ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত ষষ্ঠ দিনে, প্রাণহানি বাড়ছে

গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলার পাল্টায় হামাস যোদ্ধাদের রকেট হামলা অব্যাহত থাকার মধ্যে সঙ্কট গড়িয়েছে ষষ্ঠ দিনে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2021, 07:16 AM
Updated : 16 May 2021, 02:52 AM

যুক্তরাষ্ট্র ও আরব বিশ্বের কূটনীতিকরা সংঘাত থামানোর আহ্বানে কণ্ঠ তুললেও ইসরায়েলি সামরিক বিমানগুলো শনিবার প্রথম প্রহরেও গাজার বিভিন্ন স্থাপনায় বোমা বর্ষণ করেছে। জবাবে হামাসের পক্ষ থেকে পাল্টা রকেট ছোড়া হয়েছে তেল আবিবকে লক্ষ্য করে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার উত্তরে ইসরায়েলি বোমার আঘাতে কমপক্ষে চার জন নিহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যকর্মীরা তথ্য দিয়েছেন। সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভূমধ্যসাগর থেকে ইসরায়েলি নৌবাহিনীর জাহাজ থেকেও গোলাবর্ষণ করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ইসরায়েলি বিমান হমলায় একটি মসজিদ বিধ্বস্ত হয়েছে। এ বিষয়ে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্রের ভাষ্য, তথ্যটি তারা যাচাই করে দেখছে।

ইসরায়েলের দক্ষিণের দুটি শহরে রাতভর অনবরত পাগলাঘণ্টি বাজিয়ে বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয় গাজা থেকে রকেট হামলার বিষয়ে। হামাস ওই হামলার কথা স্বীকার করেছে।

রয়টার্স লিখেছে, সংঘাত থামার কোন লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না, প্রাণহানি প্রতিদিনই বাড়ছে। ফিলিস্তিনিদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরেও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, গত সোমবার শুরু হওয়া এই সহিংসতায় গাজায় এ পর্যন্ত ১৩২ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩২ শিশু ও ২১ জন নারী। আহত হয়েছে আরও ৯৫০ জন।

ছবি: রয়টার্স

শনিবার প্রথম প্রহরের চালানো ইসারায়েলি বিমান হামলায় নিহত চারজনের মধ্যে এক নারী ও একটি শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস। এ বিষয়ে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের দিকের নিহত আট জনের মধ্যে একজন সেনা সদস্য গাজা সীমান্তে টহলে ছিলেন। নিহতদের মধ্যে ছয় জন সাধারণ নাগরিক, তাদের দুজন বয়সে শিশু।

শুক্রবার গাজায় দিনভর বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে কয়েক কিলোমিটার সুরঙ্গপথ, রকেট ছোড়ার স্থান ও অস্ত্র বানানোর স্থাপনা ধ্বংস করার দাবি করেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

রয়টার্স লিখেছে, ইসরায়েলের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে গাজা সীমান্তবর্তী ছোট শহর থেকে মহানগরী তেল আবিব পর্যন্ত এবং দক্ষিণে বিরশেবায়, স্থানীয় বাসিন্দারা অনবরত পাগলাঘণ্টি, বেতার ও টেলিভিশনে অনুষ্ঠানের মধ্যেই সতর্কবার্তা এবং মোবাইল ফোনে বিপদ সংকেত পেতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন।

কূটনৈতিক তৎপরতা

দুই পক্ষের মধ্যে আবার অস্ত্রবিরতি নিশ্চিত করতে আঞ্চলিক উদ্যোগের নেতৃত্বে রয়েছে মিশর।

সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, একটি অস্ত্রবিরতি কার্যকর করতে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে চেষ্টা চালাচ্ছে কায়রো।

মিশর এক দিকে হামাস ও তাদের মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে একটি চুক্তিতে আনার চেষ্টা করছে।

মিশর ও জর্ডানের পররারষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় সহিংসতা বন্ধের এবং জেরুজালেমে ‘উসকানিমূলক’ কর্মকাণ্ড থামানোর জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ফিলিস্তিনের একজন কর্মকর্তা বলেন, “আলোচনা শুক্রবার একটি বাস্তব দিকে মোড় নিয়েছে। মিশর, কাতার ও জাতিসংঘের মধ্যস্ততাকারীরা সব পক্ষের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আরও বাড়িয়েছেন। তবে এখনও কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।”

সংযুক্ত আরব আমিরাত শুক্রবার সব পক্ষকে অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছে এবং সহিংসতায় হতাহতদের জন্য সমবেদনা প্রকাশ করেছে।

গত সেপ্টেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে ইসরায়েলের চুক্তির প্রতিশ্রুতির কথাও স্মরণ করিয়ে দেয় দেশটি।