গাজা-ইসরায়েল লড়াই: যুদ্ধবিরতির আহ্বান জো বাইডেনের

গাজা ও ইসরায়েলের মধ্যে চলা লড়াইয়ে আট দিন পার হওয়ার পর যুদ্ধবিরতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2021, 07:42 AM
Updated : 18 May 2021, 08:09 AM

সোমবার টেলিফোনে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলাপকালে বাইডেন একটি যুদ্ধবিরতির পক্ষে নিজের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।

কিন্তু বাইডেন যুদ্ধবিরতির পক্ষে সমর্থন জানালেও যুক্তরাষ্ট্র ফের সহিংসতা অবসানের আহ্বান জানানো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতি আটকে দিয়েছে, জানিয়েছে বিবিসি।

এ সংঘাত দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ালেও সহিংসতার অবসানের জন্য শুরু হওয়া কূটনৈতিক তৎপরতায় এখনও কোনো লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি হয়নি।

গাজায় ৬১টি শিশুসহ অন্তত ২১২ জন নিহত হয়েছেন অপরদিকে ইসরায়েলে দুইটি শিশুসহ নিহত ১০ জন। ইসরায়েলি জরুরি বিভাগ দেশটিতে মোট ৩১১ জন আহত হয়েছেন এবং তাদের মধ্যে ছয় জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছে।

সোমবার রাতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েল লক্ষ্য করে ৩৩৫০টির মতো রকেট ছুড়েছে, এর মধ্যে সোমবার ছুড়েছে ২০০টি।

রকেটের এ পরিমাণকে ‘নজিরবিহীন সংখ্যা’ বলে উল্লেখ করেছে তারা। তাদের আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা সিস্টেম ৯০ শতাংশ রকেট ধ্বংস করে দিয়েছে এবং তাদের বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে অন্তত ১৩০ জন ‘জঙ্গি’ নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।  

গাজায় নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ফিলিস্তিনি যোদ্ধা এবং যে কোনো বেসামরিকের মৃত্যুর বিষয়টি অনিচ্ছাকৃত বলে দাবি করেছে ইসরায়েল; কিন্তু ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ড পরিচালনাকারী রাজনৈতিক ও সামরিক গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের ওই দাবির সঙ্গে দ্বিমত করেছে।      

সোমবার দিবাগত রাতেও গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা অব্যাহত ছিল। রাত নেমে আসার পর ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র গাজা সিটির দু’টি ভবনে আঘাত হানলে ঘন ধোঁয়ার কুণ্ডুলি উঠতে দেখা যায়।

মঙ্গলবার ভোররাতে গাজার যোদ্ধারা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চল লক্ষ্য করে রকেট ছোড়ে। রকেট হামলার সতর্কতা জানিয়ে সাইরেন বেজে উঠলে ওই অঞ্চলের কয়েক হাজার বাসিন্দা ভূগর্ভস্থ আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে ছুটতে শুরু করে। তবে আগের দিনের তুলনায় এদিন গাজা থেকে কম রকেট ছোড়া হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। 

তাৎক্ষণিকভাবে কোনো পক্ষ থেকেই হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। 

হোয়াইট হাউসের দেওয়া বিবৃতি অনুযায়ী, গাজার নিরপরাধ বেসামরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানোর জন্য বাইডেন ইসরায়েলকে ‘উৎসাহিত’ করেছেন।

এতে বলা হয়েছে, “গাজার হামাস ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেছেন দুই নেতা।”

আলাপকালে প্রেসিডেন্ট বাইডেন “একটি যুদ্ধবিরতির পক্ষে তার সমর্থন ব্যক্ত করেছেন এবং (সহিংসতা) শেষ করতে মিশর ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা নিয়ে আলোচনা করেছেন।”

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে একটি বিবৃতি দিতে চাইলেও যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয়বারের মতো তা আটকে দিয়েছে। এই বিবৃতির কারণে তাদের নেওয়া কূটনৈতিক উদ্যোগ বিঘ্নিত হতে পারে বলে যুক্তি দেখিয়েছে ওয়াশিংটন।  

ইতোমধ্যেই দরিদ্র হয়ে পড়া ২০ লাখ বাসিন্দার গাজা ভূখণ্ডে অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সেখানে ৪০টি স্কুল ও চারটি হাসপাতাল পুরোপুরি অথবা আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে তারা। 

গাজায় জ্বালানি সংকট চলছে আর এতে হাসপাতালে করোনাভাইরাস ও অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসার মতো জরুরি পরিষেবাগুলো হুমকির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব সংস্থাটি।