অক্সিজেনের জন্য মরিয়া দিল্লির হাসপাতালগুলো ছুটছে আদালতে

ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু। রাজধানী দিল্লির হাসপাতালগুলোতে ফুরিয়ে যাচ্ছে অক্সিজেন। ‘জরুরি বার্তা’ পাঠিয়েও সময়মত নতুন সরবরাহ মিলছে না। এতে অল্প সময়েই অনেক রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। এ অবস্থায় ‘শেষ অবলম্বন’ হিসেবে আদালতে ছুটছে অক্সিজেন পেতে মরিয়া অনেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

>>রয়টার্স
Published : 4 May 2021, 05:15 PM
Updated : 4 May 2021, 05:15 PM

দিল্লি হাই কোর্টে দুইজন বিচারকের একটি বেঞ্চ প্রায় প্রতিদিনই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‍অক্সিজেন পেতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের করা পিটিশনের শুনানি করছে। ভারতের সংবিধানে মানুষের জীবন রক্ষা করার যে অধিকার দেওয়া আছে তার অধীনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পিটিশন করছে।

স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তারাও শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন। আদালতের হস্তক্ষেপে জীবন বাঁচানো যাচ্ছে বলে দাবি আইনজীবীদের।

আদালতে পিটিশন দায়ের করা হাসপাতালগুলোর একটি দিল্লির ‘সীতারাম ভারতীয় হাসপাতাল’। এই হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্ত গুরুতর ৪২ জন রোগীর জন্য রোববার যখন আর মাত্র ৩০ মিনিট চলার মত ‍অক্সিজেন বাকি ছিল এবং কোথাও থেকে অক্সিজেনের নতুন সরবরাহ পাওয়ার আশা দেখা যাচ্ছিল না, তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ‘শেষ অবলম্বন’ হিসেবে দিল্লি হাই কোর্টে আবেদন করেন বলে জানান আইনজীবী শায়ল ত্রিহান।

তিনি বলেন, ‘‘দুই বিচারক দিল্লি সরকারকে দ্রুত নতুন অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করতে বলেন। শুনানির পরপরই বেশ কয়েকটি অক্সিজেন সিলিন্ডার হাসপাতালে পৌঁছায়। কয়েক ঘণ্টা পর সেখানে অক্সিজেন ভর্তি একটি ট্যাঙ্ক যায়।”

দিল্লিতে এখন গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এই চাপ সামাল দিতে নগরীটির এখন গড়ে দৈনিক ৯৭৬ টন মেডিকেল অক্সিজেন প্রয়োজন। কিন্তু দিল্লি কেন্দ্র সরকার থেকে প্রতিদিন ৪৯০ টনের কম অক্সিজেন বরাদ্দ পাচ্ছে।

 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের যেসব প্রতিনিধি দেশজুড়ে অক্সিজেন সরবরাহের দায়িত্বে আছেন তারা আদালতে বলেন, সময়মত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে তারা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে দিল্লির স্থানীয় সরকার রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ তোলেন তারা।

এছাড়া, মোদীর পক্ষের আইনজীবীরা অক্সিজেনের কোটা শেষ হয়ে যাওয়া, পরিবহনের সমস্যা এবং ট্যাঙ্কারের অভাব থাকার কথাও আদালতে জানান। তাদের এই ব্যাখ্যা শুনে মাঝেমধ্যে বিচারকরা নিজেদের মেজাজ হারাচ্ছেন।

গত সপ্তাহের শেষে দিল্লির স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা যখন পুনরায় অক্সিজেন সরবরাহ যথা সময়ে না পৌঁছানোর বিষয়ে সতর্কবার্তা দেন, তখন বিচারপতি বিপিন সাংঘী ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘‘পানি এখন মাথার উপর দিয়ে বইছে। যথেষ্ট হয়েছে...যথেষ্ট হয়েছে।”

এপ্রিলের শেষ দিকে বিচারপতি সাংঘী কেন্দ্র সরকারের প্রতিনিধিদের বলেছিলেন, ‘‘আপনারা প্রয়োজনে ভিক্ষা করুন, ধার করুন, চুরি করুন বা আমদানি করুন... দিল্লিতে যে অক্সিজেন প্রয়োজন সেটা আপনাদের দিতেই হবে।”

“আমরা শুধু এটুকুই দিতে পারব, এর বেশি নয়। তাতে যদি লোকজন মারা যায় তবে তাদের মরতে দিন’, আপনারা এ কথা বলতে পারেন না।”