জাপানের মতো উন্নত অনেক দেশে বৃদ্ধদের আধিক্যের যে প্রবণতা, সেদিকে ধাবিত হওয়ার এ ইঙ্গিত অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে চেষ্টারত বেইজিংয়ের সক্ষমতায় সন্দেহের বীজও বপন করছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এ দেশটি ১৯৭০ এর দশকে এক সন্তান নীতি নিয়েছিল, এরপর থেকেই সেখানে জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধিতে ভাটা চলছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত ২০২০ সালের শুমারিতে চীনের মূল ভূখণ্ডের জনসংখ্যা পাঁচ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে ১৪১ কোটিতে পৌঁছেছে বলে জানানো হয়েছে। চীনে প্রতি এক দশকে একবার আদমশুমারি হয়।
১৯৫৩ সালে দেশটিতে আধুনিক জনগণনা শুরুর পর এটাই সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি।
২০১৬ সালে এক সন্তান থেকে সরে এসে দুই সন্তান নীতি নেওয়ার পর গর্ভধারণের হার এক দশমিক আট এর কাছাকাছি ধরে ২০২০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা ১৪২ কোটি করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল চীন। তা যে একটুর জন্য অর্জিত হয়নি, শুমারির ফলে তাও দেখা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাকরি ও স্বাধীনতাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া এবং জীবনধারণের খরচ বেশি হওয়ার কারণে চীনে দম্পতিদেন মধ্যে সন্তান জন্মদানে আগ্রহ কম বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
এ চিত্র বদলাতে বেইজিংয়ের ওপর এখন দম্পতিদের নানা ধরনের প্রণোদনা দেওয়ার চাপ বাড়বে।
“চীনের জনসংখ্যা সামনেই চূড়ার সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছাবে, যদিও ঠিক কবে পৌঁছাবে তা অনিশ্চিত। ধারণা করা হচ্ছে যে, নিকট ভবিষ্যতেও জনসংখ্যা ১৪০ কোটির বেশিই থাকবে,” আদমশুমারির ফল প্রকাশিত হওয়ার পর বলেছেন চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রধান নিং জিঝে।
জাতিসংঘের অনুমান, চীনের মূল ভূখণ্ডের জনসংখ্যা ২০৩০ সালে শিখরে পৌঁছাবে, এরপর থেকে নামতে শুরু করবে।
এপ্রিলের শেষদিকে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস এ বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অজ্ঞাত কয়েকজনকে উদ্ধৃত করে ২০২০ সালে চীনের জনসংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কমেছে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু আদমশুমারির ফলাফল তাদের দেওয়া তথ্যকে সমর্থন করছে না।
এবারের আদমশুমারিতে একটি ইতিবাচক প্রবণতাও দেখছে দেশটি। ২০২০ সালে দেশটির মোট জনসংখ্যায় ১৪ বা তার কম বয়সীর পরিমাণ দেখা গেছে ১৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ; ২০১০ সালেও যা ছিল ১৬ দশমিক ৬।
আর সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে জন্মহার। ২০১৬ সালে এক সন্তান নীতি রদ করার পর ওই বছর বাদে ২০১৯ পর্যন্ত দেশটিতে জন্মহার না বেড়ে উল্টো কমেছে।
গত বছর দেশটিতে এক কোটি ২০ লাখ শিশুর জন্ম রেকর্ড করা হয়েছে, ২০১৯ সালেও এ সংখ্যা এক কোটি ৪৬ লাখের বেশি ছিল, জানিয়েছেন নিং।
দেশটিতে ২০২০ সালের হিসাবে ৬৫ বা তার চেয়ে বেশী বয়সী নাগরিকের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ, যা এক দশক আগের ৮ দশমিক ৮৭ শতাংশের চেয়ে অনেকটাই বেশি।