১৯৭১: বেলফাস্টে ব্রিটিশ সেনাদের হাতে নিহত ১০ জনই ছিলেন ‘নিরাপরাধ’

নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের রাজধানী বেলফাস্টের পশ্চিমে ব্যালিমারফি এলাকায় পাঁচ দশক আগে ব্রিটিশ সেনাদের এক অভিযানে ১০ জন নিহত হন, যাদের সবাই ‘সম্পূর্ণ নিরাপরাধ’ ছিলেন বলে বিচারিক তদন্তে উঠে এসেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2021, 05:44 AM
Updated : 12 May 2021, 05:44 AM

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের অগাস্টে ব্যালিমারফি ও আশপাশের এলাকায় হতাহতের ওই ঘটনা নিয়ে ২০১৮ সালের নভেম্বরে এই তদন্ত শুরু হয়। অর্ধশতাব্দি আগের ওই সামরিক অভিযানে গোলাগুলিতে নিহতরা কোনো বিচার ছাড়াই বন্দি ছিলেন।

তাদের মধ্যে ছিলেন একজন পাদ্রি, যিনি আহতদের সাহায্য করার চেষ্টায় ছিলেন। আরও ছিলেন একজন নারী, যিনি আট সন্তানের জননী।

তদন্তকারী বিচারক জাস্টিস কিগান মঙ্গলবার তার সিদ্ধান্তে জানান, নিহত ১০ জনের মধ্যে নয়জনই সেনা সদস্যদের গুলিতে নিহত হন। অন্যজন কার গুলিতে নিহত হয়েছেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি তিনি।

১৯৭১ সালের ৯ থেকে ১১ অগাস্টের মধ্যে পাঁচটি আলাদা ঘটনায় তাদের হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় একাদশতম ব্যক্তি হৃদরোগে মারা যান, তবে সেনা সদস্যদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির পরই তার মৃত্যু হয়। নিহতদের বয়স ছিলো ১৯ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে।

জাস্টিস কিগান মঙ্গলবার আদালতে তার প্রতিবেদন পড়ে শোনান প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে। তিনি বলেন, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের সঙ্কটকালে ‘অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ ও জটিল পরিস্থিতির’ মধ্যে এই মানুষগুলো নিহত হন।

বন্দি করার তিন দিনের মধ্যে তাদের হত্যা করা হয়- আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য সন্দেহে কোনো বিচার ছাড়াই তাদের বন্দি রাখা হয়েছিল। সেই সময় চতুর্দিকে যে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছিল, সেই বর্ণনাও এসেছে করোনারের প্রতিবেদনে।

তিন দশকের জাতিগত সংঘাত শেষে ১৯৯৮ সালে গুড ফ্রাইডে চুক্তির মাধ্যমে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে শান্তি ফিরিয়ে আনা হয়।

জাস্টিস কিগান তার সিদ্ধান্তে ঘোষণা করেন: “ধারাবাহিক তদন্ত শেষে এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে নিহতরা সবাই সেদিন সম্পূর্ণ নির্দোষ ছিলেন।”

ওই হত্যাকাণ্ডে নিহতদের একজন জোসেফ করের মেয়ে এইলিন ম্যাকিওন বলেন, তদন্তে যা বেরিয়ে এসেছে, তাতে তার পরিবার ‘খুশি’।

“এখন গোটা বিশ্ব জানল যে তারা নির্দোষ ছিলেন।”

যুক্তরাজ্য সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করতে ‘সময় দরকার’ এবং তারা সতর্কভাবে উপসংহারে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন।

জাস্টিস কিগান বলেন, নিহতদের পরিবারের ওপর ওই হত্যাকাণ্ডের প্রভাব ছিল ‘মারাত্মক’। ১৯৭২ সালেই এসব মৃত্যুর তদন্ত শুরু হয়েছিল বিচ্ছিন্নভাবে। তাতে কাউকেই দায়ী করা হয়নি।

২০১৮ সালে শুরু হওয়া নতুন তদন্তে সবগুলো হত্যাকাণ্ড একসঙ্গে খতিয়ে দেখা হয়।

আদালত প্রায় ১০০ দিন ধরে ১৫০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করে। যাদের মধ্যে ৬০ জন প্রাক্তন সেনা সদস্য, ৩০ জনের বেশি সাধারণ নাগরিক এবং বিস্ফোরক, প্যাথলজি ও প্রকোশল বিশেষজ্ঞ ছিলেন।

আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিমন কভেনি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এই তদন্তে যা উন্মোচিত হল, তা সেই সংঘাতের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার পাতাটির ওপর নতুন আলো ফেলেছে এবং নিহতদের পরিবারের জন্য একটি বড় স্বস্তি বয়ে এনেছে।”

নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের ডেপুটি ফার্স্ট মিনিস্টার মিশেল ও’নিল এক টুইটে লিখেছেন, “ব্যালিমারফির নিহতরা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা এতদিন অবিচারের শিকার ছিলেন, এখন সত্য প্রকাশিত হয়েছে। ওই ঘটনা ছিল ব্রিটেনের রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড।”

ব্রিটিশ সরকার নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের অতীতের সেই সঙ্কটের সমাধানের জন্য নতুন আইন করার পরিকল্পনার কথা বলেছে রানীর বরাত দিয়ে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিদ্যমান আইনি কাঠামোতে অতীতের বিষয়গুলোর মীমাংসা করা কারো জন্যই সুবিচার হবে না। সাধারণ নিয়মে তদন্ত করে সবার জন্য ন্যায্য একটি বিচারিক ফল পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

তবে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার একটি পরিকল্পনা থামিয়ে দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। এ ধরনের পরিকল্পনার খবর ফাঁস হওয়ার পর গত সপ্তাহে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ও রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডে ক্ষোভ দেখা দেয়। ব্রিটিশ সরকার তখন প্রতিশ্রুতি দেয়, বিষয়টি নিয়ে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, আইরিশ সরকার ও নাগরিক সমাজসহ সব পক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কাজ করবে তারা।