আফগানিস্তানে ৩ বড় শহর অবরোধ তালেবানের, তীব্র লড়াই

আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি বড় শহরের দখল নেওয়ার চেষ্টা করছে তালেবান বিদ্রোহীরা, এতে শহরগুলোকে ঘিরে তাদের সঙ্গে দেশটির সরকারি বাহিনীগুলোর লড়াই তীব্রতর হয়ে উঠেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2021, 02:15 PM
Updated : 31 July 2021, 02:30 PM

তালেবান যোদ্ধারা হেরাত, লশকর গা ও কান্দাহারের বিভিন্ন অংশে প্রবেশ করেছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।

সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আফগানিস্তান থেকে প্রায় সব বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে, এমন ঘোষণা আসার পর থেকেই তালেবান দেশটির গ্রামীণ এলাকাগুলোতে দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করতে শুরু করে।

সরকারি বাহিনীগুলো গুরুত্বপূর্ণ এই তিনটি শহর কতোক্ষণ ধরে রাখতে পারবে তা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই শহরগুলোর তাদের হাতছাড়া হলে সেখানে মানবিক সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

তালেবান যোদ্ধারা ইতোমধ্যেই ইরান ও পাকিস্তানের সঙ্গে থাকা লাভজনক সীমান্ত ক্রসিংসহ দেশটির অর্ধেক এলাকা দখল করে নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কান্দাহারের এক এমপি বিবিসিকে জানিয়েছেন, শহরটি পতনের গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে আছে, প্রায় লাখো মানুষ এরমধ্যেই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আর একটি মানবিক সংকট আসন্ন বলে মনে করা হচ্ছে। 

গুল আহমদ কামিন জানান, প্রতি ঘণ্টায় শহরটির পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠছে এবং শহরের ভেতরে চলা লড়াই ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র হয়ে উঠেছে।

এখন তালেবান কান্দাহারকে একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করছে আর তারা শহরটিকে তাদের অস্থায়ী রাজধানী বানাতে চায় বলে জানান তিনি। শহরটির পতন হলে এই অঞ্চলের পাঁচ থেকে ছয়টি প্রদেশ সরকারের হাতছাড়া হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন কামিন। 

তিনি জানান, তালেবান যোদ্ধারা শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় অবস্থান নিয়েছে আর তারা শহরে পুরোপুরি ঢুকে পড়লেও প্রচুর বেসামরিক লোকজন থাকায় সরকারি বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ভারি যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে না। 

পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর হেরাতের দক্ষিণাংশে তালেবান যোদ্ধারা প্রবেশ করাতে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই তীব্র হয়ে উঠেছে বলে টোলো নিউজের প্রতিবেদক জানিয়েছেন।  

শহরটির পাঁচটি পৃথক এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই চলার খবর পাওয়া গেছে। আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনীর সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র এখনও বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিমান হামলার সমর্থন নিয়ে সরকারি বাহিনী শহরটির বিমানবন্দরের আশপাশের এলাকাটি ফের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।

শুক্রবার এই বিমানবন্দরের কাছেই জাতিসংঘের একটি কম্পাউন্ডের বাইরে এক রক্ষী নিহত হন। জাতিসংঘের অভিযোগ, তালেবান ইচ্ছাকৃতভাবে হামলাটি চালিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শহরটির অল্প কয়েকটি এলাকা নিরাপদ রয়েছে এবং কিছু লোক নিজেদের রক্ষার জন্য অস্ত্র তুলে নিয়েছে।

১৯৮০ দশকে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করা সাবেক কমান্ডার ইসমাইল খান শহরটিকে রক্ষা করার জন্য একটি সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করেছেন বলে বিবিসি জানিয়েছে।

দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হেলমান্দের রাজধানী লস্কর গায়ে শুক্রবার দিবাগত রাতে বিদ্রোহীদের অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা সরকারি বাহিনী রুখে দেওয়ার পর তারা এখনও শহরটির কেন্দ্রস্থল থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

বিদ্রোহীদের উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে আফগান বাহিনীর কমান্ডার দাবি করেছেন। 

স্থানীয় সূত্রগুলো বিবিসিকে জানিয়েছে, শুক্রবার তালেবান প্রাদেশিক গভর্নরের দপ্তরের কাছে চলে এসেছিল কিন্তু তাদের প্রতিহত করা হয়।

মানবিক ত্রাণ সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, তালেবান তাদের আক্রমণ অব্যাহত রাখায় আসছে মাসগুলোতে দেশটিতে গুরুতর মানবিক সংকট দেখা দিতে পারে; এই মহামারী পরিস্থিতিতে ত্রাণ শিবিরগুলোতে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বাস্তুচ্যুত লোকজনের আশ্রয় নিলে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসহ সব ধরনের পরিষেবা অপ্রতুল হয়ে উঠবে বলে সতর্ক করেছে তারা।