রমজান মাস শেষে বিশ্বজুড়ে ঈদ উদযাপিত হলেও গত সপ্তাহে সেই উৎসব ঠিকঠাক করতে না পারা গাজার অনেক বাসিন্দাকেই দেখা গেল শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে রাস্তায় নেমে এসে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ১১ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাত শেষে আসা যুদ্ধবিরতির ঘোষণায় উল্লাস প্রকাশ করতে।
গভীর রাতে শহরটির বিভিন্ন অংশে আরবিতে স্লোগান উঠল, “আল্লাহ মহান, তাকে ধন্যবাদ।”
প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে গাড়ির ভিড়, হর্নে কানে তালা লেগে যাওয়ার দশা, জানালা দিয়ে উল্লসিত মানুষের পতাকা উড়ানো- আগের সব যুদ্ধবিরতি বা বন্দি বিনিময়ের সময়ের মতো এবারও গাজাকে এমন উৎসবমুখরই দেখা গেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর শহরটির বিভিন্ন মসজিদের লাউডস্পিকারে হামাস যোদ্ধাদের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। ঘোষিত হয় ‘সোর্ড অব জেরুজালেম যুদ্ধে দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিজয়’।
উল্লসিত অনেককে দেখা যায় শূন্যে গুলি ছুড়তে। কেউ কেউ ব্যস্ত শব্দ বোমা ফাটাতে কিংবা আতশবাজি পোড়াতে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবারের ১১ দিনের সংঘর্ষ ২৩২ ফিলিস্তিনির প্রাণ কেড়ে নিয়েছে; এদের মধ্যে আছে ৬৫টি শিশুও। ইসরায়েলি কামানের গোলা ও বিমান হামলায় আহতও হয়েছে ২ হাজারের কাছাকাছি।
গাজার নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৬০ জনই হামাসের যোদ্ধা ছিল বলে দাবি ইসরায়েলের।
তাদেরও প্রাণহানি হয়েছে। হামাসের রকেটে ১২ ইসরায়েলি নিহত ও কয়েকশ আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে তেল আবিব। রকেট হামলার কারণে সৃষ্ট আতঙ্ক এবং ইসরায়েলিদের দৌড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার ভিডিও দেখা গেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও।
গাজার তেল আল-হাওয়া এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, তারা তাদের বিপদমুক্তি ও ‘বিজয়’ উদযাপন করছেন।
“দখলদারদের বিরুদ্ধে এ এক অসাধারণ জয়। আমাদের প্রতিরোধ যোদ্ধারা তাদেরকে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করেছে। আজ থেকেই ঈদ শুরু হচ্ছে। অনেকে ঘরবাড়ি ও আত্মীয়স্বজন হারিয়েছেন। তা সত্ত্বেও আমরা উৎসব করবো,” বলেছেন বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ উৎসবে শামিল হওয়া ৩০ বছর বয়সী আহমেদ আমের।
তবে এ উল্লাসের মধ্যে আছে সতর্কতাও। যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে যুদ্ধবিরতি। দীর্ঘদিন ধরে চলা উত্তেজনা তো যে কোনো মুহুর্তেই নতনু সংঘাত-সংঘর্ষে মোড় নিতে পারে।
একে-৪৭ বন্দুক হাতে থাকা একজন যেমন বললেন, “আমাদের আঙ্গুল এখনও ট্রিগারে, আমরা ফের যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। তবে এখন আমরা আমাদের জনগণের সঙ্গে আনন্দ উদযাপন করবো।”
কেবল গাজা-ই নয়, উল্লাস দেখা গেছে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকা শহর রামাল্লাতেও। শুক্রবার রাতে শহরটির সড়কে নেমে আসা কয়েকশ মানুষ স্লোগানে বলেছেন, “মনেপ্রাণে আমরা তোমার সঙ্গেই আছি, গাজা।”
তার ধারাবাহিকতায় গাজা থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে হামাস রকেট ছুড়লে বেধে যায় সংঘর্ষ; যে সংঘর্ষ থামাতে বিভিন্ন দেশের একের পর এক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা হালে পানি না পেলেও শেষ পর্যন্ত মিশরের মধ্যস্থতায় আসে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা।
ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়াকে নিজেদের ‘বিজয়’ হিসেবে দেখছে হামাস।
দলটির এক নেতাকে উদ্ধৃত করে বিবিসি জানিয়েছে, এটা ফিলিস্তিনি জনগণের ‘বিজয়’ এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘পরাজয়’।
হামাস নেতারা এও বলেছেন, ঘোষণা এলেও যুদ্ধবিরতি চুক্তির খুটিনাটি চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা সতর্ক অবস্থায় থাকবেন।
মিশরের প্রেসিডেন্ট আবুল ফাত্তাহ সিসিকে উদ্ধৃত করে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি দুই পক্ষ মানছে কি না, তা পর্যবেক্ষণের জন্য মিশরীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন যাচ্ছেন।
মিশরের পাশাপাশি কাতার এবং জাতিসংঘও দুই পক্ষকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানোর ভূমিকায় ছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি।