সহিংসতা বাড়ছে: গাজায় নিহত ৩৫, ইসরায়েলে ৫

ইসরায়েল ও হামাসের শত্রুতা আরও তীব্র হয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সরারাত ধরে পাল্টাপাল্টি রকেট ও বিমান হামলা হয়েছে, এতে গাজায় ৩৫ জন ও ইসরায়েলে পাঁচ জন নিহত হয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2021, 03:59 AM
Updated : 12 May 2021, 07:45 AM

বুধবারের প্রথম কয়েক ঘণ্টায় গাজায় কয়েকশতবার বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল, অপরদিকে হামাস ও গাজার অন্যান্য কট্টরপন্থি গোষ্ঠীগুলো তেল আবিব ও বিরশিবা এলাকায় বহু রকেট ছোড়ে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ইসরায়েলের উপর্যুপরি হামলায় গাজার একটি ১৩তলা ভবন ধসে পড়ে ও আরেকটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ইসরায়েলে জানিয়েছে, বুধবার প্রথম প্রহরে তাদের জঙ্গি বিমানগুলো গাজার বিভিন্ন লক্ষ্যে হামলা চালিয়ে হামাসের গোয়েন্দা সংস্থার বেশ কয়েকজন নেতাকে হত্যা করেছে। তাদের অন্যন্যা লক্ষ্যগুলোর মধ্যে গাজার রকেট ছোড়ার স্থান ও হামাসের দপ্তর ছিল বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।

গাজায় বোমা হামলা চালাতে তারা ৮০টি জঙ্গি বিমান পাঠিয়েছিল বলে ইসরায়েল জানিয়েছে। ইতোমধ্যেই গাজার সীমান্তে মোতায়েন থাকা ট্যাঙ্ক বাহিনীর অবস্থান আরও জোরদার করতে সেখানে পদাতিক বাহিনী ও সাঁজোয়া যান পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে দেশটি।

২০১৪ সালের গাজা যুদ্ধের পর ইসরায়েল ও হামাসের একে অপরের বিরুদ্ধে এটিই সবচেয়ে বড় আক্রমণের ঘটনা। এ পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।  

জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক শান্তি দূত তুর ভেনেস্ল্যান্ড টুইটে বলেন, “অবিলম্বে এই আগুন বন্ধ কর। আমরা একটি ‍পূর্ণ যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। উত্তেজনা হ্রাসের জন্য সব পক্ষের নেতাদের দায়িত্ব নিতে হবে।

“গাজায় যুদ্ধের পরিণাম ধ্বংসাত্মক আর সাধারণ লোকজনই এর দায় বহন করে। পরিস্থিতি শান্ত করতে জাতিসংঘ সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। সহিংসতা এখনই বন্ধ করুন।”

গাজার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বুধবার ভোরের কয়েক ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় তাদের বাড়িগুলো বারবার কেঁপে কেঁপে উঠেছে এবং আকাশ আলোতে ভরে উঠেছিল, ইসরায়েলি বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো গাজা থেকে ছোড়া রকেটগুলো প্রতিহত করছিল। 

গাজা থেকে ৭০ কিলোমিটার উত্তরে ইসরায়েলি এলাকাগুলোতে রকেট হামলার সাইরেন শুনে ইসরায়েলিরা নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে দৌঁড় শুরু করে আর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে বাধাদানকারী ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে রকেট ধ্বংস হওয়ার শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল ও আকাশে আলোর ঝলকানি দেখা যাচ্ছিল বলে জানিয়েছে রয়টার্স।     

তেল আবিবের নিকটবর্তী ইসরায়েলের আরব ও ইহুদি বাসিন্দাদের শহর লডে রকেটের আঘাতে একটি গাড়ির দুই আরোহী নিহত হয়। এদের মধ্যে একজন সাত বছরের একটি শিশু বালিকা বলে ইসরায়েলি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এখানে ইসরায়েলি আরবদের বিক্ষোভের মুখে কর্তৃপক্ষ শহরটিজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।

ইসরায়েলের মেগান ডেভিড আদম অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা জানিয়েছে, তেল আবিবের শহরতলী রিশোন লেজিওনের একটি ভবনে রকেটের আঘাতে ৫০ বছর বয়সী এক নারী এবং আশকেলন এলাকায় রকেটে আরও দুই নারী নিহত হয়েছেন। 

হামাসের সশস্ত্র শাখা জানিয়েছে, গাজা সিটির টাওয়ার ভবনে বোমা হামলার জবাবে তারা ইসরায়েলের তেল আবিব ও দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বিরশেবা লক্ষ্য করে ২১০টি রকেট ছুড়েছে। 

ফিলিস্তিনি হামাস গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘাতের ক্ষেত্রে ইসরায়েলের বাণিজ্যিক রাজধানী তেল আবিবে রকেট হামলা দেশটির জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে দেখে।

মঙ্গলবারের ভিডিও ফুটেজগুলোতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধসে পড়া গাজা সিটির ১৩তলা একটি আবাসিক ও দাপ্তরিক ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে তিনটি ঘন কালো ধোঁয়ার কুণ্ডুলি উঠতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গাজা সিটির রিমাল এলাকার এই ভবনটিতে হামাসের বেশ কয়েকটি দপ্তর ছিল যার মধ্যে একটি সামরিক গবেষণা ও উন্নয়নের ও আরেকটি সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর।

ভবনটিতে থাকা হামাসের একটি দপ্তর রাজনৈতিক নেতা ও কর্মকর্তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠক, সংবাদ সম্মেলনের জন্য ব্যবহার করায় তা স্থানীয়ভাবে ব্যাপক পরিচিত ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা ও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, বিমান হামলা চালানো আগে ওই ভবনটি যে ব্লকে অবস্থিত তার বাসিন্দাদের ও আশপাশের এলাকার লোকজনকে সতর্ক করে এলাকা ছেড়ে যেতে বলা হয়েছিল।

একই এলাকায় আরেকটি বহুতল আবাসিক ও দপ্তারিক ভবনে বুধবার ভোররাত ২টার কিছুক্ষণ আগে ইসরায়েলিরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। হামলার আগেই ভবনটিতে থাকা বাসিন্দারা ও ওই ভবনের কয়েকটি তলার থাকা সংবাদ মাধ্যমের দপ্তরের সাংবাদিকরা সেটি ছেড়ে গিয়েছিলেন।  

রমজান মাসে জেরুজালেমে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা উত্তেজনার পর সহিংসতার এসব ঘটনা ঘটল। জেরুজালেমে চলা উত্তেজনার সময় আল আকসা মসজিদ ও এর আশপাশে ইসরায়েলি পুলিশ ও ফিলিস্তিনি প্রতিবাদকারীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আল আকসা মসজিক কম্পাউন্ড মুসলিমদের কাছে ‘হারাম শরীফ’ হিসেবে পরিচিত হলেও ইহুদিরা একে ‘টেম্পল মাউন্ট’ হিসেবে জানে।

পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনি কিছু পরিবারের বাড়িঘর ইহুদি বসতিস্থাপনকারীরা তাদের বলে দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পর ওই ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের সম্ভাবনায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে ওঠে। আদালত এই মামলার শুনানি স্থগিত রেখেছে।