সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকছে মিয়ানমারের যোদ্ধারা, উদ্বিগ্ন ভারত

মিয়ানমারে জান্তা সরকারের দমনাভিযানের মুখে হাজার হাজার মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে ঢুকছে। তাদের মধ্যে অনেক সময় ঢুকে পড়ছে গণতন্ত্রপন্থি যোদ্ধারাও। এ নিয়ে উদ্বেগে আছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা।

>>রয়টার্স
Published : 10 June 2021, 06:09 PM
Updated : 10 June 2021, 06:09 PM

তাদের আশঙ্কা, অঞ্চলটি মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি কর্মীদের সক্রিয়তার মঞ্চ হয়ে উঠতে পারে এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

ভারতের মিজোরাম, মনিপুর ও নাগাল্যান্ড রাজ্যে বর্তমানে মিয়ানমারের প্রায় ১৬ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়ে আছে। নাগরিক সমাজ ও সরকারি কর্মকর্তাদের ধারণা, আগামী কয়েক মাসে এ সংখ্যা আরও বাড়বে।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সবচেয়ে বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে মিজোরামে। সেখানে সীমান্তবর্তী তিয়াউ নদী পেরিয়ে গভীর জঙ্গলে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের মধ্যে ঢুকে পড়া গণতন্ত্রপন্থি যোদ্ধাদের ওপর কড়া নজর রাখছে কর্তৃপক্ষ।

রাজ্য সরকারের এক উপদেষ্টা বলেন, “আমরা বিষয়টি খুব নিবিড়ভাবে নজর রাখছি। কিছু দিন আগে স্থানীয় ভারতীয়দের সহযোগিতায় মিয়ানমারের কয়েকজন যোদ্ধা সীমান্ত পেরিয়ে এসেছিলেন। তবে পরে তারা ফিরে গেছেন।”

“আমরা মিজোরামে তাদেরকে কখনও প্রশিক্ষণ নিতে দেব না। মিজোরামে সমস্যা তৈরি হলে শরণার্থীরা বিপাকে পড়বে।”

রাজ্যের পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রতিরোধ সংগ্রামের এক সদস্য জানান, মে মাসের শুরুতে মিয়ানমারের অন্তত ৫০ জন মানুষ মিজোরামে একটি প্রশিক্ষণ শিবির গড়ে তুলেছিল।

যদিও চাম্পাই জেলায় স্থাপিত ওই শিবিরে অস্ত্রের ব্যবহার ছিল না। ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনীর তল্লাশির পর শিবিরটি ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর সেই শিবিরের সব তরুণ মিয়ানমারে ফিরে যায়।

মিয়ানমারে গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই দেশটিতে আন্দোলন-বিক্ষোভ চলছে। এ আন্দোলন দমন করতে গিয়ে অন্তত ৮৫০ জনকে হত্যা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।

জান্তার বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠা মানুষেরা সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। কয়েকটি রাজ্যে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জোর লড়াই চলছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় মিলিশিয়াদের বেশ কয়েকটি তুমুল লড়াই হয়েছে ভারতের সীমান্তবর্তী চিন রাজ্যে।

সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির দল এনএলডি’র এক আইনপ্রণেতা জানান, চিন রাজ্যের কয়েকজন প্রতিরোধ যোদ্ধা ভারত থেকে এবং রাখাইন রাজ্যের আরাকান আর্মির কাছ থেকে অস্ত্র পেয়েছেন। এতে ওই অঞ্চলে গোপন অস্ত্র ব্যবসা বাড়ারই আলামত পাওয়া যাচ্ছে।

মিয়ানমারের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের শিবির সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মিজোরামের এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “এই মানুষগুলো স্বভাবতই জান্তার বিরুদ্ধে লড়তে চায়। আমার মতে, তারা ভারত থেকে অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করতে পারে।”

ভারতের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলছেন, মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে দিল্লির শাসনবিরোধী অনেক গোষ্ঠীও দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় আছে। এই গোষ্ঠীগুলো সীমান্তের দুই পারেই তৎপর। মাদকের কারবার থেকে মুনাফা করে থাকে এসব গোষ্ঠী।

নয়া দিল্লিতে ভারত সরকারের এক ঊধ্র্বতন কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা সীমান্ত পেরিয়ে আসতে থাকলে বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগের। কারণ, তা হবে নাগা ও মনিপুরের বিদ্রোহীদের জন্য অক্সিজেন জোগানোর সামিল। মিয়ানমার-ভারত সীমান্তে প্রায় দুই ডজন সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রিয় আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তবে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের মুখপাত্রের মন্তব্য জানতে রয়টার্সের পক্ষ থেকে ফোন করা হলে তিনি কোনও জবাব দেননি।