বা চাবুক মারা, হাত-পা কেটে নেওয়া এবং প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝোলানো বা পাথর ছুড়ে হত্যার মত শাস্তি ছিল সেসব দিনের নিয়মিত ঘটনা।  

তালেবান আসার বহু আগে আফগান যুদ্ধের মধ্যেই কান্দাহার ছেড়ে ইরানে চলে গিয়েছিলেন শামসিয়া হাসানির পরিবার। ১৯৮৮ সালে তেহরানে তার জন্ম।

পরে পরিবার আফগানিস্তানে ফিরলে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলায় ডিগ্রি নেন এই শিল্পী। সেখানেই ড্রয়িং অ্যান্ড অ্যানাটমি ড্রয়িং বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন।

গ্রাফিতির পাশাপাশি স্ট্রিট আর্টকেও আফগানিস্তানে জনপ্রিয় করতে চেয়েছেন এই তরুণী। আর তার বেশিরভাগ ছবিতেই আছে আফগান নারীর কষ্টের গল্প, অথবা তাদের মুক্তি আর শান্তির আকাঙ্ক্ষা।

তার ভাষায়, আফগানিস্তানে একজন নারী হয়ে বড় হয়ে ওঠা মোটেও সহজ কিছু নয়। তাই তিনি গ্রাফিতির রঙের খেলায় ফুটিয়ে তুলতে চান নারীশক্তির আনন্দকে।