মিয়ানমারে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের আহ্বান জানাল জাতিসংঘ

এবছরের সহিংস সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিক্রিয়া হিসেবে মিয়ানমারে অস্ত্র বিক্রির বন্ধের অভূতপূর্ব এক আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2021, 05:05 AM
Updated : 19 June 2021, 05:05 AM

শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহিত এক প্রস্তাবে দেশটির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক জান্তার প্রতি নিন্দাও জানানো হয় বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

অং সান সু চিসহ সব রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দাবির পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমাতে সহিংসতা না চালানোর আহ্বানও জানিয়েছে জাতিসংঘ।

এই প্রস্তাবের কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকলেও রাজনৈতিকভাবে এটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছে বিবিসি।

মিয়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রানার বারগেনার সাধারণ পরিষদকে বলেন, “সেদেশে একটি বড় ধরনের গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাটি বাস্তব। এক্ষেত্রে সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে ক্ষমতা জনপ্রতিনিধিদের কাছে ফিরিয়ে আনার সুযোগ ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে উঠছে।”

সাধারণ পরিষদে ১১৯ ভোটের সমর্থনে নিন্দা ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানানোর প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। একমাত্র বেলারুশ এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। এছাড়া মিয়ানমারে সবচেয়ে বড় দুই অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ রাশিয়া ও চীনসহ ৩৬টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল।

ভোটদানে বিরত থাকার কারণ হিসেবে কয়েকটি দেশ এটিকে ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট’ হিসেবে তুলে ধরেছে। কয়েকটি দেশ বলেছে, চার বছর আগে জন্মভূমি থেকে রোহিঙ্গাদের বিতারণের বিষয়টি প্রস্তাবে উল্লেখ না থাকায় তারা সমর্থন দেয়নি।

জাতিসংঘে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত উলুফ স্কুগ বলেন, “এই প্রস্তাব মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে বেআইনি ঘোষণা করেছে, জনগণের ওপর তাদের সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে এবং বিশ্বের চোখে তাদেরকে একঘরে করে দিয়েছে।”

তবে জাতিসংঘে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী রাষ্ট্রদূত চিয়াও মোয়ে তুন বলেন, তার ভাষায় ‘গুরুত্ব হারিয়ে ফেলা’ এই প্রস্তাব অনুমোদনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের দীর্ঘসূত্রতায় তিনি হতাশ।

সবশেষ সাধারণ নির্বাচনে কারচুপির অজুহাতে ঘটানো ১ ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের পর জান্তার হাতে আটক আছেন সেদেশের জনপ্রিয় নেত্রী অং সান সু চি। আদালতে সংক্ষিপ্ত উপস্থিতি ছাড়া তাকে দেখা বা তার বিষয়ে কিছু জানা যাচ্ছে না।

অভ্যুত্থানের পর সামরিক জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ নিষ্ঠুরভাবে দমন করে চলেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকারী, কর্মী ও সাংবাদিকদের আটক করা হয়েছে।

পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার (এএপিপি)-এর তথ্যানুযায়ী, মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের পর এ পর্যন্ত পাঁচ হাজার জনকে আটক করা হয়েছে এবং বিক্ষোভ দমন অভিযানে হত্যা করা হয়েছে ৮৬০ জনেরও বেশি মানুষকে।

গত মাসে, মিয়ানমারের জান্তার বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সাধারণ পরিষদকে একটি প্রস্তাব পাসের অনুরোধ জানায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, “রাষ্ট্রগুলোকে নিষেধাজ্ঞা মানতে আইনিভাবে বাধ্য করা না গেলেও এ ধরনের একটি প্রস্তাব উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক গুরুত্ব বহন করবে।”