ডেঙ্গুর প্রকোপ ৭৭% কমায় ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত মশা: গবেষণা

ব্যাকটেরিয়া দিয়ে মশাকে সংক্রমিত করে ডেঙ্গু ভাইরাসকে কাবু করার এক যুগান্তকরী পরীক্ষায় দেখা গেছে, এতে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ ৭৭% কমানো সম্ভব হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2021, 02:02 PM
Updated : 10 June 2021, 02:02 PM

বিবিসি জানায়, ইন্দোনেশিয়ার ইয়োগিয়াকার্তা শহরে এ পরীক্ষা চালানো হয়েছে। ডেঙ্গু ভাইরাস নির্মূলের আশা নিয়ে আরও বড় পরিসরে গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

‘দ্য ওয়ার্ল্ড মস্কুইটো প্রোগ্রাম’ বলছে, বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গু সংক্রমণ রোধে কার্যকর সমাধান হতে পারে এই নতুন পদ্ধতি। গবেষকরা বুধবার ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে’ এ নিয়ে তাদের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।

৫০ বছর আগে খুব অল্পসংখ্যক মানুষ ডেঙ্গু রোগের কথা শুনেছিল। কিন্তু এখন ডেঙ্গু ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে গেছে। এ রোগ ছড়ানোর জন্য দায়ী এডিস ইজিপ্টি নামের মশা।

১৯৭০ সালে কেবল নয়টি দেশে ডেঙ্গু রোগের ভয়াবহ প্রকোপ ছিল। আর এখন বছরে ৪০ কোটি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়।

ডেঙ্গুকে “ব্রেক-বোন ফিভার” ও বলা হয়। কারণ এই ভাইরাসে সংক্রমিতরা পেশী এবং হাড়ে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন।

শত্রুকে ধ্বংস করতে আরেক শত্রু:

গবেষকরা পরীক্ষায় ‘ওলবাকিয়া’ নামের ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমিত মশা ব্যবহার করেছেন। গবেষক কেটি আন্দ্রেজ এই ব্যাকটেরিয়াকে ‘প্রাকৃতিকভাবে অলৌকিক’ ব্যাকটেরিয়া বলে বর্ণনা করেছেন।

ওলবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া মশাদের কোনও ক্ষতি করে না। তবে এই ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব থাকলে মশার দেহে ভাইরাসরা তেমন সুবিধা করতে পারেনা, বাধা পায় বংশ বিস্তারেও ৷ ফলে পরবর্তীতে মশার কামড় থেকে ডেঙ্গু, হলুদ জ্বর কিংবা জিকার মতো ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।

ছবি-স্ক্রিনশট: বিবিসি

যেভাবে চালানো হয়েছে গবেষণা:

পরীক্ষামূলক এই গবেষণায় মশার ৫০ লাখ ডিম ওলবাকিয়া ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমিত করা হয়। এরপর প্রতি দুই সপ্তাহে শহরের বালতির পানিতে ডিমগুলো রাখা হত।

এই পদ্ধতিতে সংক্রমিত মশার সংখ্যা বাড়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগে মোট ৯ মাস। ইয়োগাকার্তা শহরকে মোট ২৪ টি অঞ্চলে ভাগ করে এসব এলাকায় সংক্রমিত মশার অর্ধেক ছেড়ে দেওয়া হয়।

নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণার ফলে দেখা গেছে, এতে ডেঙ্গু সংক্রমণ ৭৭ শতাংশ কমেছে। আর ৮৬ শতাংশ রোগীর হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি।

কেটি আন্দ্রেজ বিবিসি-কে বলেছেন, “পরীক্ষার এ ফল খুবই উৎসাহব্যাঞ্জক। আমরা যা আশা করেছিলাম, ফল তার চেয়েও ভাল।”

এই কৌশল এতটাই সফল হয়েছে যে, পুরো শহরজুড়ে এই মশাগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ডেঙ্গু নির্মূলের লক্ষ্য নিয়ে ইয়োগাকার্তার আশেপাশের এলাকায়ও এ প্রকল্প শুরু করা হয়েছে।

ওয়ার্ল্ড মস্কুইটো প্রোগ্রামের কার্যকারিতা যাচাই বিষয়ক পরিচালক ড. কেটি আন্দ্রেজ বলেন, “গবেষণার ফল যুগান্তকরী। বিশ্বজুড়ে বড় বড় শহরগুলোতে ব্যাপক পরিসরে এই উদ্যোগ নেওয়া হলে আরও ভাল ফল পাওয়া যাবে বলে আমরা মনে করি। বিশেষ করে যেসব জায়গায় ডেঙ্গু বড় ধরনের স্বাস্থ্যসংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে সেইসব স্থানে এটি কাজে আসবে।”

ডেঙ্গুবাহী মশা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলা গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতির এ গবেষণা এক মাইলফলক। ডিজিজ মডেলিং স্টাডিজেও দেখা গেছে, ওলবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া দিয়ে ডেঙ্গু জ্বর পুরোপুরিই প্রতিরোধ করা যায়।

বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডেভিড হামার বলেছেন, জিকা, হলুদ জ্বর ও চিকুনগুনিয়ার মতো রোগের ক্ষেত্রে এ গবেষণাপদ্ধতি কার্যকর হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে। ডেঙ্গুর মতো এই রোগগুলোও মশার কামড় থেকে ছড়ায়।