মিয়ানমারের জঙ্গলে সামরিক প্রশিক্ষণ, অস্ত্র চালানো শিখছে ছাত্র-চিকিৎসকরাও

মিয়ানমারের জঙ্গলে একটি ছোট্ট গ্রামের ধুলোমাখা পথে অস্ত্র হাতে সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে নানা শ্রেণি-পেশার একদল মানুষ। যে হুমকির জন্য তারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে তা হল সামরিক জান্তা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2021, 05:53 PM
Updated : 5 May 2021, 07:10 PM

ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতায় গেড়ে বসেছে। শাসনের কোনওরকম বিরোধিতা দেখলেই তা নিমর্মভাবে দমন করছে। সেই জান্তা থেকে আত্মরক্ষার জন্যই চলছে এই সামরিক প্রশিক্ষণ। সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের মুখে মিয়ানমারের অনেক মানুষই পালিয়ে জঙ্গলে চলে গেছে। এই দলে আছে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের সদস্যরা।

আর এই সিভিল ডিসঅবিডিয়েন্স মুভমেন্ট (সিডিএম) এর সদস্যদের মধ্যে আছেন, চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মী, নার্স, ছাত্র, শিক্ষক, প্রকৌশলী এবং শ্রমিকরাও। সেনা শাসনের প্রতিবাদে যাদের অনেকেই অসহযোগ আন্দোলনে নেমে চাকরি ছেড়েছেন। এখন তারা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাত থেকে আত্মরক্ষার কৌশল শিখতে চান।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাস্তায় রাস্তায় মানুষকে গুলি করে মারছে। নিজ দেশের জনগণের দিকে তাক করে রেখেছে রকেট-চালিত গ্রেনেড, মর্টারের মতো ভারী অস্ত্র। রাতে বাড়িতে হানা দিয়ে নাগরিকদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে, বলছে জাতিসংঘ।

এ পরিস্থিতিতে মানুষজন পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমারের জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী অধ্যুষিত সীমান্ত অঞ্চলের জঙ্গলে। যেখানে এই জাতিগত গোষ্ঠীগুলোও সামরিক বাহিনী, সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে। এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সামরিক শাখা সিডিএম সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতে এগিয়ে এসেছে।

কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের (কেএনইউ) একটি সশস্ত্র শাখা কারেন ন্যাশনাল ডিফেন্স অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) এর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল নেরদা বো মায়া মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রধান হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, “জীবন রক্ষা করাটা দায়িত্ব। আমরা এই মানুষগুলোকে প্রশিক্ষণ না দিলে তাদের রক্ষা করবে কে?”

পর্যবেক্ষণ সংগঠন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) এর হিসাবমতে, বিক্ষোভকারীদের ওপর মিয়ানমারের সামরিক জান্তা উত্তরোত্তর যে সহিংস দমন–পীড়ন চালিয়েছে তাতে ৭৬০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। যদিও তারা বলছে, প্রাণহানির সংখ্যা আরও বেশিও হতে পারে।

মেজর জেনারেল নেরদা বলেন, অভ্যুত্থানবিরোধী ২০০ বিক্ষোভকারীকে তিনি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনও আগে কখনও বন্দুক হাতে নেয়নি। এই প্রশিক্ষণার্থীদের অনেকেই এখনও ছাত্র। তাদের বয়স কম, ২৪/২৫ এর কোঠায়। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার নার্স, চিকিৎসক কিংবা চিকিৎসাকর্মী।

প্রশিক্ষণে তাদেরকে বলে দেওয়া হচ্ছে অস্ত্র কিভাবে চালাতে হবে, লড়াইয়ের জন্য বাড়ানো হচ্ছে তাদের শারিরীক শক্তি, শেখানো হচ্ছে নানা কৌশল, দেওয়া হচ্ছে সমরবিদ্যার মৌলিক জ্ঞান।

কেবল কারেন ন্যাশনাল ডিফেন্স অর্গানাইজেশনই (কেএনডিও) সিডিএম সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে না। অন্যান্য সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সীমান্তের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর এলাকা থেকে সামরিক প্রশিক্ষণের ভিডিও ফুটেজ পেয়েছে সিএনএন।

এসব ফুটেজে প্রশিক্ষণার্থীরদেরকে অস্ত্র চালানো, ক্রল করাসহ নানারকম শারিরীক কসরত করতে দেখা গেছে। ‘জনগণের জন্য’, ‘মুক্তির জন্য’, ‘স্বাধীনতার জন্য’ ধ্বনিতে স্লোগানও দিতে দেখা গেছে তাদের।

এই প্রশিক্ষণ শিবিরগুলোর বিষয়ে বক্তব্য জানতে সিএনএন মিয়ানমার জান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা এর কোনও জবাব দেয়নি।