শনিবার টিভিতে দেওয়া এক ভাষণে নেতানিয়াহু একথা বলেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। এর মধ্য দিয়ে তিনি কার্যত যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকেই প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিপরিষদে কয়েকঘন্টার বৈঠকের পর দেওয়া ওই বক্তব্যে নেতনিয়াহু বলেন, “সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে আমাদের অভিযান চলছে। ইসরায়েলের মাটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যতদিন প্রয়োজন ততদিন পর্যন্ত আমরা তা চালিয়ে যাব।”
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল ‘হামলাকারীর’ উচিৎ পাওনা বুঝিয়ে দিতে চায় এবং এমন ব্যবস্থা করতে চায় যাতে ভবিষ্যতে এরকম সাহস তারা আর না করে। চলমান সংঘর্ষের জন্য ইসরায়েলি বাহিনী নয়; বরং ইসরায়েলিদের ওপর হামলাকারীরাই দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন নেতানিয়াহু।
গত শনিবার গাজার বহুতল ভবনে ইসরায়েলের বিমান হামলাও বৈধ বলে দাবি করেছেন তিনি, যে ভবনটিতে ছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ও কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল-জাজিরার কার্যালয়।
রোববার সিবিএস নিউজের ‘ফেস দ্য ন্যাশন’ অনুষ্ঠানে নেতানিয়াহু বলেন, “গাজার ওই বহুতল ভবনে ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী সংগঠনের একটি গোয়েন্দা কার্যালয় ছিল। যেখান থেকে ইসরায়েলের নাগরিকদের ওপর হামলার চক্রান্ত এবং তোড়জোড় চলে। সে কারণেই ভবনটি হামলার মোক্ষম বৈধ নিশানা।”
গাজায় গত সোমবার সহিংসতা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে গাজা কর্তৃপক্ষের হিসাবমতে, সর্বশেষ ইসরায়েলি বিমান হামলাতেই নিহত হয়েছে অন্তত ৪০ জন।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি পক্ষ ১০ জন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে। ইসরায়েল সর্বশেষ গাজায় হামাস সংগঠনের অন্তত আরও দুই নেতাকে নিশানা করে হামলা চালিয়েছে। গাজা থেকেও ইসরায়েলের দক্ষিণের শহর-নগরগুলোতে ছোড়া হয়েছে আরও রকেট।
ইসরায়েল বলছে, গত সপ্তাহে যত ঘন ঘন রকেট হামলা হয়েছে তা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। সহিংসতায় নিহতদের শেষকৃত্য চলছে গাজা, পশ্চিম তীর এবং ইসরায়েলেও।
জাতিসংঘ মহাসচিব নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে বলেছেন, “সব পক্ষেরই উচিত মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা চলতে দেওয়া এবং তা সফল হতে দেওয়া।” গোটা অঞ্চলজুড়ে সহিংসতার হুমকি নিয়েও তিনি সতর্ক করেছেন।
সহিংসতা গোটা অঞ্চলের জন্য হুমকি: গুতেরেস
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক অনলাইন বৈঠকে মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের এই সহিংসতা গোটা অঞ্চলের জন্যই হুমকি।
তিনি বলেন, “এ সহিংসতা পরিস্থিতিকে এমন এক নিরাপত্তা ও মানবিক সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে যা হয়ত আর নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না।”
“বেড়ে যেতে পারে উগ্রবাদও। আর তা কেবল অধিকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চল কিংবা ইসরায়েলেই নয় বরং গোটা অঞ্চলেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।”
জাতিসংঘ অবিলম্বে একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছার জন্য সব পক্ষকেই সক্রিয়ভাবে তাগাদা দিচ্ছে বলে জানান গুতেরেস। সহিংসতাকে ‘খুবই ভয়াবহ’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, লড়াই অবিলম্বে বন্ধ হতেই হবে।