কেমন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে ইসরায়েল?

মহামারী শেষে আলো দেখতে শুরু করেছেন শুকি ভেইস।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2021, 05:53 PM
Updated : 23 April 2021, 06:50 PM

তিনি একজন ইসরায়েলি, নানা কনসার্টের আয়োজন করে দেন। রেড হট চিলি পেপার্স, রোলিং স্টোনের মতো ব্যান্ডের ইসরায়েলে কনসার্ট আয়োজনে তিনি ছিলেন।

মাঝে মহামারীর ছেদ কাটিয়ে এখন ভেইসের মনে হচ্ছে ব্যবসা আবার জেগে উঠছে।

“গত ১৪ দিনে আমরা যতগুলো শো করেছি, ঘোষণা দেওয়ার ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে সবগুলোর টিকেটি বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এটা কিন্তু স্বাভাবিক সময়ে হয় না। এখন পরিস্থিতি পুরোপুরি অন্যরকম। মানুষ এখন কোনো শো’র খবর শুনলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সব টিকিট ফুরিয়ে যাচ্ছে। মানুষ এখন শো দেখতে মরিয়া,” বলছিলেন তিনি।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিশ্ব যখন ত্রস্ত, তখন জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফেরা দেখা যাচ্ছে ইসরায়েলে।

গত সপ্তাহে যখন ৫২ লাখ রোগী শনাক্তের রেকর্ড হয়েছে বিশ্বে, তখন ইসরায়েলে এখন ১০০ এরও কম রোগী শনাক্ত হচ্ছে দিনে।

ইসরায়েলে দৈনন্দিন জীবনযাপন এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। ঘরের বাইরে উন্মুক্ত স্থানে মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা এখন আর নেই। স্কুলগুলো এখন পুরোদমে খোলা। অর্থনীতির সচল করার কেন্দ্রগুলো খুলেছে। রেস্তোরাঁগুলোতে ভিড় এতটাই যে অনেক রেস্তোরাঁয় জায়গা পাওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইসরায়েলের রেস্তোরাঁগুলোতে এখন খাওয়া-দাওয়ায় নেই মানা। ছবি: রয়টার্স

বিধি-নিষেধের কিছু বেড়াজাল এখনও রয়েছে। বদ্ধ ঘরে কোনো অনুষ্ঠানে মাস্ক পরতে হয়, যে কোনো অনুষ্ঠানে অতিথির সংখ্যাও এখনও সীমাবদ্ধ। যে কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হলে টিকার সনদ দেখাতে হয় অথবা গ্রিন পাস দেখাতে হয়। কখনও সংক্রমণ ঘটার প্রমাণই গ্রিন পাস, যা দেহে অ্যান্টিবডি আছে, এমন তথ্য জোগায়।

বাইরে থেকে কারও এখনও ইসরায়েলে ঢোকা মানা। তবে সরকার ঘোষণা করেছে, টিকা নিয়েছে এমন পর্যটকদের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ২৩ মে’র পর তুলে নেওয়া হবে।

সব কিছু মিলিয়ে ইসরায়েলিদের ভাবনা, কোভিড মহামারী পেরিয়ে জীবন কেমন হতে পারে, তা বিশ্বে তারাই প্রথম দেখতে পাচ্ছে।

“আমি ভীষণ খুশি যে আমরা কোভিড মহামারী পরবর্তী দিনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি,” বলেন ভেইস।

জুন মাসেই বড় স্টেডিয়ামে বড় বড় অনুষ্ঠান করা প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। “এটা একটা দারুণ ঘটনা হতে যাচ্ছে,” আনন্দের রেশ তার কণ্ঠে।

তবে মহামারী পুরোপুরি কেটে গেছে- এখনই এমনটা ভাবছেন না অধিকাংশ ইসরায়েলি। তাই মাস্ক বাধ্যতামূলক না হলেও এখনও বাইরে অনেকের মুখ ঢাকাই দেখা যায়।

