মসজিদে হামলার পরিকল্পনা, সিঙ্গাপুরে কিশোর আটক

নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে হামলার বর্ষপূর্তিতে সিঙ্গাপুরের দুটি মসজিদে ঢুকে মুসলিমদের হত্যার ছক কষার অভিযোগে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরকে আটক করা হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2021, 09:52 AM
Updated : 28 Jan 2021, 09:59 AM

ক্রাইস্টচার্চের হত্যাকারী ব্রেন্টন ট্যারান্টের দ্বারা অনুপ্রাণিত এ কিশোর তার শিকারদেরকে ছুরি দিয়ে আঘাত করা এবং পুরো হামলা সরাসরি দেখানো পরিকল্পনা করেছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

বিবিসি জানিয়েছে, এ কিশোর সিঙ্গাপুরে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনে আটক সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি। এ আইনে বিচার ছাড়াই কাউকে আটকে রাখার অনুমতি আছে।

অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ট্যারান্ট ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ পরপর ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে ঢুকে ৫১ জনকে গুলি করে হত্যা করেছিল। নিউ জিল্যান্ডের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনা। বিচারে শ্বেতাঙ্গ এ বর্ণবাদীকে প্যারোলে মুক্তির সুযোগ না রেখে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

সিঙ্গাপুরে আটক ১৬ বছর বয়সী কিশোরের নাম প্রকাশ করা হয়নি। ভারতীয় জাতিসত্তার প্রটেস্টান্ট খ্রিস্টান এ কিশোর ‘ইসলামের প্রতি ভয়াবহ বিদ্বেষ এবং সহিংসতা দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়েছিল’ বলে জানিয়েছে সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সিঙ্গাপুরে এটাই প্রথম কট্টর-ডান উগ্রবাদী মতবাদে অনুপ্রাণিত কাউকে আটকের ঘটনা। দেশটিতে সন্ত্রাসী হামলা ও সহিংস অপরাধের ঘটনা বিরল। সিঙ্গাপুরের ওই কিশোর গত মাস থেকেই আটক অবস্থায় আছে বলে বিবিসি জানিয়েছে ।

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আটক কিশোর ১৫ মার্চ ক্রাইস্টচার্চে হামলার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে হামলার পরিকল্পনা করায় এটা স্পষ্ট যে সে ট্যারান্ট দ্বারা অনুপ্রাণিত। ক্রাইস্টচার্চে হামলার সরাসরি সম্প্রচার ‘রক্তে দোলা দিয়েছিল’ বলে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।

দুটি মসজিদে হামলার পরিকল্পনা ছিল; আসিয়াফা মসজিদ ও ইউসুফ ইসহাক মসজিদ। দুটি মসজিদই ছিল ওই কিশোরের বাড়ির কাছে।

দ্বীপদেশটির উত্তরাংশে অবস্থিত এ দুটি মসজিদে হামলায় বাবার ক্রেডিট কার্ড চুরি করে তা দিয়ে একটি গাড়ি ভাড়া করারও পরিকল্পনা ছিল তার। সিঙ্গাপুরি এ কিশোরের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও সে গাড়ি চালিয়ে হামলার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিল বলে এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তারা।

সেও ট্যারান্টের মতোই প্রথমে মসজিদে বন্দুক হামলারই ছক কষেছিল। কিন্তু কঠোর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের সিঙ্গাপুরে আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে গিয়ে জটিলতায় পড়ার পর ওই পরিকল্পনা থেকে সরে এসে বড় ছোরা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় সে।

হামলার ছক কষা ও অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টায় তার সঙ্গে আর কেউ ছিল না বলেই মনে করা হচ্ছে, জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মসজিদে হামলার আগে দুটি নথি প্রচারের প্রস্তুতিও নিয়েছিল ওই কিশোর; যার একটি ছিল গত বছর ফ্রান্সের নিসে হামলার সঙ্গে সম্পর্কিত; অন্যটি হচ্ছে ইসলামবিদ্বেষ বিষয়ক তার ম্যানিফেস্টো।

তার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এ হামলা ‘সহিংসতার ন্যায্য প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে পরিচিত হবে বলেও সিঙ্গাপুরি এ কিশোর ম্যানিফেস্টোতে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিল।

নভেম্বরে এই হামলার পরিকল্পনা বিষয়ে তথ্য পায় কর্তৃপক্ষ; এর পরেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, জিজ্ঞাসাবাদে এ কিশোর নিজের সম্ভাব্য দুটি পরিণতির কথা আগেই ভেবে রেখেছিল বলে জানায়।

“হামলা করার আগেই গ্রেপ্তার হয়ে যেতে পারে কিংবা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পর পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হতে পারে- এই দুটি পরিণতির কথাই ভেবে রেখেছিল সে,” বলেছে মন্ত্রণালয়।

স্থানীয় গণমাধ্যমকে সিঙ্গাপুরের আইন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে শানমুগাম বলেছেন, “সে পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল, সে জানতো সে মরতে যাচ্ছে এবং সে মরতে প্রস্তুত ছিল।”

আটক এ কিশোরকে এখন ‘ধর্মীয়, মানসিক ও সামাজিক পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার’ মধ্য দিয়ে যেতে হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ প্রক্রিয়ায় খ্রিস্টান এক কাউন্সেলরকেও যুক্ত করা হবে, যিনি ওই কিশোরের মধ্যে থাকা ‘উগ্রবাদী মতাদর্শকে সংশোধনে সহায়তা করবেন’।

১৬ বছর বয়সী এ কিশোরকে আটকের ঘটনাকে ‘উদ্বেগজনক’ অ্যাখ্যা দিয়ে শানমুগাম বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিঙ্গাপুরে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনে ২০ বছরের নিচের একাধিক ব্যক্তিকে আটক কিংবা নানান নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

দেশটির কর্তৃপক্ষ এর আগে ১৭ বছর বয়সী একজনসহ বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন মুসলিম চরমপন্থিকে আটকও করেছিল।