নাভালনির মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ, গ্রেপ্তার ১৭০০

প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের স্টেট-অব-দ্য-ন্যাশন ভাষণের দিন অনশনরত কারাবন্দি বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির মুক্তি এবং চিকিৎসার দাবিতে রাশিয়াজুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2021, 09:45 AM
Updated : 22 April 2021, 10:22 AM

বুধবার দেশটির কয়েক ডজন শহরে অনুমোদনবিহীন এসব সমাবেশে অংশগ্রহণ করায় এক হাজার ৭০০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এদিন পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের সম্মিলিত অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট পুতিন পশ্চিমা শক্তিগুলোকে রাশিয়ার ‘রেড লাইন’ অতিক্রম না করার জন্য সতর্ক করেন। পুরো ভাষণে তিনি নাভালনির কথা একবারের জন্যও উল্লেখ করেননি।

বিবিসির খবরে বলা হয়, বুধবার সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে মস্কোয়। এছাড়া সেন্ট পিটার্সবার্গ, দূর পূর্বাঞ্চলের ভ্লাদিভস্তক, সাইবেরিয়ার বেশ কিছু শহর এবং মধ্যাঞ্চলীয় যে ভ্লাদিমির শহরে নাভালনিকে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে সেখানেও বিক্ষোভ হয়েছে।

গ্রেপ্তারের পর নাভালনির মুখপাত্র কিরা ইয়ারমিশকে লোকজনকে প্রতিবাদের জন্য উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ এনে এক শুনানিতে ১০ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তার আরও কয়েকজন ঘনিষ্ঠ মিত্রকেও আটক করা হয়েছে।

নাভালনির অন্যতম মিত্র লিউবভ সোবোলকে বৃহস্পতিবারের শুনানির আগে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল এসব আটকের ঘটনাকে “নিন্দনীয়” বলে মন্তব্য করেছেন।

পায়ে এবং পিঠে প্রচণ্ড ব্যথা হলেও কারা কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত চিকিৎসা দিচ্ছে না অভিযোগ করে ৩১ মার্চ থেকে অনশন শুরু করেন প্রেসিডেন্ট পুতিনের কট্টর সমালোচক নাভালনি।

গত বছরের অগাস্টে নার্ভ এজেন্ট ‘নোভিচক দিয়ে হত্যাচেষ্টা’ থেকে বেঁচে যাওয়ার পর জার্মানিতে কয়েক মাসের চিকিৎসা শেষে ১৭ জানুয়ারি দেশে ফেরেন নাভালনি; সেদিনই গ্রেপ্তার হন।

অর্থ আত্মসাতের মামলায় স্থগিত দণ্ড চলাকালে নাভালনির নিয়মিত পুলিশের কাছে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল, যা তিনি লংঘন করেছেন বলে অভিযোগ। শর্ত লংঘনের অভিযোগে এখন স্থগিত ওই দণ্ডই কারাদণ্ডে রূপান্তরিত হয়েছে।

মস্কোয় বিক্ষোভকারীরা “নাভালনির মুক্তি চাই” এবং “চিকিৎসকদের ঢুকতে দাও” স্লোগান দেয়। এসময় অ্যালেক্সি নাভালনির স্ত্রী জুলিয়া বিক্ষোভে যোগ দিলে তার নামেও স্লোগান শোনা যায়।

বিক্ষোভে অংশ নেয়া শিক্ষার্থী মারিনা রয়টার্সকে বলেন, “সবাই বলছে, এটাই রাশিয়াকে মুক্ত করার শেষ একটি সুযোগ। আমরা অ্যালেক্সির জন্য বেরিয়ে এসেছি। ইউক্রেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে এবং বেসামাল প্রচারণার বিরুদ্ধেও।”

বিক্ষোভ ঠেকাতে রেড স্কয়ারসহ মস্কোর মূল সড়কে ধাতব বেষ্টনী দেয়া হয়। মোতায়েন করা হয় পুলিশ ভ্যান। পুলিশ জানায়, বেআইনিভাবে মস্কোয় ছয় হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে। যদিও নাভালনির ইউটিউব চ্যানেলে এ সংখ্যা ১০ গুণ বেশি বলে দাবি করা হয়।

বিবিসির খবের বলা হয়, ২৯টি নগরীতে ১৪ হাজারেরও বেশি লোক বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো এই সংখ্যা আরও বেশি বলে দাবি করছে।

রাজনৈতিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে কাজ করা রুশ সংগঠন ওভিডি-ইনফো দাবি করেছে, সারা দেশ থেকে এক হাজার ৭৮২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে সেন্ট পিটার্সবুর্গ থেকে ৮০৪ এবং উরাল অঞ্চলের উফা শহর থেকে ১১৯ জনকে আটক করা হয়েছে।

বিরোধী দল এই বিক্ষোভে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় জমায়েত হবে আশা করলেও বিভিন্ন খবরের উল্লেখ করে বিবিসি জানিয়েছে, নাভালনি গ্রেপ্তারের পর যে বিক্ষোভ হয়েছিল এবার তার চেয়ে কম লোক হয়েছে।

সম্প্রতি নাভালনিকে নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে চাপের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে রাশিয়ার। এরই মধ্যে পরস্পরের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করাসহ দেশটির ওপর অবরোধ আরোপের মধ্যে ইউক্রেন সীমান্তে সামরিক অবস্থান জোরদার করেছে রাশিয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক জ্যাক সুলিভান রোববার জানিয়েছেন, নাভালনি কারাগারে মারা গেলে “পরিণতি” ভালো হবে না।

এর আগে কিডনি বিকল হয়ে নাভালনি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে আছেন বলে জানিয়েছিল একটি মেডিকেল ট্রেড ইউনিয়ন।

দেশটির মানবাধিকার কমিশনার তাতিয়ানা মোসকালকোভা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় জেল কর্তৃপক্ষের বাইরে চারজন চিকিৎসক নাভালনির সঙ্গে দেখা করেছেন। তারা নাভালনির গুরুতর কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা পায়নি।

গত বছর অগাস্টে একটি অভ্যন্তরীন ফ্লাইটে সার্বিয়া থেকে মস্কো ফেরার সময় এককাপ চা পানের পরই অসুস্থ হয়ে কোমায় চলে গিয়েছিলেন ৪৪ বছর বয়সী নাভলনি। বিমানবন্দর থেকে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

অবস্থার পরিবর্তন না হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে জার্মানি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই পরীক্ষায় জানায় যায়, সোভিয়েত আমলে তৈরি বিষাক্ত নার্ভ এজন্টে নোভিচক দিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।