ইসরায়েল নিয়ে ‘আক্রমণাত্মক’ মন্তব্যের পক্ষেই যুক্তি ইলহান ওমরের

যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলকে হামাস ও তালেবানের সঙ্গে ‘একই পাতে ফেলার’ অভিযোগ তুলে ডেমোক্রেট দলের সহকর্মীরা তিরস্কার করার পর এর পাল্টা জবাব দিয়েছেন একই দলের কংগ্রেস সদস্য ইলহান ওমর।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2021, 06:29 AM
Updated : 11 June 2021, 06:29 AM

বিবিসি জানিয়েছে, ডজনখানেক ইহুদি আইনপ্রণেতা ইলহান ওমরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ‘তার বক্তব্য স্পষ্ট’ করতে, কিন্তু মিনেসোটার এই প্রতিনিধি তাদের ওই ‘বক্রোক্তি’র সমালোচনা করেছেন।

ইসরায়েলকে নিয়ে সমালোচনা করায় এর আগেও ইলহান ওমরকে নিজ দলের সদস্যদের মাঝেই বিরূপ পরিস্থিততে পড়তে হয়েছে।

ইসরায়েলকে সমর্থন করার পেছনে অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত- এমন মন্তব্য করায় ২০১৯ সালে তাকে দুঃখ প্রকাশ করতে বাধ্য করা হয়।

সোমবার এক টুইট বার্তায় ওমর লেখেন, “যুক্তরাষ্ট্র, হামাস, ইসরায়েল, আফগানিস্তান ও তালেবানের অভাবনীয় অত্যাচার দেখতে হয়েছে আমাদের। মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার সব ভুক্তভোগীর জন্য একই ধরনের জবাবদিহিতা ও বিচার থাকতে হবে।”

এই টুইটের সঙ্গে প্রতিনিধি পরিষদের একটি কমিটির শুনানিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেনকে তার প্রশ্ন করার একটি ভিডিও যুক্ত করেন ওমর।

মধ্যপ্রাচ্যে ইসলায়েল ও হামাসের লড়াই অবসানের সপ্তাহখানেক না পেরোতেই এই বিতর্ক দেখা দিল।

যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী তালিকায় হামাস ও তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলে নাম যুক্ত করায় সহকর্মী ডেমোক্রেটদের কয়েকজন ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

বুধবার এ প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে ক্ষুব্ধ ওই ডেমোক্রেটরা লেখেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে হামাস ও তালেবানের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা একইসঙ্গে আপত্তিজনক এবং ভুলদিকে পরিচালিত করার সামিল।”

এদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নিউ ইয়র্কের ডেমোক্রেট নেতা জেরি ন্যাডলার।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “আইনের শাসনে পরিচালিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত অমর্যাদাকর সংস্থাগুলোর পার্থক্য উপেক্ষা করা একজন ব্যক্তির প্রস্তাবিত যুক্তিকে তুচ্ছ করে এবং তার গভীরে থাকা কুসংস্কারকে প্রতিফলিত করে। অসত্য সমতুল্যতা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে আড়াল পেতে সাহায্য করে।”

এর জবাবে বৃহস্পতিবার সোমালিয়ায় জন্ম নেওয়া সাবেক শরণার্থী ইলহান ওমর সহকর্মীদের ওই দলটিকে পাল্টা আঘাত করে বক্তব্য দেন। তাদের বক্তব্যকে ‘লজ্জাজনক’ আখ্যা দেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ‘ইসলামভীতি বক্রোক্তি’তে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ আনেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রে হাতেগোণা নির্বাচিত কয়েকজন মুসলিম কংগ্রেস সদস্যদের একজন এই নারী টুইট বার্তায় লেখেন, “আমার সহকর্মীদের এই আচরণ লজ্জাজনক। যখন সমর্থন দরকার হয় তখন তারা আমাকে ফোন করেন। আর এখন তারা বিবৃতি দিয়ে আমার কাছে ‘ব্যাখ্যা চাইছেন’ অথচ ফোন করেননি।”

“ইসলামভীতি যুক্ত বক্রোক্তির এই বিবৃতি আক্রমণাত্মক। এই চিঠির গায়কদের ধারাবাহিক নিপীড়ন এবং নিশ্চুপ করিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া অসহনীয়।” 

তবে এই লড়াইয়ে ওমরের পাশে দাঁড়িয়েছেন তার দলের নারী সহকর্মী আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ। দুজনকেই ডেমোক্রেট দলের কথিত বামপন্থি ‘স্কোয়াড’ এর সদস্য বিবেচনা করা হয়।

ওকাসিও-কর্টেজ টুইট বার্তায় লিখেছেন, “আমাদের ককাস থেকে ইলহান ওমরের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অপরাধী বানানো, ইচ্ছাকৃত চরিত্রহনন, এবং প্রকাশ্যে লক্ষ্য বানানোর এই প্রক্রিয়া দেখে খুবই অসুস্থ ও ক্লান্ত বোধ করছি।”

“ব্যক্তিগত যোগাযোগের পরিসর এড়িয়ে এবং তাকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে সংবাদ পরিবেশনের সুযোগ করে দিয়ে তাকে কত বড় বিপদে ফেলা হয়েছে সে বিষয়ে তাদের কোনো ধারণাই নেই।” 

বৃস্পতিবার বিকালের দিকে ইলহান ওমর একটি বিবৃতি দেন, সেখানে বলা হয়, তার উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) উপস্থাপিত সুনির্দিষ্ট ঘটনাগুলো নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনকে প্রশ্ন করা।

ডেমোক্রেট দলের কংগ্রেস সদস্যদের নেতৃত্বের কাছে ইলহান ওমর বারংবার মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠছেন। ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড নিয়ে তার মনোভাবের প্রতি দলের নির্বাচিত সদস্যদের সহমত থাকলেও তার চাঁছাছোলা মন্তব্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমাদরযোগ্য নয় তাদের কাছে।

ইলহান ওমর কয়েকবারই স্পষ্ট করেছেন যে তার এই মন্তব্য সুনির্দিষ্টভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মামলাগুলোর ভিত্তিতেই করা, কিন্তু তাতে মন ভেজেনি দলের অনেক সদস্যেরই। অতীতের মন্তব্যগুলোর কারণেই এই মনোভাবের শিকার হয়েছেন ওমর।

দলের অভ্যন্তরের অশান্তি মিটমাট করার আহ্বান জানিয়ে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি চেম্বারের কমিটিগুলোর নেতাদের সঙ্গে একটি বিরল যৌথ বিবৃতি জারি করেছেন। জ্যেষ্ঠ ডেমোক্রেট নেতাদের জারি করা ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে হামাস ও তালেবানের কোন নৈতিক সমতুল্যতা নেই- এ বিষয়ে কংগ্রেসওম্যান ওমরের স্পষ্ট বক্তব্যকে আমরা স্বাগত জানাই।”