চারটি এশিয়ান স্বর্ণপদক জিতেছিলেন এই দৌড়বিদ; ১৯৬০ সালের রোম অলিম্পিকে ৪০০ মিটার ফাইনালে চতুর্থ হন।
তার জীবনের গল্প ঠাঁই পেয়েছে রঙিন পর্দায়। ২০১৩ সালে ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ নামে বলিউডে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়, যার নাম ভূমিকায় ছিলেন ফারহান আখতার।
৯১ বছর বয়সী মিলখা কয়েকদিন আগেই তার ৮৫ বছর বয়সী স্ত্রী সাবেক ভলিবল অধিনায়ক নির্মল কৌরকেও মহামারীর কারণেই হারিয়েছেন।
গত মাসে কোভিড আক্রান্ত মিলখা শুক্রবার গভীর রাতে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় শহর চণ্ডিগড়ের একটি হাসপাতালে মারা যান।
স্বাধীন ভারতের প্রথম তারকা ক্রীড়াবিদ হিসাবে আখ্যায়িত এই খেলোয়াড়কে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
ব্রিটিশ ভারতের ছোট এক গ্রামে জন্ম হয় মিলখার। মুলতান প্রদেশের (যেটা এখন পাকিস্তানে) প্রত্যন্ত গ্রামে এই বালক ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় কীভাবে তার বাবা-মা ও সাত ভাইবোনকে হত্যা করা হয়েছিল তা প্রত্যক্ষ করেন।
শেষ নিঃশ্বাস ছাড়ার আগে তার বাবার শেষ কথাটি ছিল ‘ভাগ মিলখা ভাগ’, যেখান থেকে তার ছেলে জীবনের জন্য দৌড়ানোর অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন।
সেই ছেলে দৌড়ানো- প্রথমে নিজের জীবন বাঁচাতে এবং তারপরে পদক জিততে।
১৯৪৭ সালে ভারতে পৌঁছে অনাথ ছেলেটি ছোটখাটো অপরাধে লিপ্ত থাকে এবং এটা ওটা করে বেঁচে থাকে। সেনাবাহিনীতে জায়গা পাওয়ার পর তার জীবন পাল্টে যায়। সেখানেই তিনি নিজের ক্রীড়া সক্ষমতা আবিষ্কার করেন।
১৯৫৮ সালে ব্রিটেনের কার্ডিফের কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জিতেন মিলখা। রোম অলিম্পিকের ৪০০ মিটারে চতুর্থ হন।
১৯৬০ সালে তাকে পাকিস্তানের লাহোরে একটি আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক প্রতিযোগিতায় ২০০ মিটার ইভেন্টে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ১৯৪৭ সালে পালিয়ে আসার পর এর মধ্যে তিনি আর পাকিস্তানে ফিরেননি।
শুরুতে অস্বীকার করলেও শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানে গিয়েছিলেন মিলখা। স্টেডিয়ামে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের আবদুল খালিকের বিপুল সমর্থন থাকার পরেও প্রতিযোগিতায় জিতেন মিলখা। খালিক ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছিলেন।
ইভেন্ট শেষে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি জেনারেল আইয়ুব খান যখন প্রতিযোগীদের পদক দিচ্ছিলেন, তখন মিলখা ‘উড়ন্ত শিখ’ ডাকনামটি পান, যা তার জীবনের সঙ্গে গেঁথে গিয়েছিল।
“মিলখা সিং যদি আজ পুরো বিশ্বে ‘ফ্লাইং শিখ’ হিসাবে পরিচিত হয়, তার কৃতিত্ব জেনারেল আইয়ুব ও পাকিস্তানের।”
অলিম্পিকে পদক না পেলেও মিলখার একমাত্র ইচ্ছা ছিল ‘ভারতের হয়ে অন্য কেউ সেই পদক জিতুক’।
তিনি প্রতিদিন ছয় ঘণ্টা দৌড়াতেন বলে একবার বিবিসিকে বলেছিলেন মিলখা।
“আমার ঘামে বালতি না ভরা পর্যন্ত আমি থামতাম না। আমি নিজেকে এত চাপ দিতাম যে শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়ে হাসপাতালে যেতে হত। নিজেকে বাঁচাকে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতাম এবং আরও যত্নবান হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতাম। কিন্তু সেরে উঠে আবারও একই কাজ করতাম।”
তার জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্রটি ২০১৩ সালে যখন প্রকাশিত হল, মিলখা বিবিসিকে বলেন, এটি ‘পরবর্তী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে’।
“আমাদের সময়ে আমাদের কিছুই ছিল না। সেই দিনগুলিতে ক্রীড়াবিদ এবং খেলোয়াড়রা খুব বেশি অর্থ উপার্জন করতেন না। আমরা হাততালির জন্য কাজ করেছি, জনগণের প্রশংসা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে এবং প্রেরণা যুগিয়েছে। আমরা দেশের জন্য দৌড়েছি।”