সেরাম সিইওর কথায় টিকা রপ্তানির কথা ফুটল না

মহামারীতে বিপর্যস্ত ভারতে ভাইরাসের টিকা সঙ্কটে ক্ষোভ ও সরকারের তুমুল সমালোচনার পাশাপাশি রপ্তানি নিয়েও যখন সোচ্চার সবাই, তখন বাংলাদেশও দেশটি থেকে টিকা পেতে জোরালো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2021, 06:35 PM
Updated : 18 May 2021, 06:37 PM

মঙ্গলবার দ্রুত টিকা পাঠাতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ফোন করেন।

ওই দিনই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা উৎপাদকারী সেরাম ইন্সটিটিউট অব ইনডিয়ার (এসআইআই) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদর পুনাওয়ালা ব্যাপক সমালোচনার মুখে রপ্তানির বিষয়ে তার অবস্থান তুলে ধরে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

তিনি ভারতের চাহিদা আগে পূরণের কথা বলায় বাংলাদেশের মতো যেসব দেশ টিকা আশায় রয়েছে, তাদের অনিশ্চয়তা কাটার কোনো ইঙ্গিত মিলছে না। 

বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা কোভিশিল্ড। দুই চালান পাঠানোর পর বাংলাদেশকেও টিকা দিতে পারছে না বিশ্বের সবচেয়ে বেশি টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।

লন্ডন থেকে দেওয়া বিবৃতিতে আদর পুনাওয়ালা বলেন, “তার প্রতিষ্ঠান ভারতের মানুষের জীবনের বিনিময়ে কখনও টিকা রপ্তানি করেনি।“

বিশ্বের ৬০ দেশে টিকা সরবরাহ করার চুক্তি রয়েছে তার কোম্পানি সেরামের।

৪০ বছর বয়সী এই ব্যবসায়ী রপ্তানি নিয়ে অব্যাহত সমালোচনার মুখে ভারতীয়দের ভ্যাকসিন না দিয়ে কেন রপ্তানি করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

তিনি বলেন, বিশাল জনগোষ্ঠীর কারণে ভারতের টিকাদান কর্মসূচি দুই বা তিন মাসে শেষ করা যাবে না।

এ জন্য দীর্ঘ সময় লাগবে মন্তব্য করে তিনি মহামারী মোকাবেলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পরামর্শ দেন।

বিবৃতিতে কোভিশিল্ড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটির প্রধান এই ব্যক্তি বলেন, যেসব দেশে টিকা ও ওষুধ রপ্তানি করা হয়েছে, ভারত এখন সেসব দেশ থেকে সহায়তা পাচ্ছে।

চারিদিক থেকে প্রশ্নের মুখে কোন পরিস্থিতিতে টিকা রপ্তানি করা হয়েছিল সেই প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আদর পুনাওয়ালা গত বছর মহামারীর প্রথম দিকে তার দেশের সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দেন।

আদর পুনাওয়ালা

তিনি বলেন, “জানুয়ারিতে টিকা দেওয়া যখন শুরু হয়, তখন ভারতে মজুদের পর মজুদ ছিল। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল মহামারীর অন্য সময়ের চেয়ে একদম সর্বনিম্নে। টিকা কর্মসূচিও দারুণভাবে শুরু হয়েছিল।

“একই সময়ে অনেক দেশ খুবই সঙ্কটের মধ্যে পড়েছিল। তারা সাহায্যের জন্য খুবই আকুতি করছিল। সরকারও যতটুকু সহায়তা করা সম্ভব, ততটুকুর জন্য হাত বাড়িয়েছিল।“

মহামারী একই ভৌগলিক ও রাজনৈতিক সীমানা বা পরিসরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দুনিয়াজোড়া এই মহামারীতে সবাই যতক্ষণ না এই ভাইরাসকে পরাজিত করতে পারবে ততক্ষণ কেউ আমরা একাই নিরাপদ থাকতে পারব না।“

লন্ডন থেকে সেরাম ইন্সটিটিউটের এই বিবৃতি পাঠানো হয়। টিকা নিয়ে আগ্রাসী চাপের কারণে এপ্রিলে ভারত ছেড়ে তিনি সেখানে যান।

করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে সরকারিভাবে তার ওপর হামলার আশঙ্কা থেকে এপ্রিলে আদর পুনাওয়ালাকে দেওয়া ‘ওয়াই’ ক্যাটাগরির নিরাপত্তায় সব সময় থাকছে ৪/৫ জন কমান্ডো।

তবুও তিনি ভারতে ফেরা বিলম্বিত করেন। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেশে ফিরতে পারেন বলে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এনডিটিভি লিখেছে, সেরাম ইন্সটিটিউট প্রধানের বিবৃতি এমন সময় দেওয়া হলো যখন বিরোধী দল ব্যাপক সমালোচনায় সোচ্চার। দিল্লিসহ অনেক রাজ্য টিকা কর্মসূচি চালু রাখতে পারেনি।

চলতি সপ্তাহের ছুটির আগে পুরো দিল্লি নরেন্দ্র মোদী বিরোধী পোস্টার ছেয়ে যায়। এগুলোতে টিকা রপ্তানির জন্য তার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। এ জন্য ১৭ জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়।

রাহুল গান্ধী একাধিক টুইটে সমালোচনায় ভাসিয়ে দিয়েছেন সরকারকে।

দ্বিতীয় ঢেউয়ের দুর্দর্শা না কাটতেই আবার জনবহুল বিশাল দেশটিতে তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা থেকে হার্ড ইমিউনিটির জন্য দ্রুত টিকা দেওয়ার দাবি উঠছে।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা অন্তত তিন বছর লাগবে ৮০ শতাংশ মানুষককে ভ্যাকসিন দিতে।

আদর পুনাওয়ালার বিবৃতিতেও ভারতে টিকা দিতে দীর্ঘ সময় লাগার কথা বলা হয়েছে।

এতে সেরাম ইন্সটিটিউট স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে টিকা পাঠাতে পারবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এই প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত কোভিশিল্ড টিকা না পাওয়ায় বাংলাদেশে প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে তৈরি অনিশ্চয়তার উত্তর মিলছে না।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ নেওয়ার ৮ সপ্তাহ পর দেওয়া হচ্ছে দ্বিতীয় ডোজ।

এই টিকার তিন কোটি ডোজ টিকা কিনতে গত বছরের নভেম্বরে সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ সরকার। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে এই টিকা দেশে আসার কথা।

জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে দুটি চালানে টিকা এসেছে ৭০ লাখ ডোজ। ভারত সরকার দুই দফায় উপহার দিয়েছে আরও ৩২ লাখ ডোজ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে টিকা এসেছে ১ কোটি ২ লাখ ডোজ।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশজুড়ে গণটিকাদান শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

আরও পড়ুন: