কয়েকটি দেশে এখনও মেয়াদোত্তীর্ণ না হলেও ব্যবহার করতে না পারা বিপুল পরিমাণ টিকা মহাদেশের অন্য দেশে পাঠানো হচ্ছে।
মহামারী থেকে বাঁচতে বিশ্বজুড়ে টিকার তীব্র সঙ্কটের মধ্যে টিকার এই অপচয়ের কারণ অনুসন্ধান করেছে বিবিসি।
মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা কার কার কাছে?
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ৫৯ হাজার ডোজ টিকা দক্ষিণ সুদান ও ১৬ হাজার ৪০০ ডোজ টিকা মালাবি ব্যবহার করতে পারেনি। ১৩ এপ্রিল এসব টিকার মেয়াদ ফুরিয়েছে।
দ্য ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো জানিয়েছে, দরিদ্র দেশগুলোর জন্য টিকা নিশ্চিত করার বৈশ্বিক কর্মসূচি কোভ্যাক্সের আওতায় পাওয়া অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১৭ লাখ টিকার বেশিরভাগই তারা ব্যবহার করতে পারেনি। এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত মাত্র এক হাজার ডোজ টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে।
২৪ জুন মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া এসব টিকার বাকি ডোজগুলোর বড় অংশ আফ্রিকার অন্য দুটি দেশ টোগো ও ঘানায় পাঠানো হচ্ছে। দেশ দুটিতে টিকার প্রাথমিক সরবরাহ শেষ হয়ে গেছে।
টিকা ব্যবহার হয়নি কেন?
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা উৎপাদনের পর স্বাভাবিক শীতলীকৃত অবস্থায় ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
গত ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠানো টিকাগুলো নতুন করে বিতরণ করছে এখন আফ্রিকান ইউনিয়ন। এসব টিকার মেয়াদ ছিল ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত।
দক্ষিণ আফ্রিকায় সংক্রমিত হওয়া করোনাভাইরাসের ধরনটির বিরুদ্ধে সরবরাহ করা টিকা যথেষ্ট সুরক্ষা দেবে না, এমন আশঙ্কায় সরকার সেসব ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কিন্তু দক্ষিণ সুদানসহ কয়েকটি দেশ বলছে, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখের বিষয়ে তাদের জানানো হয়নি। নাইজেরিয়া জানিয়েছে, মেয়াদ ফুরানোর আগেই সব টিকার ডোজ তারা দিতে পারবে না।
যে কারণে কিছু টিকা পাশের দেশ টোগো ও ঘানায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে, জ্যামাইকাতেও পাঠানো হচ্ছে কিছু টিকা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কেবল টোগো ও গাম্বিয়া টিকার সব ডোজ দেওয়া নিশ্চিত করেছে।
বাকিদের ক্ষেত্রে কি ঘটেছে সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
টিকা দিতে দেরি কেন?
আফ্রিকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ফিওনা আতুহেবই জানিয়েছেন, টিকা পাওয়ার আগে বেশিরভাগ দেশই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারেনি।
তিনি বলেন, টিকা দিতে দেরি হওয়ার পেছনে এটা একটা কারণ। এছাড়া আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়েছে বেশ কিছু দেশ।
যাদের টিকা ফুরিয়ে গেছে কিংবা মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে, তাদের অবশ্যই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিংবা আফ্রিকা সিডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কেনগাসং বলেন, “এই মহাদেশ সার্বিকভাবেই জানে কীভাবে টিকা দিতে হয় এবং অন্যান্য রোগের জন্য টিকা দিয়েও যাচ্ছে। কিন্তু মূল বিষয় হচ্ছে এই হার কীভাবে বাড়ানো যায় এবং… কী গতিতে?”
দ্য ডেমোক্রটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো বা সাবেক জায়ারের ক্ষেত্রে সমস্যা কেবল দুর্বল স্বাস্থ্য সেবা নয়, দুর্বল পরিবহন ব্যবস্থাও। দুর্গম অঞ্চলে টিকার সরবরাহ পাঠানোও একটি বড় সঙ্কট।
টিকা নিয়ে দ্বিধা কতেটা?
আফ্রিকার অনেক দেশেই টিকার সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা নিয়ে সাধারণ উদ্বেগকে এই অপচয়ের জন্য দায়ী করছেন কিছু বিশেষজ্ঞ এবং রাজনীতিক। কিন্তু এর প্রভাব নিরূপণ করা বেশ কঠিন।
সিয়েরালিওনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অস্টিন দেম্বি বিবিসিকে বলেন, “লোকজনকে বোঝাতে একটু সময় লেগেছে। তবে এটা ঠিক টিকা নিয়ে দ্বিধা নয়, এটা অনেকটা টিকা দেওয়ার আগের সংশয়।”
মালাবির ভাইরাস বিশেষজ্ঞ গামা বান্দাবে জানান, সব ডোজ ব্যবহার করতে না পারার পেছনে টিকা নিয়ে অনাস্থার একটা ভূমিকা আছে।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় রক্ত জমাট বেঁধে যায় এমন উদ্বেগ জানিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা টিকা দেওয়া বন্ধ করায় এই দ্বিধা হয়তে আরও বেড়েছে।
বান্দাবে বলেন, “সরকার যতটা পেরেছে, সবচেয়ে ভালোটাই করেছে। কিন্তু যতেটা প্রত্যাশা করা হয়েছিল, সাধারণ মানুষ ততটা গ্রহণযোগ্য মনে করেনি।”
১৫টি দেশে কোভিড- ১৯ টিকা নিয়ে আফ্রিকা সিডিসির এক সমীক্ষায় দেখা গেছে টিকার সুরক্ষা নিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যার মানুষ উদ্বেগ জানিয়েছে।
জরিপে অংশ নেওয়া গড়ে প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ জানিয়েছে, তারা কোনো টিকা নেননি।
তবে বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন ফলাফল পাওয়া গেছে। এ সংখ্যা ইথিওপিয়া, নাইজার ও তিউনিশিয়ায় ১০ শতাংশেরও কম, কঙ্গোতে যা ৪১ শতাংশ।