৪০ হাজার ডলার বৃত্তি পেয়েও ফিরিয়ে দিল মার্কিন কিশোরী

বদান্যতার এক নজির গড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের ফিচবার্গের ১৭ বছরের কিশোরী ভার্দা তেতেহ; ৪০ হাজার ডলারের মেধাবৃত্তি অর্জনের পর সেটা সে ফিরিয়ে দিয়েছে, যাতে তার অন্য কোনো সহপাঠী সেটা পায়, বৃত্তি যার আরও বেশি দরকার।

>> মারিয়া ক্র্যামারনিউ ইয়র্ক টাইমস
Published : 13 June 2021, 05:06 PM
Updated : 13 June 2021, 05:06 PM

মাত্র হাই স্কুল শেষ করেছে ভার্দা তেতেহ। ৪ দশমিক ৯ জিপিএ স্কোর আরও অনেক বৃত্তির জন্যই তাকে যোগ্য করে তুলেছে। উচ্চ শিক্ষার জন্য সে সুযোগ পেয়েছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে তার টিউশন ফি লাগবে না, থাকার ঘর ও হাতখরচও পাওয়া যাবে।

ফলে ফিচবার্গ হাই স্কুলের ‘দ্য জেনারেল এক্সেলেন্স প্রাইজ’ নামে পরিচিত ওই মেধাবৃত্তির খুব দরকার তেতেহর ছিল না।

তারপরও একজন পরামর্শদাতা শিক্ষক তাকে ওই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে বলেন। তার যুক্তি ছিল, দিনে পর দিন পরিশ্রম করে ওই বৃত্তি টিথের ‘পাওনা’ হয়েছে। তার কথায় বৃত্তির আবেদন করে ওই কিশোরী। 

প্রতি বছর স্থানীয় শিক্ষক, প্রশাসক ও পরামর্শকদের একটি কমিটি একজন ছাত্র ও একজন ছাত্রীকে ওই বৃত্তির জন্য নির্বাচিত করে। ৪ জুন স্কুলের সমাবর্তনের দিন বিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যক্ষ ঘোষণা করেন, এ বছরের ‘দ্য জেনারেল এক্সেলেন্স প্রাইজ’ অর্জন করেছে ভার্দা তেতেহ।

বৃত্তি গ্রহণ করার ১০ মিনিট পর আবার মঞ্চে ফিরে আসে তেতেহ, অনুষ্ঠানে বিঘ্ন ঘটানোর জন্য শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়।

তারপর মঞ্চে দাঁড়িয়ে সে বলে, “এই বৃত্তির জন্য আমি দারুণ কৃতজ্ঞ, কিন্তু আমি জানি আরও অনেকে আছে, এই বৃত্তি যাদের আমার চেয়ে বেশি দরকার। আমি খুবই কৃতজ্ঞ হব যদি কর্তৃপক্ষ এমন কোনো শিক্ষার্থীকে এই বৃত্তি দেয়, যে কমিউনিটির কোনো কলেজে পড়বে।”

বক্তব্য শেষ হতে না হতেই সহপাঠী এবং অনুষ্ঠানে সমবেতরা উঠে দাঁড়িয়ে তার প্রতি শুভেচ্ছা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তেতেহ বলেন, ভারমুক্ত হওয়ার আনন্দে তিনি আপ্লুত।

ডিস্ট্রিক্ট সুপারিনটেন্ডেন্ট বরার্ট জোকেলা বলেন, ওই অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পরেও তিনি তেতেহর তাৎক্ষণিক ঘোষণার ধাক্কা হজম করতে পারেননি।

গত সপ্তাহে বোস্টন গ্লোব এবং অন্যান্য স্থানীয় পত্রিকা এই খবর প্রকাশ করে এবং দ্রুত তা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশন নেটওয়ার্কগুলোর দৃষ্টি কাড়ে।

রবার্ট জোকেলা বলেন, “সবাই তার এই বদান্যতায় অভিভূত। আমরা যা দেখলাম, তা হলো বদান্যতার এক নির্দশন।”

ভার্দা তেতেহর পরিবার যখন ঘানা থেকে ফিচবার্গে এসে বসবাস শুরু করে, তখন তার বয়স আট বছর। এক সময়ের প্রাণচঞ্চল ফিচবার্গ তখন ম্রিয়মান। সেখানকার ৬০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীকে ‘আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া’ হিসেবে চিহ্নিত করে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ৬৭ শাতাংশকে বর্ণনা করা হয় ‘অভাবী’ হিসেবে।

ফিচবার্গ হাই স্কুলের অধ্যক্ষ জেরেমি রোচ বলেন, তার বিদ্যালয়ের এক হাজার ৩০০ শিক্ষার্থীর ৭৫ শতাংশই অশেতাঙ্গ। পাস করার পর ৪০ শতাংশই ভর্তি হয় কমিউনিটির বিভিন্ন কলেজে। তাদের একটি বড় অংশই হয়ত পরিবারের প্রথম সদস্য, যে হাই স্কুলের গণ্ডি পেরিয়েছে।

ভার্দা তেতেহর বয়স যখন ৯ বছর, তখন তার মা নিজেই ম্যাসাচুসেটসের মাউন্ট ওয়াচুসেট কমিউনিটি কলেজে ভর্তি হন।

তেতেহ বলে, তার মা বুঝতে পেরেছিলেন যে এই দেশে শিক্ষিতদের জন্য অনেক সুযোগ রয়েছে। তিনি সপ্তাহে ৮০ ঘণ্টা কাজ করেও বিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করেছেন।

মায়ের সেই চেষ্টা আর উদ্যোমই তেতেহকে অনুপ্রাণিত করেছে। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা বাড়াতে সে আগেভাগেই স্কুলে যেত এবং ছুটি হওয়ার পরেও স্কুলে সময় কাটাত। তার মা নিয়মিত তাকে লাইব্রেরিতে নিয়ে যেতেন, এভাবেই তার ভেতরে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে।

ছাত্রী ভার্দা তেতেহর এই সিদ্ধান্তে অভিভূত হলেও ‘অবাক হননি’ বলে জানালেন স্কুলের অধ্যক্ষ জেরেমি রোচ।  তিনি জানতেন, তেতেহ ‘এমনই’।

তেতেহ এখন রসায়ন নিয়ে পড়ার পরিকল্পনা করেছে, ভবিষ্যতে সে একজন চিকিৎসক হতে চায়। যারা কলেজে পড়ার খরচ বহনে সক্ষম নয়, সেই সব অভিবাসী শিক্ষার্থীর জন্য একটি আলাদা বৃত্তি চালু করারও স্বপ্ন দেখে এই কিশোরী।

এখন তেতেহ এবং তার অধ্যক্ষ রোচ ওই বৃত্তির অর্থ কীভাবে পুনর্বিতরণ করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত তাদের পরিকল্পনা, কমিউনিটি কলেজের খরচ চালাতে যেসব শিক্ষার্থীর সাহায্য দরকার, তেমন দুজনকে বৃত্তিটি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।