গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ বিপদাপন্ন: ইউনেস্কো, মানতে নারাজ অস্ট্রেলিয়া

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের এতটাই অবনতি হয়েছে যে এটি এখন ‘বিপদাপন্ন’ তালিকায় স্থান পাওয়া উচিত, বলছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো। তবে অস্ট্রেলিয়া সরকার তা মেনে নিতে নারাজ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 June 2021, 04:56 PM
Updated : 22 June 2021, 04:56 PM

মঙ্গলবার ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি অভিযোগ করে বলেছে, গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের (বৃহৎ প্রবাল প্রাচীর) সুরক্ষায় অস্ট্রেলিয়া সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়নি। এতে অস্ট্রেলিয়া সরকার ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে রক্ষার জন্য সমুদ্রের পানিতে দূষণের পরিমাণ কমানোর যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল সে অনুযায়ী কাজ হয়নি বলেও অভিযোগ ইউনেস্কোর।

ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর ওই তালিকায় ফেলার সুপারিশ করেছে যেগুলো ‘বিপদাপন্ন’।

এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশমন্ত্রী সুসান লি বলেন, জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা অতীতের আশ্বাস থেকে সরে এসেছেন। অস্ট্রেলিয়া সরকার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে বিপন্নের তালিকাভুক্ত করার পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ জানানোর পরিকল্পনা করেছে বলেও জানান তিনি।

আগামী মাসে এ নিয়ে একটি বৈঠক হবে, যেখানে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। পরিবেশমন্ত্রী সুসান বলেন, ‘‘পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ আছে। রাজনৈতিক উদ্দেশেই একটি যথাযথ প্রক্রিয়াকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের বিষয়টি এখানে পরিষ্কার।”

চীনের নেতৃত্বে ১২ দেশ মিলে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি’ গঠিত হয়েছে। গত কয়েক বছরে চীনের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার বিরোধপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক বিরাজ করছে।

সুসান বলেন, ‘‘বিশ্বে যতগুলো রিফ বা প্রবালপ্রাচীর আছে তার সবগুলোর জন্যই জলবায়ু পরিবর্তন একমাত্র সবচেয়ে বড় হুমকি। আর বিশ্বে ৮৩টি প্রাকৃতিক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে। সেখানে শুধু অস্ট্রেলিয়ার কথা বলা কোনওভাবেই ন্যায়সঙ্গত নয়।”

তবে পরিবেশবাদী নানা সংগঠন বলছে, জাতিসংঘের এই সিদ্ধান্ত জলবায়ু পরিবর্তন রোধে অস্ট্রেলিয়া সরকারের দুর্বল ব্যবস্থাপনাকে সামনে নিয়ে এসেছে।

দ্য ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার-অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র বিষয়ক প্রধান রিচার্ড লেক বলেন, ‘‘ইউনেস্কো থেকে যে সুপারিশ করা হয়েছে তা স্পষ্ট এবং দ্ব্যর্থহীন ভাবে আমাদের সরকারের ব্যর্থতার কথা বলছে। অস্ট্রেলিয়া সরকার আমাদের অসাধারণ সব প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায়, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে সেগুলোর সুরক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।”

প্রায় দুই ‍হাজার তিনশ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। ‘বৈজ্ঞানিক এবং প্রাকৃতিকভাবে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ’ এই প্রবালপ্রাচীরকে ১৯৮১ সালে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান বলে ঘোষণা করা হয়।

২০১৭ ‍সালে ইউনেস্কো থেকে প্রথমবার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ ‘ঝুঁকির মধ্যে আছে’ বলে ঘোষণা করা হলে অস্ট্রেলিয়া সরকার এর সুরক্ষায় তিনশ কোটির বেশি অস্ট্রেলিয়ান ডলার ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়।

গত কয়েক বছরে দূষণের কারণে গ্রেট ব্যারিয়ার প্রণালীর অনেক কোরাল মারা গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়ণের কারণে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রাও বাড়ছে। এটাই প্রবাল প্রাচীরের কোরাল মৃত্যুর মূল কারণ।

২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার প্রবালপ্রাচীর বিষয়ক নিজস্ব কমিটিও গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের অবস্থা খারাপ থেকে খুব খারাপ অবস্থায় নামিয়ে দেয়।

এখন যদি গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে ইউনেস্কোর ‘বিপদাপন্ন’ বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় নামিয়ে দেওয়া হয়, তবে এই প্র্রথম কোনও প্রাকৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থান জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় স্থান পাবে।

কোনও বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের নাম ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকলে হুমকি মোকাবেলায় সেটি বন্ধ করে দেওয়া যায়।

যদি তাই হয় তবে পর্যটকদের জন্য গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত পর্যটন স্থানগুলোর অন্যতম এই গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ। কোভিড-১৯ মহামারীর আগে প্রচুর পর্যটক সেখানে ভ্রমণে যেতেন এবং এ থেকে অস্ট্রেলিয়ার বার্ষিক আয় সাড়ে ছয়শ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলারের বেশি ছিল।