কারাবন্দি হওয়ার পর থেকে বৃহস্পতিবার এই হাজিরার মধ্য দিয়ে নাভালনি প্রথম জনসম্মুখে আসেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
আদালতকক্ষে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে কথা বলার সময় তিনি এ যাবৎকালের সবচেয়ে কড়া ভাষায় পুতিনকে আক্রমণ করেন। তাকে ‘উলঙ্গ রাজা’, ‘চুরির রাজা’ বলে অভিহিত করেন নাভালনি।
“পুতিন রাশিয়ার জনগণকে দাসে পরিণত করছেন, চিরতরে রাশিয়া শাসন করার চেষ্টা চালাচ্ছেন এবং ক্ষমতা আঁকড়ে থাকাই তার একমাত্র ধ্যান” বলে নাভালনি অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেন, “আপনাদের উলঙ্গ রাজা শেষ পর্যন্ত শাসন করে যেতে চান। দেশ নিয়ে তার মাথাব্যাথা নেই।” তবে পুতিনকে নিয়ে এমন কড়া কথা বললেও নাভালনির শরীরের অবস্থা ছিল বেহাল। আদালতে নাভালনির উপস্থিতির ছবিতে তাকে ন্যাড়া মাথা এবং অস্থিচর্মসার দেখা গেছে।
ভিডিও লিংকের মাধ্যমে নাভালনি বলেন, “আমি আয়নায় নিজেকে দেখেছি। ভয়ঙ্কর এক কঙ্কাল হয়ে গেছি আমি।” জেলে থেকে ওজন হারিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, স্কুলের পড়ার সময় যে ওজন ছিল এখন তার ওজন সেই একই।
মানহানির এক মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানিতে বৃহস্পতিবার নাভালনি আদালতে হাজিরা দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালের এক প্রবীণ যোদ্ধাকে অপমান করার অভিযোগে মানহানির ওই মামলায় ফেব্রুয়ারিতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন নাভালনি। তাকে ৮৫০,০০০ রুবল (১১,৫০০ ডলার) জরিমানা করা হয়েছিল।
এই জরিমানার বিরুদ্ধে করা নাভালনির আপিল বৃহস্পতিবার প্রত্যাখ্যান করেছে আদালত। এরপরই নাভালনি প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং রাশিয়ার বিচার ব্যবস্থা নিয়ে তীব্র সমালোচনায় সরব হন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক নাভালনিকে গত বছর রাসায়নিক বিষ প্রয়োগে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। বিষ প্রয়োগে কোমায় চলে যাওয়া নাভালনি জার্মানির বার্লিনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেন এবং গত জানুয়ারিতে রাশিয়া ফিরে যান।
মস্কো বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি গ্রেপ্তার হন এবং আগের একটি মামলায় জামিনের শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার একটি আদালত তাকে সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়।
মস্কোর সরকারি কৌঁসুলিরা নাভালনির রাজনৈতিক দল ও দুর্নীতিবিরোধী ফাউন্ডেশনকে ‘উগ্রবাদী’ সংগঠন হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়ে দু’দিন আগেই আদালতে মামলা করেছেন। এরপর নাভালনির নেটওয়ার্কের সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।