সেনাবাহিনীর ওপর হামলা বন্ধের ঘোষণা মিয়ানমারের সশস্ত্র দলের

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে সাধারণের ঘরবাড়ি ও জানমালের ক্ষতি ঠেকাতে স্থানীয়দের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সংঘাতপূর্ণ কাইয়াহ রাজ্যে হামলা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির গণতন্ত্রপন্থি সশস্ত্র একটি দল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 June 2021, 09:06 AM
Updated : 16 June 2021, 09:06 AM

বুধবার রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, সশস্ত্র সংগঠন দ্য কারেন্নি ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স (কেএনডিএফ) এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনীর ওপর হামলা সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে।

বিবৃতিতে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে অনড় অবস্থান তুলে ধরে বলা হয়, “জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাচ্ছে কেএনডিএফ।”

মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় সশস্ত্র দলগুলোর একটি কেএনডিএফ। সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষে স্থানীয়দের ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি এক লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়।

কয়েকদিন আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাচেলে সেনাবাহিনীর ভারী অস্ত্র ব্যবহারের নিন্দা জানিয়ে সশস্ত্র দলগুলোর প্রতি সাধারণের ক্ষতি এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন।

এর আগে গণতন্ত্রপন্থি পিপল’স ডিফেন্স ফোর্সেস আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জান্তা সরকারের আহ্বানে সাড়া দেয়। তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, সেনাবাহিনী ভারী অস্ত্র নিয়ে হামলা অব্যাহত রাখায় সাধারণ মানুষ ঝুঁকিতে পড়েছে।

গত মে মাসে সশস্ত্র দল পিপল’স ডিফেন্স ফোর্সেস গঠন করার ঘোষণা দেয় দেশটির স্বঘোষিত জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি)। তাদের বেশিরভাগের সম্বল কেবলমাত্র শিকারের বন্দুক। গ্রেপ্তার বিক্ষোভকারীদের মুক্তির দাবিতে সীমান্তে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে যাচ্ছিল দলটি।

এসব বিষয়ে জানতে চেয়ে এনইউজির পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মঙ্গলবার ফোন ধরেননি বলেও জানিয়েছে রয়টার্স।  

গত নভেম্বরের নির্বাচনে ‘প্রতারণার মাধ্যমে’ অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) বড় ধরনের জয় পেয়েছে অভিযোগ করে ১ ফেব্রুয়ারি তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক বাহিনী।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এই অভিযোগ নাকচ করে আসছেন। কিন্তু মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নোবেলজয়ী ৭৫ বছর বয়সী সু চি ছাড়াও প্রায় চার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে সামরিক বাহিনী।

অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে জান্তাবিরোধী গণবিক্ষোভ। এসব বিক্ষোভ দমনে বলপ্রয়োগ করছে সেনাবাহিনী। এই প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়াচ্ছে গণতন্ত্রপন্থি বেশ কিছু সশস্ত্র সংগঠন।

আদালতে ‘আত্মবিশ্বাসী’ সু চি

এদিকে সু চিকে গত মঙ্গলবার দ্বিতীয়বারের মতে সশরীরে আদালতে হাজির করা হয়। সমর্থকরা বলছেন, তার রাজনৈতিক জীবনকে ধ্বংস করার জন্য মিথ্যা মামলা করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।     

মঙ্গলবার আদালতে কী হল সে বিষয়ে বিস্তারিত বলতে রাজি হননি সু চির আইনজীবী। তবে তার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভাল বলে জানিয়েছেন।

“তিনি আগের মতই প্রাণবন্ত আছেন। তাকে সুস্থ্ দেখা গেছে,” মন্তব্য করে সু চির আইনি দলের সদস্য মিন মিন সোয়ে বলেন, “আমরা কেবল বুঝেছি উনি দাঁত ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন। সেটা তিনি বলেছেন। তিনি না বললে আমরা জানতে পারতাম না। তিনি আগের মতোই দৃঢ় এবং আত্মবিশ্বাসী আছেন।”

এ আইনজীবী জানান, সেনা অভ্যুত্থানের পর জোটের পক্ষ থেকে বিদেশি দূতাবাস এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি জান্তা সরকারকে স্বীকৃতি না দেওয়ার আহ্বান জানানোয় ‘উসকানি দেওয়ার’ অভিযোগও আনা হয়েছে সু চির বিরুদ্ধে।