ফিলিস্তিনি-ইসরায়েলি দুই মায়েরাই উদ্বেগে ঘুমহারা

ইসরায়েল ও গাজা সহিংসতায় প্রাণ হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ, যাদের মধ্যে আছে অনেক শিশু। তাই নিজেদের সন্তানদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত দুই দেশের অনেক মায়েরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2021, 11:41 AM
Updated : 14 May 2021, 12:06 PM

চলমান সহিংসতায় গাজায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন অন্তত ১০৯ জন, এদের মধ্যে ২৯টি শিশু আছে এবং ইসরায়েলে মারা যাওয়া সাতজনের মধ্যে আরও দুইটি শিশু আছে। দুই পক্ষের মধ্যে চলা তীব্র সহিংসতায় শঙ্কিত এলাকার হাজারো মায়েদের মধ্যে দুই জনের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি তাদের উদ্বিগ্ন সময়ের চিত্র তুলে ধরেছে।

এদেরেই একজন গাজার নাজওয়া শেখ-আহমাদ।  পাঁচ দিন ধরে নিজ বাড়ির কাছে ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা পড়ার কারণে প্রবল আতংকে ঘুমাতে পারছেন না পাঁচ সন্তানের এই মা।

“রাতের সময়টায় আমরা অনেক ভয়ে থাকি। আমার সন্তানরাও ভয়ে থাকে। যেকোন মুহূর্তে নিজ বাড়িটাই নিজের কবর হয়ে যেতে পারে,” বলেছেন তিনি।

সারাদিন নাজওয়া শুনতে পান তার বাড়ির উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া জঙ্গি বিমানের গর্জন আর বোমা বিস্ফোরণের মুহুর্মুহু শব্দ।

“বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে ঘরের সব আসবাবপত্র কাঁপে, সঙ্গে আমরাও ভয়ে কাঁপি। সন্তানদের কাছ থেকে ভয় লুকানোটা সহজ নয়,” বলেন তিনি।

বুধবার গাজায় বৃষ্টির মতো ইজরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার সময় নাজওয়ার পরিবার তাদের একতালা বাড়ির ঠিক মধ্যখানে অবস্থান নেয়। ১১ থেকে ২২ বছর বয়সী পাঁচ সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে গাজার একটি শরণার্থী কেন্দ্রের ঠিক পাশে ছোট একটি বাড়িতে থাকেন তারা।

মৃতদের অনেকেই উগ্রপন্থি যোদ্ধা আর গাজা থেকে ছোড়া লক্ষ্যভ্রষ্ট রকেটের আঘাতে ভূখণ্ডটির আরও অনেকে মারা গেছেন বলে দাবি ইসরায়েলের। 

“মা হিসেবে এই ভয়াবহতার মধ্যে বেঁচে থাকা অত্যন্ত কষ্টকর,” বলেন নাজওয়া। এই সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে সন্তানদের ঠিক কী বলবেন তা নিয়ে অনিশ্চিত থাকেন তিনি।

“আমি আমার সন্তানদেরকে কিছু বলাই ছেড়ে দিয়েছি। তবে আমার ভেতরে যেই ভয় ও আতঙ্ক, তা লুকিয়ে রাখা অনেক কষ্টকর, কারণ আমি জানিনা এখানে আমরা ঠিক কতটুকু নিরাপদ।”

“আমি নিষেধ করা সত্ত্বেও ওরা সারাদিন খবর দেখে। ধ্বংসযজ্ঞের এসব খবর এখন ইন্সটাগ্রামসহ সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সয়লাব।”

সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত এই মা। তার ১১ বছর বয়সী ছোট ছেলে ইতোমধ্যেই ২০০৮-২০০৯ এবং ২০১৪ সালের যুদ্ধ দেখেছে।

“আমি ভাবতে পারিনা বড় হয়ে সে নিজের সন্তানদেরকে শৈশবের স্মৃতি হিসেবে ঠিক কী গল্প বলবে?” বলেছেন তিনি।

অপরদিকে ইসরায়েলের লড শহরে সোমবার রাতে নিজ বাড়ির সামনে যখন তীব্র সংঘর্ষ চলতে থাকেয় তখন টোভা লেভি বুঝতে পারে তার ইসরায়েলি-ইহুদী পরিবারের এখান থেকে সরে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।

কমিউনিটির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপচ্যাটে সংঘর্ষের উদ্বেগজনক সব খবর পাচ্ছিলেন টোভা। হঠাৎ জানতে পারেন, তেল আবিবের দক্ষিণপূর্বে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে আরব-ইহুদী মিশ্রিত এই শহরের একটি মসজিদ থেকে ‘দাঙ্গাকারীদের’ একটি দল বের হয়েছে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই দাঙ্গাকারীদের একটি দল তার বাড়ির কাছে চলে আসে। স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে এ বাড়িতে থাকেন টোভা।

“ওরা এসেই এলাকার ঘরবাড়িতে আগুন লাগানো শুরু করে। আমি বিস্মিত ও আতঙ্কিত হই। ভাবি, কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা যদি আমার বাড়িতেও আগুন দেয়, তাহলে কী করবো আমি?

“তাই খুব জলদি কিছু জিনিস গুছিয়ে আমরা আরও দক্ষিণে বীরসেবার দিকে পালিয়ে যাই, সেখানে আমার দেবর থাকেন। আমরা নিজ বাড়িতে থাকতেই ভয় পাচ্ছিলাম।”

তারা চলে  শহর ছাড়ার কিছুক্ষণ পরই সেখানে সংঘর্ষের ঘটনা বেড়ে যায়। মঙ্গলবারে সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয় আর ঘরবাড়ি ও যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়। লডের মেয়র ঘোষণা দেন, শহরে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।

“আমি জানিনা ফেরার পর আমি আমার ঘরবাড়ি কী অবস্থায় পাবো, কিংবা আদৌ পাবো কি না,”  টোভা শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার পর সেখানে রকেট আক্রমণ হয়েছে, তাতে দুই ইসরায়েলি-আরব মারা যান।

“আমরা সবাই সাধারণ মানুষ, একে অপরের বিরুদ্ধে এভাবে যুদ্ধ করে যাওয়াটা দুঃখজনক ও ভয়ানক। অত্যন্ত ভয়ানক,” বলেন তিনি।