দাবানলে পুড়ছে ঘরবাড়ি, এথেন্সের শহরতলীতে রাতভর লড়াই

গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের উত্তরে অনিয়ন্ত্রিত একটি দাবানলের তাণ্ডবে কয়েক ডজন বাড়িঘর পুড়ে গেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 August 2021, 08:37 AM
Updated : 4 August 2021, 08:37 AM

৩০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ তাপদাহের মধ্যে ৮১টি পৃথক অগ্নিকাণ্ড মোকাবেলা করছে দেশটি। 

এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়েছে। 

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাঁচ শতাধিক দমকল কর্মী নয়টি হেলিকপ্টার, সাতটি এয়ারক্রাফট ও ৩০৫ জন পুলিশ সদস্যের সহায়তায় পারনিথা পর্বতের নিচের দিককার ঢালের ব্যাপক গাছপালাসমৃদ্ধ ভেরিমপপি ও অ্যাডামস শহরতলীর আগুন নেভাতে প্রাণপণ লড়াই করছিলেন।

গ্রিসের বেসামরিক সুরক্ষা উপমন্ত্রী নিকোস হারদালিয়াস বলেছেন, “দেশের জন্য খুবই সংকটময় দিন, চরম আবহাওয়ার কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় বনে পৃথক ৮১টি আগুনের খবর পেয়েছি আমরা,”

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর তাপমাত্রা এবং তীব্র বাতাস গ্রিসের বিভিন্ন অঞ্চলে দাবানল উসকে দিয়েছে। মঙ্গলবার দেশটির কোথাও কোথাও ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে বলেও রয়টার্স জানিয়েছে।

এথেন্সের উত্তরের অগ্নিকাণ্ড ভেরিমপপি, অ্যাডামস ও থ্রাকোমাকেদোনাস শহরের অসংখ্য বাড়ি পুড়িয়েছে, এখানকার বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে।

“সারারাত ধরে আমরা আমাদের লড়াই অব্যাহত রাখবো। জীবন বাঁচানোই আমাদের অগ্রাধিকার,” বলেছেন নিকোস।

কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে কাছাকাছি এলাকার সাবেক রাজকীয় স্থাপনা তাতোই থেকে মূল্যবান সবকিছু সরিয়ে নিয়েছে; বেসামরিক সুরক্ষা সেবা বিভাগ অলিম্পিক ভিলেজের বাসিন্দাদেরকে ঘর ছেড়ে দিতে বলেছে। ওই বাসিন্দারা রাষ্ট্রের খরচে সুনির্দিষ্ট কিছু হোটেলে থাকতে পারবেন।

শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে সাত জনকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছে।

এর আগে একটি সামার ক্যাম্প থেকে সব শিশুকে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং এথেন্সের ২০ কিলোমিটার উত্তরের ভেরিমপপি, অ্যাডামস ও থ্রাকোমাকেদোনাসের শহরতলী থেকে সবাইকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়।

ওই নির্দেশের পরও অনেকে বাগানে পানি ছিটানোর হোস পাইপ দিয়ে নিজেদের বাড়িঘর রক্ষার উদ্দেশ্যে রয়ে গেছেন।

দাবানল যতই বিস্তৃত হয়েছে, ততই বেশি সংখ্যক বাড়িঘরে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। অশ্বারোহী ক্লাবগুলো আগুনের হাত থেকে বাঁচাতে আস্তাবলে থাকা ঘোড়াগুলোকে ছেড়ে দিয়েছে।

এথেন্সের উত্তরে এই দাবানল এবং পেলোপোনেস উপদ্বীপ, এভিয়া ও কোস দ্বীপসহ অন্যান্য কয়েকটি এলাকার দাবানল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সমন্বয়সাধন করা দমকলের একটি পরিচালনা কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস।

তার কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “একাধিক জায়গায় (আগুন নেভানোর) লড়াইয়ে সম্ভাব্য সব উপায় ও সম্পদ মোতায়েন করা হয়েছে। সংকটাপন্ন এই সময়ে অগ্রাধিকার হচ্ছে মানুষের জীবন রক্ষা।”

এথেন্সের বৈদ্যুতিক গ্রিড পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান আইপিটিও বলেছে, আগুন গ্রিডের কিছু অংশের ক্ষতি করেছে, যার কারণে মেট্রোপলিটন এলাকার একাধিক অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

“কয়েক ডজন বাড়িঘর পুড়ে গেছে,” স্থানীয় ওপেন টিভিকে এমনটাই বলেছেন আচার্নেস অঞ্চলের সহকারী মেয়র মিচেলিস ভ্রেতস। তার পেছনের বাড়িঘর থেকে তখনও গাঢ় ধোঁয়া বেরিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছিল বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

দাবানলের কারণে ট্রেন যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়েছে, কর্তৃপক্ষ জাতীয় মহাসড়কের একটি অংশ বন্ধ করে দিতেও বাধ্য হয়েছে।

গ্রিসের প্রতিবেশী তুরস্ককেও মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা সাত দিন ধরে দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে লড়তে হচ্ছে। দেশটিতে এবারের দাবানল এরই মধ্যে অন্তত আট জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।