জেরুজালেমের একটি শপিং মলে কেনাকাটা করতে আসা দ্রোর ল্যাঙ্গার বলেন, “মানুষের মধ্যে ভয় এখনও আছে। তবে আমরা আশা করছি, দুঃস্বপ্নের দিন কেটে গেছে। এখন সব কিছুই খোলা, মানুষ রেস্তোরাঁয় যাচ্ছে, সাপ্তাহিক ছুটির দিতে বেড়াতে যাচ্ছে। হোটেলগুলো দেখুন, সব বুকড।”

জেরুজালেমের একটি রেস্তোরাঁয় মিশাল আহমবাদি তার নবজাতক সন্তান নিয়ে সপরিবারে আনন্দ উপভোগ করছিলেন।

তিনি বলেন, “এখনও কিছু বিধিনিষেধ আছে। তারপরও বলব, এটা স্বাভাবিক জীবনের মতোই।”

পরিস্থিতি দেখে বিধি-নিষেধ ধীরে ধীরে তোলার পক্ষপাতি তিনি।

ইসরায়েলিরা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করছেন, টিকাদানের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন তিনি।

ইসরায়েলি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সেদেশে টিকা নেওয়ার যোগ্য নাগরিকদের চার ভাগের তিন ভাগই অন্তত প্রথম ডোজ নিয়ে নিয়েছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, ইসরায়েল এই পর্যন্ত তার দেশের ৫৭ শতাংশ নাগরিককে টিকার দুটি ডোজই দিতে পেরেছে। টিকাদানে বিশ্বে ইসরায়েলের চেয়ে এগিয়ে আছে শুধু জিব্রাল্টার।

টিকাই ইসরায়েলকে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার ক্ষেত্রে এগিয়ে নিচ্ছে বলে মনে করেন দেশটির অন্যতম প্রধান কোভিড-১৯ বিশেষজ্ঞ এরন সেগাল।

ভাইসমান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের এই গবেষক বলেন, “হার্ড ইমিউনিটি কোনো বাইনারি সংখ্যা নয়। তবে মনে করুন যে প্রতিরোধের উচ্চ একটি পর্যায়ে আমরা পৌঁছেছি। এখন নতুন করে পরিস্থিতির অবনতি ঘটা সম্ভাবনা খুবই কম।”

টিকাদানে বিশ্বে এগিয়ে আছে ইসরায়েল। ছবি: রয়টার্স

তার ভাষায়, টিকা কার্যকর হবে না, করোনাভাইরাসের এমন ভ্যারিয়েন্ট এখন ইসরায়েলে না এলেই হল।

সেগাল বলেন, ইসরায়েলে সংক্রমণ সর্বশেষ চূড়ায় উঠেছিল গত মধ্য জানুয়ারিতে, তখন যারা সংক্রমিত হয়েছিল, তাদের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে। তার উপর এখন ১৬ বছরের বেশি ৮৫ শতাংশ টিকা পেয়ে গেছে।

“ফলে জীবন এখন মহামারীর আগের জীবনের পথে,” বলেন তিনি।

অর্থনীতির চাকাও সচল হয়ে উঠেছে ইসরায়েলে। ব্যাংক অব ইসরায়েল বলছে, খুব দ্রুতই স্বাভাবিক হচ্ছে অর্থনীতি। গত ফেব্রুয়ারিতে যেখানে বেকারত্বের হার ১৪ শতাংশ হয়েছিল, মার্চে তা কমে ১০ শতাংশে এসেছে। 

এই পরিস্থিতিতে আরও সামনে এগিয়ে নিতে টিকাদান সম্পূর্ণ করার উপর জোর দিচ্ছেন ল্যাঙ্গার।

“কে জানে কখন কী হয়ে যায়। জীবন তো খুব সংক্ষিপ্ত, আমাদের তো বেঁচে থাকতে হবে,” বলেন তিনি।

[সিএনএনের প্রতিবেদন অবলম্বনে লেখা]