সিঙ্গাপুর: বিদেশি গৃহকর্মীকে হত্যার কথা স্বীকার পুলিশের স্ত্রীর

সিঙ্গাপুরের একজন পুলিশ কর্মকর্তারা স্ত্রী মিয়ানমার থেকে আসা তার বাসার গৃহকর্মীকে অনাহারে রেখে, নির্যাতন করে শেষ পর্যন্ত হত্যা করেছেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2021, 09:46 AM
Updated : 25 Feb 2021, 04:45 PM

২০১৬ সালে জখমের কারণে মৃত্যুর সময় ওই গৃহকর্মীর ওজন মাত্র ২৪ কিলোগ্রাম ছিল বলে প্রকাশিত খবরের বরাতে জানিয়েছে বিবিসি।

পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী গায়াথিরি মুরুগায়ানের এসব কর্মকাণ্ডকে ‘খারাপ ও অত্যন্ত অমানবিক’ বলে অভিহিত করেছেন সিঙ্গাপুরের সরকারি কৌঁসুলিরা।

মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরের আদালতে অপরাধমূলক হত্যাসহ তার বিরুদ্ধে আনা ২৮টি অভিযোগে দোষ স্বীকার করেছেন মুরুগায়ান (৪০) । দোষী সাব্যস্ত হলে তার আজীবন কারদণ্ড হতে পারে। 

আদালতের শুনানিতে বলা হয়েছে, গৃহকর্মী পিয়াং এনগাইল ডন বিদেশে তার প্রথম কাজ হিসেবে ২০১৫ সালে মুরুগায়ানের বাড়িতে কাজ শুরু করেছিলেন।

আদালতের কার্যক্রমের উদ্ধৃতি দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিয়াং কাজে ‘ধীর, অপরিচ্ছন্ন ও অনেক বেশি খায়’, অক্টোবরের মধ্যে মুরুগায়ান মধ্যে এমন ধারণা দৃঢ় হওয়ার পর থেকে তিনি তাকে নির্যাতন করা শুরু করেন। 

ওই বাসায় স্থাপন করা সিসিটিভি ফুটেজ পিয়াংয়ের জীবনের শেষ মাসে সে কী নির্যাতন ভোগ করেছে তা প্রকাশ পেয়েছে। এ সময় প্রতিদিন বেশ কয়েকবার তাকে নির্যাতন করা হতো। মুরুগায়ান গরম স্ত্রি দিয়ে তাকে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং ‘ছেঁড়া কাপড়ের টুকরা দিয়ে বানানো পুতুলের মতো তাকে ছুড়ে ফেলেছিলেন’ বলে অভিযোগ করা হয়েছে।  

পিয়াংকে প্রায়ই পানিতে ভেজানো পাউরুটির টুকরা, ফ্রিজ থেকে বের করা ঠাণ্ডা খাবার অথবা অল্প একটু ভাত খেতে দেওয়া হতো। এতে ১৪ মাসে ১৫ কেজি ওজন কমে যায় তার, যা তার শরীরের মোট ভরের ৩৮ শতাংশ।

২৪ বছর বয়সী পিয়াং ২০১৬ সালের জুলাইতে মারা যান। এর আগে মুরুগায়ান ও তার মা পিয়াংকে কয়েক ঘণ্টা ধরে বারবার মারধর করেন।

পরে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, বার বার গলা চেপে ধরায় দম বন্ধ হয়ে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হওয়ায় পিয়াং মারা যান।

সরকারি কৌঁসুলিরা আদালতের কাছে মুরুগায়ানকে আজীবন কারাদণ্ড দেওয়ার আহ্বান জানান। অপরদিকে মুরুগায়ানের আইনজীবীরা তাকে আরও কম শাস্তি দেওয়ার আবেদন জানান। মুরুগায়ান ওই সময় বিষণ্নতায় ভুগছিলেন এবং তার আবেগজনিত কম্পালসিভ পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার ধরা পড়েছিল বলে যুক্তি দেখান তারা।

মুরুগায়ানের পুলিশ কর্মকর্তা স্বামী কেলভিন চেলভাম ও তার মায়ের বিরুদ্ধেও কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়েছে। চেলভামকে ২০১৬ সালে পুলিশ বাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয় বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম। 

বুধবার সিঙ্গাপুরের জনসম্পদমন্ত্রী যোশেফিন তেও জানিয়েছেন, বেশ কয়েকজন চিকিৎসক দেখলেও এবং তার চাকরিদাতা সংস্থা পরীক্ষা করলেও পিয়াংয়ের পরিস্থিতি কেউ লক্ষ করেনি।  

এই মামলাটিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি এবং জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদেশি গৃহকর্মীদের রক্ষা করতে বেশ কয়েকটি সুরক্ষা আইন বাস্তবায়িত হয়েছে। 

সিঙ্গাপুরে প্রায় দুই লাখ ৫০ হাজার বিদেশি গৃহকর্মী আছেন। এরা প্রধানত ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার ও ফিলিপিন্স থেকে দেশটিতে গিয়েছেন।

প্রতিবেশী এসব দেশ থেকে সিঙ্গাপুরে আসা গৃহকর্মীদের সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করা হয় তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে অধিকার আন্দোলনকারী গোষ্ঠীগুলো।