জেরুজালেমের সহিংসতা রকেট, বিমান হামলায় গড়িয়ে নিহত ২০

ফিলিস্তিনের গাজা থেকে সহিংসতা কবলিত জেরুজালেমের আশপাশে বেশ কয়েকটি রকেট নিক্ষেপের পর ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নয় শিশুসহ অন্তত ২০ নিহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2021, 04:05 AM
Updated : 11 May 2021, 06:12 AM

এসব পাল্টাপাল্টি হামলায় জেরুজালেমে কয়েকদিন ধরে চলা সহিংসতা সোমবার নতুন মাত্রা পেয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গাজার ‘উগ্রপন্থিরা’ জেরুজালেম এলাকায় রকেট নিক্ষেপের মাধ্যমে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কথিত ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করার পর তারা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটির সশস্ত্র গোষ্ঠী, রকেট লঞ্চার ও সামরিক পোস্টগুলোতে হামলা চালিয়েছে। 

রয়টার্স জানিয়েছে, গভীর রাত পর্যন্ত গাজা থেকে রকেট নিক্ষেপ ও সেখানে ইসরায়েলি বিমান হামলা চলতে থাকে, ফিলিস্তিনিরা গাজা সিটি ও পুরো উপকূলীয় ভূখণ্ডটিজুড়ে বড় ধরনের বিস্ফোরণ হচ্ছে বলে জানাতে থাকে।

স্থানীয় সময় মধ্যরাতের একটু আগে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানায়, ফিলিস্তিনি ‘উগ্রপন্থিরা’ ইসরায়েলে প্রায় দেড়শ রকেট ছুড়েছে, এর মধ্যে বহু রকেট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সিস্টেমের মাধ্যমে প্রতিরোধ করেছে তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজা থেকে রকেট হামলা ‘অবিলম্বে’ বন্ধ করা উচিত। উত্তেজনা হ্রাস করতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

সোমবার দিনটি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের সবচেয়ে সবচেয়ে স্পর্শকাতর স্থান জেরুজালেমের দেয়াল ঘেরা পুরনো শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত আল আকসা মসজিদ কম্পাউন্ডে দুই পক্ষের সংঘর্ষ দিয়ে শুরু হয়। এই কম্পাউন্ডটি মুসলিমদের কাছে ‘হারাম আল শরীফ’ ও ইহুদিদের কাছে ‘টেম্পল মাউন্ট’ হিসেবে পরিচিত।

ফিলিস্তিনি রেড ক্রস সোসাইটি জানিয়েছে, এখানে ইসরায়েলি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৩০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের পুলিশ ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে কাঁদুনে গ্যাস, রবার বুলেট ও শব্দ বোমা ছুড়েছে।

ইসরায়েলের পুলিশ জানিয়েছে, হাঙ্গামায় তাদের ২১ জন পুলিশ কর্মকর্তা জখম হয়েছেন।  

১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে পূর্ব জেরুজালেম দখল করার দিনটিকে ইসরায়েলের কথিত ‘জেরুজালেম দিবস’ হিসেবে পালনকে ঘিরে কয়েকদিন ধরে চলা সহিংসতা এদিন বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।

উত্তেজনা হ্রাস করতে ইহুদি তরুণদের জেরুজালেম দিবসের মিছিলের রুট পরিবর্তন করে ইসরায়েলি পুলিশ।

সকাল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এখানে সহিংসতা প্রায় স্তিমিত হয়ে এলেও অস্থিরতার আরেকটি কেন্দ্রে উত্তেজনা রয়ে যায়। পুরনো শহরের পাশেই পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জারাহ এলাকার কিছু ফিলিস্তিনি পরিবার বাড়ি থেকে উচ্ছেদের মুখে পড়ায় এখানে উত্তেজনা চলছে। এই বাড়িগুলো নিজেদের বলে দাবি করছে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীর। তাদের এই দাবি নিয়ে মামলা চলছে।

আল আকসা ও শেখ জারাহ থেকে তাদের পুলিশকে সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়ে এ জন্য ইসরায়েলকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস।

সন্ধ্যা পার হওয়ার পরপরই গাজা থেকে আসা রকেটের বিষয়ে ইসরায়েলিদের সতর্ক করে সাইরেন বাজতে শুরু করে। এতে কথিত জেরুজালেম দিবসের মিছিল নিয়ে শহরটির জাফা গেইটের দিকে এগোতে থাকা ইহুদি তরুণরা ও অন্যান্য ইসরায়েলিরা নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য ছোটাছুটি শুরু করে। জেরুজালেম ছাড়াও নিকটবর্তী ইসরায়েলি শহরগুলোতে ও গাজার নিকটবর্তী ইহুদি বসতিগুলোতেও একই চিত্র দেখা যায়।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লে. কর্নেল জোনাথান কোনরিকাস জানিয়েছেন, গাজা থেকে ছোড়া রকেটগুলোর মধ্যে অন্তত ছয়টি জেরুজালেমের শহরতলী লক্ষ্য করে ছাড়া হয়েছে, এখানে একটি বাড়িতে রকেট আঘাত হেনেছে।

এখান থেকে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

কোনরিকাস আরও জানান, গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে গাজা থেকে ছোড়া একটি ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র বেসামরিক একটি গাড়িকে আঘাত করেছে আর এতে এক ইসরায়েলি আহত হয়েছেন।

হামাস ও তুলনায় ছোট গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ জেরুজালেমে রকেট হামলার দায় স্বীকার করেছে।

গাজায় ইসলায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর কথা শোনার পর ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস আসন্ন ঈদ উদযাপন বাতিল করে এদিন শুধু ধর্মীয় আচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সরকারি বার্তা সংস্থা ডব্লিউএএফএতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

নিহতদের ‘শহীদ’ আখ্যায়িত করে শোক পালনের জন্য তিনি পতাকা অর্ধনমিত রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে। 

সহিংসতা থামাতে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে বলে আভাস পাওয়া গেছে। ফিলিস্তিনি এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মিশর, কাতার ও জাতিসংঘ হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে।   

ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে দখল করে নেওয়া পূর্ব জেরুজালেমকে নিজেদের ভূখণ্ডে আত্মীকরণ করে নিলেও তা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি, কিন্তু তারপরও পুরো জেরুজালেমকে নিজেদের রাজধানী হিসেবে দেখে দেশটি।

অপরদিকে ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজা ভূখণ্ড নিয়ে রাষ্ট্র গড়তে চাওয়া ফিলিস্তিনিরা পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী করতে চায়।